দুই বান্ধবীর একসাথে রক্তদান। বেঁচে যেতে পারে দুটি প্রাণ।

‘এ ভূবনে যা কিছু আছে চির কল্যানকর,

অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর ‘।

‘ তুমি আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও,

আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দিব ‘

‘ সমাজ বা একজন পুরুষকে বদলে দিতে

পারে একটি নারী। ‘

এমন অনেক উপমা পাওয়া যায় নারীদের জন্য। ক্ষেত্র বিশেষে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। ধর্মীয় ক্ষেত্রে রাবেয়া বশরী, মারিয়াম (আঃ) সহ অনেক মহীয়সী নারীর পাশাপাশি সমাজ সংস্করণ বা সেবার দিক দিয়ে ফ্লোরিডা নাইটিংগেল, মাদার তেরাসা কিংবা বেগম রোকেয়ার মত অনেক নারী এর জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রয়েছে।

রক্তদানের মাধ্যমে বর্তমানে ছেলেদের পাশাপাশি অনেকে মেয়ে এগিয়ে আসছে রক্তদানে। রক্তদানকে অনেকেই অনেক ভাবে বিশ্লেষন করে থাকে। পরিবার থেকে অনেকে বাঁধা দেয় রক্তদানে। আবার অনেকে নিজে থেকেই রক্তদান থেকে পিছিয়ে রাখে। যার অন্যতম কারণ ভয়, ভুল তথ্য এবং রক্তদানের সময় নিয়ম না মানার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়া কিছু মানুষ। রক্তদান খুবই মহৎ একটি কাজ। রোগীর জন্য এমন এক সময় রক্তের প্রয়োজন হয়, যখন রক্ত ব্যতীত অন্য কোন ঔষধ রোগীর শরীরে কাজ করবে না, বা পর্যাপ্ত কাজে আসবে না।

রক্তদানরত অবস্থায় বৃষ্টি আপু।

রক্তদান বা মানব সেবা সম্পর্কে ইসলাম ধর্মও উৎসাহিত করে মানুষকে। মহাপবিত্র এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব বা গ্রন্থে আল্লাহ পাক/সৃষ্টিকর্তা বলেন, ‘ যে ব্যক্তি একজন মানুষের জীবন বাঁচালো, সে যেন সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচালো ‘। রক্তদানের মাধ্যমে এই সেবাটি করা যায় অতি সহজেই। আর পাওয়া যায় অসংখ্য সওয়াব। আমাদের শরীরে যে রক্ত থাকে তার উপাদান প্রতি ৩ মাস পরপর নষ্ট হয়ে প্রস্রাব, পায়খানা বা ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায় এটা আমরা অনেকেই জানি না। এই নষ্ট হয়ে যাওয়া উপাদান প্রতি ৩ মাস পরপর আমাদের দেখে নতুনভাবে তৈরি হতে থাকে। আবার নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে নিজের শরীরের সুস্থ্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রায় ৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত সেভ করা যায় এটাও অনেকে জানি না। কিভাবে? ভালো একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইডস এবং রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে কত টাকা খরচ হয়। আবার নিয়ম মেনে নিয়মিত বা কিছুটা বিরতি দিয়ে রক্তদান করলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যার মত অনেক বড় বড় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

সাদিয়া আপুর রক্তদানের মুহূর্ত।

সুতরাং, অন্যের উপকারের পাশাপাশি নিজের সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতেও আমাদের উচিত কমপক্ষে প্রতি ৪ মাস পরপর বা কিছুটা বিরতি নিয়ে রক্তদান করা।

আর নিজে রক্তদান করার পাশাপাশি আমাদের পরিবার, পরিচিত বা বন্ধুদের মাঝে যারা রক্তদানে সক্ষম তাদেরও রক্তদানের উপকারিতা কি সে সম্পর্কে সচেতন করে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করা। আজ এমনই এক উদাহরন রেখে গেলেন রক্তদাতা বৃষ্টি আপু এবং সাদিয়া আপু। পাশাপাশি অবদান রাখলেন নিয়মিত রক্তদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবী তমা আপু। একজন রক্তদাতাকে রক্তদান করার পাশাপাশি আরও একজন বন্ধবীকে রক্তদান করাতে নিয়ে আসেন তিনি।

আসুন এভাবেই সচেতন হই আমরা। নিজে রক্তদান করি, অন্যকে রক্তদানের আহ্বান জানিয়ে রক্তদানের হাত বাড়িয়ে দিতে সাহস দেই। এতে করে ‘ রক্তের অভাবে রোগী মারা গেছে এমন অপয়া কথাটি বাংলার মাটি থেকে খুব দ্রুত মুছে ফেলা সম্ভব হবে।

উভয় রক্তদাতার পরবর্তী রক্তদানের সময় হবে ২৫-০৪-২৩ তারিখে।

Leave a Comment