কেন হয় হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা?

প্রতি বছর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। স্বাভাবিকের তুলনায় কম বা বেশি মাত্রায় হৃদস্পন্দনের হার একাধিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। প্রতি মিনিটে ১০০ টির বেশি হৃদস্পন্দন হলে সেই অবস্থাকে বলা হয় ‘ট্যাকিকার্ডিয়া’। আর প্রতি মিনিটে ৬০ এর কম হৃদস্পন্দন পড়লে তাকে ‘ব্রাডিকার্ডিয়া’ বলা হয়।

প্রতিটি হৃদস্পন্দনই একে অপরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নির্দিষ্ট সময় পরপর হৃদস্পন্দন সংঘটিত হতে থাকে। কখনও ধীরে আবার কখনও খুব দ্রুত গতিতে হৃদস্পন্দন হতে থাকে। যারা পেশাগতভাবে খেলাধুলা কিংবা শরীরচর্চা করে,  তাদের হৃদস্পন্দনের হার অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক কোন মানুষের হৃদস্পন্দনের হার বেশি বা কম হলে দেরি না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমানের কাজ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিকের চেয়ে হৃদস্পন্দন কম বা বেশি হওয়া কোন ব্যক্তির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ না। হৃদস্পন্দনের হারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা হ্রাস হৃদরোগ ছাড়াও একাধিক অসুখের লক্ষণ হতে পারে।

হৃদস্পন্দনের হার কম হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। সেসব কারণের মধ্যে রয়েছে–

১. হৃদস্পন্দনের হার কমে যাওয়া হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। হৃদযন্ত্রের যে অংশটি হৃদস্পন্দনের উৎস সেই অংশটির নাম ‘সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড’। এই সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড সঠিকভাবে কাজ না করলে হৃদস্পন্দনের হার কমে যায়।

২. টাইফয়েডের কারণেও হৃদস্পন্দনের হার কমে যায়।

৩. থাইরয়েড গ্রন্থি যদি সঠিকভাবে কাজ না করলে কমে যেতে পারে হৃদস্পন্দনের হার।

৪। রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদযন্ত্রে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আবার হৃদস্পন্দনের হার স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে গেলেও এটি ডেকে আনতে পারে বিপদ। অতএব যে সকল অসুখে হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, সে সকল রোগে এবং এমন সময়ে সতর্ক থাকতে হবে। যে সকল কারণে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে–

১. সাধারণত যে কোনো ধরনের জ্বরে হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যায়। জ্বরের সময় বিশ্রাম এই সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে বড় ঔষধ।

২. সংবহনতন্ত্রের সমস্যা থাকলে হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যেতে পারে।

৩. রক্তস্বল্পতা ও হাঁপানির সমস্যায় আক্রান্ত হলেও এসব রোগ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. কোভিড আক্রান্তের পরে সুস্থ হয়েছে এমন বেশকিছু রোগীর মাঝেও এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

 

★ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা চাপ হৃদযন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত চাপ বা দুশ্চিন্তার ফলে অনেকের হৃদস্পন্দন কমে যায়। আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। এজন্য নিজেকে সবসময় চাপ ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক হার হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। ক্লান্তি, ঝিমুনি, বুক ধরফর করা, শ্বাসকষ্ট এসবই হৃদরোগের লক্ষণ। তাই এই ধরনের সমস্যা উপেক্ষা করা একেবারেই অনুচিত। এমন সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

হৃদস্পন্দন মাপার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ায় প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রযুক্তির মধ্যে দিয়েই হৃদস্পন্দন পরিমাপ সম্ভব। সুতরাং এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। পাশাপাশি বাসায় প্রেশার মাপার মেশিন এবং অক্সিমিটার রেখে নিয়মিত রোগীর রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন পরিমাপ করবেন।

 

–Rumel Rahman

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *