ব্রণের সমস্যা সমাধানে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি।

ব্রণের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে  জেনে নেই  সহজ কিছু পদ্ধতিঃ

 

শীত চলছে। শীত শেষেই আসবে গ্রীষ্মকাল। অনেক মানুষ গ্রীষ্মকালের গরমে ব্রণ বা স্কীনের সমস্যায় ভুগে থাকে। অনেকের মুখে এত বেশি পরিমাণ ব্রণ দেখা যায় যা তার ত্বক ও সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। ব্রণের সমস্যায় শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেরাও আক্রান্ত হয়। কিছু সতর্কতা ও কিছু পদ্ধতি এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। আসুন তাহলে জেনে নেই কি সেই পদ্ধতিগুলো-

★ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পানের অভ্যাস করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের হয়ে যায়।  আর দেহকে অধিকাংশ রোগের হাত থেকে বাঁচায়।

★ সচরাচর তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সংক্রমণ বেশি হয়। তাই সব সময় মুখ পরিষ্কার রাখুন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন।

★ মুখে সাবান ব্যবহার না করে নমনীয় ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাবেন। অধিকাংশ সাবান মুখের ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

★ দিনে কমপক্ষে দুই বার গোসল করুন বা গোসল করার চেষ্টা করুন। এতে ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।

★ তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে শাকসবজি বেশি খাওয়া উচিৎ। সুস্থ সুন্দর থাকতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী খাবার আগে বাছাই করা জরুরি।

★ মুখে ব্রণ দেখা দিলে নখ দিয়ে খোঁটাখুঁটি করা একদম ঠিক নয়। এতে ত্বকে ব্রণের দাগ স্থায়ী হয়ে যায়।

 

<<< ব্রণের দাগ দূর করার  কিছু কার্যকরী ঘরোয়া পদ্ধতি >>>

 

১. পাকা পেঁপেঃ

ব্রণের সমস্যার দূর করতে পাকা পেঁপের জুড়ি নেই। এক কাপের মত পাঁকা পেঁপে চটকে বা ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এর সাথে এক চামচ লেবুর রস এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিবেন। এই মিশ্রণটি মুখসহ কান, গলা ও ঘাড়ে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট ধরে মাসাজ করতে থাকুন। এরপর গোসল করে ফেলুন বা ভালো করে মুখ, কান, গলা ও ঘাড় ধুয়ে ফেলুন। চাইলে এই মিশ্রণে ঘৃতকুমারীর রসও ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণের ব্যবহারে দ্রুত ব্রণ দূর হয়ে যাবে।

২. পুদিনা পাতাঃ

পুদিনা পাতা বেটে বা ব্লেন্ড করে ভালো করে ছেঁকে নিয়ে রস বের করে নিন। এই রস ডিপ ফ্রিজে রেখে আইস কিউব তৈরি করুন। ফুসকুড়ি ও ব্রণের উপরে এই আইস কিউব ১০-১৫ মিনিট করে ঘষতে থাকুন। দেখবেন ফুসকুড়ি ও ব্রণের সংক্রমণ তো কমবেই পাশাপাশি ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যথাও কমে গেছে।

৩. বরই পাতাঃ

বর্তমান বিজ্ঞান বলে বরই পাতায় এমন এন্টিবায়োটিক আছে যা অনেক বড় বড় ইনফেকশন দূর করে দিতে সক্ষম৷ বরই পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে এটি বেটে বা ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন। দেখবেন দ্রুত ব্রণ দূর হয়ে গেছে।

চাইলে বরই পাতার সাথে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
আবার পানিতে বরই পাতা নিয়ে ভালোভাবে জ্বাল দিয়ে এই পানি কুসুম গরম অবস্থায় বা ঠান্ডা করে মুখ ধুতে পারেন। দেখবেন মুখের ব্রণ দূর হয়ে যাবে।

৪. চন্দনঃ

চন্দন মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে দারুণ কাজ করে। যেহেতু আমাদের দেশে চন্দন গাছ পাওয়া যায় না, এজন্য বাজার থেকে অর্গানিক চন্দন কিনে এটির পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন৷ চন্দন ব্যবহার করলে দ্রুতই ব্রণ দূর হয়ে যাবে। আর মুখে ব্রণের দাগ থাকলে কমে আসবে।

৫. লেবুর রসঃ

যাদের মুখে ব্রণের পরিমাণ অনেক বেশি, তারা দিনে দুই থেকে তিনবার মুখে লেবুর রস ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। লেবুর রস বের করে মুখের যে সকল স্থানে ব্রণ হয়েছে সেই সকল স্থানে লাগিয়ে রাখুন৷ এরপর ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন। দেখবেন ব্রণ দূর হয়ে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে লেবুর রস ১০ মিনিটের বেশি মুখে লাগিয়ে রাখা যাবে না। কারণ বেশি সময় রাখলে লেবুতে থাকা এসিড মুখের ত্বক পুড়িয়ে কালো করে দিতে পারে।

৬. নিমপাতার মিশ্রণঃ

নিম এমন একটি গাছ, যার সব অংশই ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত। আর এই গাছের মধ্যে পাতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতা খুবই ভালো এন্টিবায়োটিক বা জীবাণুনাশ। ব্রণ দূর করতে এই পাতা খুবই ভালো কাজ করে থাকে। নিম পাতা বেটে এর সরাসরি বা এর সাথে গোলাপজল এবং মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে এটি মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পরে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ভালো ফল পাচ্ছেন। চাইলে ভালো মানের অর্গানিক নিম ফেসপ্যাক কিনে এটিও ব্যবহার করতে পারেন।

৭. নিমপাতার পানীয়ঃ

এক লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম নিমপাতা নিয়ে জ্বাল দিন। পানির পরিমাণ অর্ধেক না হাওয়া পর্যন্ত জ্বাল দিতে হবে।  এরপর এই পানি ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করুন। এই পানি ফ্রিজে সংরক্ষণ করে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে পান করুন। দেখবেন আপনার ত্বকে আর ব্রণ হচ্ছে না। তবে নিম পাতা টাটকা হলে ভালো হয় এবং কচি নিম পাতা হলে আরও বেশি উপকার পাবেন।

৮. ধনিয়াপাতাঃ

ব্রণ দূর করতে ধনিয়াপাতা খুবই ভালো কাজ করে। ধনিয়াপাতা বেটে এর সাথে কয়েক চিমটি হলুদ গুঁড়ো বা কাঁচা হলুদ মিশিয়ে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন দ্রুতই ব্রণ উধাও হয়ে যাবে।

৯. গোলাপজলঃ

নিয়মিত গোলাপজল দিয়ে মুখ ধুলে ব্রণের দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। গোলাপজল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো মানের প্রাকৃতিক বা অর্গানিক গোলাপজল ব্যবহার করবেন। গোলাপজলের সাথে দারুচিনি গুড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করতে পারেন। এই মিশ্রণটি ব্রণের উপর ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট হয়ে গেলে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেক কমে যাবে। চাইলে ফেসমাস্ক আকারেও এই পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

গোলাপ জলের নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ কমে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো কোন প্রাকৃতিক বা অর্গানিক গোলাপ জল ব্যবহার করতে হবে। দারুচিনি গুঁড়োর সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণ ব্রণের ওপর লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণের সংক্রমণ, চুলকানি এবং ব্যথা অনেক কমে যাবে ।

১০. কমলার রসঃ

কমলার রস এবং গুড়ো মুখে থাকা ব্রণ দূর করতে দারুণ কাজ করে। কমলার রস সরাসরি মুখে লাগাতে পারেন। পাশাপাশি ভালো মানের অর্গানিক কোন ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আবার কমলার খোসা ব্লেন্ড করে বা কমলার খোসা ভালোকরে শুকিয়ে গুড়ো করে নিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগাতে পারেন।

১১. গ্রীন টিঃ

গ্রীন টি ব্যবহার করলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব নিয়ন্ত্রণে আসে। আর ত্বকের তৈলাক্ত ভাব নিয়ন্ত্রণে থাকলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। গ্রীন টি জ্বাল দিয়ে পানি ঠান্ডা করে নিয়ে এই পানি দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। এই পানি ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়িয়ে দেয়। পানি ছাড়াও চা পাতা ব্লেন্ড করে মুখে লাগাতে পারেন। এই পেস্টও মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি মুখের ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করে থাকে।

১২. কদবেলঃ

অনেকেই কদবেল খেতে ভালোবাসি। কিন্তু জানি না ব্রণের সমস্যায় দারুণ কাজ করে এই ফলটি৷ কাঁচা কদবেলের রস ব্রণ দূর করতে সক্ষম। কাঁচা কদবেলের রস তুলো দিয়ে ভিজিয়ে নিন। এরপর মুখের যে সকল স্থানে ব্রণ উঠেছে সে সকল স্থানে এই রস লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১০ মিনিট হয়ে গেলে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন খুব ভালো ফল পাচ্ছেন।

১৩. লবঙ্গঃ

আমাদের কাছে লবঙ্গ মসলা হিসেবেই পরিচিত। তবে আমরা এটা জানি না যে ব্রণ নির্মূল করতে খুবই ভালো কাজ করে লবঙ্গ। লবঙ্গের তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। আবার ত্বকে ব্রণের সংক্রমণ বেড়ে গেলে লবঙ্গ গুঁড়ো করে এর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন৷ চাইলে এই মিশ্রণে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এই প্রলেপটি ব্রণের জায়গাগুলোতে বেশি করে লাগিয়ে রাখুন। প্রলেপটি লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ব্রণ দূর হয়ে যাবে।

 

–Rumel Rahman

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *