দুর্ঘটনায় বিচ্ছিন্ন অঙ্গ কিভাবে সংরক্ষণ করে হাসপাতালে আনবেন

বর্তমানে আমাদের দেশে দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। আবার মারামারি বা রেশারেশির অবস্থাও একই। এই দুর্ঘটনা এবং মারামারিতে অনেক প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। অনেকের হাত, পা, মাথাসহ বিভিন্ন অঙ্গ মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে। আবার অনেক সময় দেখা যাচ্ছে দুর্ঘটনা বা মারামারির স্থানেই হাত, পা বা অনেক অঙ্গ শরীর থেকে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

কিছুদিন আগেও অঙ্গহানি হলে বা শরীর থেকে কোন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে সেই অঙ্গ আর শরীরে সংযোজন করা সম্ভব নয় এমনটা সকলেই ধরে নিত। শুধু সাধারণ মানুষই নয়, অনেক ডাক্তারও এই ধারণাটি নিজের মধ্যে পোষণ করতেন। কিন্তু দিন দিন চিকিৎসার আধুনিকায়ন হওয়ায় এই ধারণাও মিথ্যে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান।

আধুনিক বিশ্বে বিচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া অঙ্গ প্রতিস্থাপন অনেক আগে থেকে শুরু হলেও সম্প্রতি সময়ে আমাদের দেশেও এই চিকিৎসা প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছে ডাক্তারগণ। এবং চেষ্টায় সফলতাও পেয়েছেন তারা।

ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ছবি।

সম্প্রতি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একজন রোগীর সফল অস্ত্রপাচার করেন সহযোগী অধ্যাপক Dr. Sajedur Reza Faruquee এবং তার টিম। তাদের এই দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার প্রচেষ্টা সফলতায় রুপ নেয়।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের মতে, নির্দিষ্ট পন্থায় এবং নির্দিষ্ট সময়ে যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে আসা যায়, তাহলে সেই অঙ্গ পুনরায় শরীরে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।

কি সেই নিয়ম এবং কতক্ষণ সময়ের মধ্যে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে সেই বিষয়েই আমাদের আজকের এই আলোচনা।

বিচ্ছিন্ন অঙ্গ কিভাবে সংরক্ষণ করে হাসপাতে আনবেনঃ
আমরা সাধারণ মানুষ জানি না কিভাবে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ সংরক্ষণ করে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঙ্গ (আঙ্গুল, হাত, পা, কান ইত্যাদি) যত দ্রুত নরমাল স্যালাইন দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। যদি দুর্ঘটনার স্থানের আশেপাশে নরমাল স্যালাইন পাওয়া না যায়, তাহলে পরিষ্কার পানি দিয়ে উক্ত অঙ্গ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এরপর একটি পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু দিয়ে উক্ত অঙ্গ ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলতে হবে। শুকনো অঙ্গটি একটি পরিষ্কার পলিথিনে ভরে ভালোভাবে পলিথিনের মুখ আটকে নিতে হবে। অত:পর একটি ICE BOX এ বরফ দিয়ে সেই বক্সে পলিথিনসহ অঙ্গটি সংরক্ষণ করতে হবে। যদি আশেপাশে ICE BOX পাওয়া না যায়, তাহলে মাছ সংরক্ষণ করা হয় এমন নতুন বা পরিষ্কার সোলার বক্সে পলিথিন তার উপরে বরফ এবং বরফের উপরে পলিথিনে সংরক্ষণ করা বিছিন্ন অঙ্গটি রাখতে হবে।
আর যদি যদি এমন কোন বক্সও আশেপাশে না পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে বড় হাড়ি বা ডেকে বরফ দিয়ে উপরের নিয়মে অঙ্গটি সংরক্ষণ করে ভালোভাবে হাড়ি বা ডেকের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। যদি তাও না পাওয়া যায়, তাহলে অন্য একটি পলিথিনে বরফ নিয়ে তার ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো অঙ্গটি সংরক্ষণ করতে পারবেন। তবে ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে, যে পলিথিনে অঙ্গ সংরক্ষণ করবেন সেটিতে যেন কোন ফুটা না থাকে এবং মুখ দিয়ে যেন কোন রকম পানি বা বাতাস চলাচল করতে না পারে।
বরফ দেওয়ার ফলে অঙ্গটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সতেজ থাকবে।
পরিবহনের মাঝপথে বরফ সংযোজনের প্রয়োজন হলে বরফ সংযোজন করতে হবে।

কতক্ষণ সময়ের মধ্যে অঙ্গসহ হাসপাতালে পৌঁছাতে হবেঃ

উপরের প্রসেস শেষ করে অঙ্গহানির ৬ ঘন্টার মধ্যে আহত ব্যক্তি এবং বিচ্ছিন্ন অঙ্গটি নিয়ে নির্দিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা এবং সফলতা পাওয়া সম্ভব।
এই অপারেশনের ক্ষেত্রে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিকভাবে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ সংরক্ষণ করে ৬ ঘন্টার মধ্যে যত দ্রুত হাসপাতালে উপস্থিত হওয়া যাবে, অপারেশনে সফলতার সম্ভাবনা তত বেড়ে যায়। তাই সবচেয়ে ভালো হয়, যদি রওনা দেওয়ার পূর্বেই মাইক্রো সার্জারিতে অভিজ্ঞ এমন একজন প্লাস্টিক সার্জনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেওয়া যায়। এমনটা করা গেলে এই সময়ের মধ্যে সার্জন হাসপাতালের যাবতীয় প্রসেস সম্পন্ন করার পাশাপাশি তার টিম এবং অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত করে নিতে পারবে৷ এতে করে অনেক সময় বেঁচে যাবে।

এসকল অপারেশনে বেশ কয়েক ব্যাগ রক্ত লেগে থেকে। তাই রোগীর সাথে এমন কিছু মানুষ যাওয়ার চেষ্টা করবেন যারা ইন্সট্যান্ট রক্তদান করতে পারবেন। পাশাপাশি নিজেদের আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতদের রক্তের প্রয়োজন সম্পর্কে জানিয়ে রাখবেন।

অঙ্গহানি বা অঙ্গহীন মানুষ নিজের এবং পরিবারের কাছেও বোঝায় পরিণত হয়ে যায়। আমাদের একটু সচেতনতা এবং একটু প্রচেষ্টা একজন মানুষকে এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সহায়ক হতে পারে। 

আরও পড়ুন: এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া কি? 

Leave a Comment