থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা: আক্রান্ত রোগীকে রক্তদান করলেন হোসাইন হিমু ভাই।

থ্যালাসেমিয়া রোগীটি জিনগত। বাবা এবং মায়ের শরীরে থ্যালাসেমিয়ার জীবাণু থাকলে তবেই এই রোগে আক্রান্ত হবে সন্তান। আর এই থ্যালাসেমিয়া রোগটি মরণব্যাধিই নয়, সাথে সুখ, সম্পদ নষ্টকারী এক ঘাতক। তিল তিল করে কষ্ট দিয়ে সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে। বাবা-মা সন্তানকে বাঁচানোর বৃথা চেষ্টা করতে অর্থ সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে। সাথে প্রতিমাসে সন্তানের জন্য রক্তদাতা সংগ্রহ করতে পেরেশান হয়ে এখানে ওখানে ছূটে বেড়াবে পাগলের মত। অনেক স্থানে হবে অপমানিত, আবার অনেক সময় হতে হবে প্রতারিত। তবুও বাবা-মায়ের একটা মিথ্যে আশা থাকে সন্তান হয়তো একদিন সুস্থ হয়ে যাবে। আর যদি কোন মাসে  রক্তদাতাই খুঁজে না পায় চোখের সামনে সন্তানের করুণ পরিণতি আর অসুস্থতা বাবা-মায়ের ঘুম হারাম করে দেয়।

থ্যালাসেমিয়া রোগের কোন চিকিৎসা নেই। অন্যের রক্ত নিয়েই সুস্থ থাকার লড়াই করে যেতে হয় প্রতি মাসে। যা এক থেকে কয়েক ব্যাগ হতে পারে এক মাসের মধ্যেই। প্রতিকার না থাকলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব এই রোগের।

বিয়ের আগে স্বামী এবং স্ত্রীর রক্ত পরিক্ষার মাধ্যমে এই রোগটি থেকে সন্তানকে থ্যালাসেমিয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব। রক্তের ইলেক্ট্রোফোরোসিস টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় স্বামী এবং স্ত্রীর শরীরে থ্যালাসেমিয়ার জীবাণু আছে কি না। যদি পরীক্ষায় দেখা যায় হবু স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের দেহেই থ্যালাসেমিয়ার জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। তাহলে সেই বিয়ে বাতিলের মাধ্যমে বা বিয়ের পরে চিরদিন নিঃসন্তান থাকলে তবেই এই রোগ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের বেঁচে থাকা সম্ভব। আর সন্তান না নিলে তো পরিবার ও সমাজের বাজে কথা শুনতেই হবে সেই স্বামী বা স্ত্রীকে।

একটা জিনিস জেনে রাখতে হবে, স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের দেহেই যদি এই জীবাণুর উপস্থিতি থাকে তাহলে সন্তান এই রোগে আক্রান্ত হবে। একজনের দেহে এই রোগের জীনাণু থাকলে সন্তানের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে।

আজকেও থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত একজন রোগীর সন্ধান পেয়েছিলাম আমরা। রোগী গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। বাবা ও মা অনেক চেষ্টা করেও রক্তদাতা সংগ্রহ করতে পারে নি। দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন অথচ একজনও রক্তদাতা সংগ্রহ করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়ে রোগীর বাবা-মা। বিষয়টি রক্ত বন্ধন পরিবারের নজরে আসলে যোগাযোগ করা হয় রক্তদাতার সাথে। রোগীর কথা শুনে রক্তদানে আগ্রহ দেখায় রক্তদাতা হোসাইন হিমু ভাই। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যায় রক্তদান করতে। নির্ধারিত সময় দুপুর ২ টার দিকে রক্তদান করেন তিনি। আরও একজন রক্তদাতা আসার কথা কিছুক্ষণের মধ্যেই। রক্তদাতা পেয়ে হতাশাগ্রস্থ বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আর রক্তদান করে হাশিমুখে বাসায় ফিরে আসেন রক্তদাতা।

রক্তদান করাতে রক্তদাতার সাথে হাসপাতালে উপস্থিত হোন রক্ত বন্ধন পরিবারের মডারেটর সিজু ভাই। 

 

আসন সচেতন হই। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষায় উৎসাহিত করি হবু স্বামী এবং স্ত্রীকে। একটু কষ্ট, একটু সচেতনতা বা একটি আত্মত্যাগ সারা জীবন নিজেদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার পাশাপাশি সন্তানকে সারাজীবনের সুস্থতা দান করবে।

 

–Rumel Rahman 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *