আমাদের দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদি শরীরে একবার ডায়াবেটিস বাসা বাঁধে তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই মুশকিল। কষ্টকর হলেও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার মাধ্যমে ডায়াবেটিসকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে কিছু কিছু ভুলের কারণে হঠাৎ করেই বেড়ে যেতে পারে ডায়াবেটিস। আবার অতিরিক্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ শরীরে সুগারের পরিমাণ অতিরিক্ত কমিয়ে দিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
ডায়াবেটিস সাধারণত দু’ধরনের হয়ে থাকে। এই দুইটি টাইপ হচ্ছে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। টাইপ ১ ডায়াবিটিস রোগটি ছোট বয়সে হয়। এক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় না। অন্যদিকে বয়স বাড়লে শরীরে দেখা দিতে পারে টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
এ রোগে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি হয় না বা শরীরে থাকা ইনসুলিন শরীর কাজে লাগাতে পারে না। ফলে রক্তে সুগার বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে অনেকের শরীরেই কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, দ্রুত ওজন কমা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় অধিকাংশ মানুষের মধ্যে।
তবে অনেকেই এসব উপসর্গগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। দীর্ঘদিন এই উপসর্গের উপেক্ষা করে জীবন-যাপন করতে থাকে। আর এই অবহেলার কারণে দেখা দেয় বড় সমস্যা। যখন কারও শরীরে সুগার ধরা পড়ে, দেখা যায় রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গেছে। আর তখন এটি নিয়ন্ত্রণে আনা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হার্ট, কিডনি, চোখসহ শরীরে নানা অঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। আর সামান্য কেটে গেলে সেখান থেকে ইনফেকশন এমনকি ইনফেকশন থেকে অঙ্গহানিও হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস হলে ৬টি ভুল একেবারে করবেন না। আসুন জেনে নেই কি কি সেই ভুলগুলো-
>> সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার খাওয়ায় নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার নিষেধ। অনেকে তো ফল খাওয়াও বাদ দিয়ে দেয়। তবে অনেকেই জানি না, যেসব ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম সে সব ফল ডায়াবেটিস রোগীরা অনায়াসে খেতে পারেন। আবার, ডায়াবেটিস নীল হয়ে গেলে হালকা মিষ্টি খাওয়াটা বাধ্যতামূলক। না হলে সুগারের অভাবে প্রাণনাশের আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুগার বা ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীর দিনে অন্তত একটি ফল খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীরা পেয়ারা, আপেল, লেবু, সাগর কলা ইত্যাদি ফল অনায়াসে খেতে পারেন। তবে বাজার থেকে কেনা ফলের জুস খাওয়া যাবে না। এগুলোতে ফলের পাশাপাশি সুগার এবং কেমিক্যাল থাকে। যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
>> ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে দুশ্চিন্তার বড়সড় যোগ আছে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, বেশি দুশ্চিন্তা করলে রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুগার থাকলে যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা দূরে রাখতে হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে নিয়মিত মেডিটেশন করুন বা হালকা ব্যয়াম করার অভ্যাস করুন।
>> বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীকে কখনোই দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায় এবং রক্তে সুগার বেড়ে যায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে অন্তত এক ঘণ্টা পরপর সামান্য হলেও খাবার খেতে হবে।
>> ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন অবশ্যই এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা ক্যালোরি ঠিকমত খরচ হয়। এছাড়াও রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রিত করতেও শরীরচর্চার বিকল্প কিছু নেই।
এজন্য নিয়ম মাফিক প্রতিদিন আধা ঘণ্টা শরীরচর্চা করতে হবে। আর অবশ্যই ঘাম ঝরিয়ে ব্যায়াম করুন। চাইলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জিমে গিয়েও ব্যায়াম করতে পারেন।
>> ডায়াবেটিস রোগীদের খুব সাবধানে চলতে হয়। দেখা যায় ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর দেহে সামান্য কেটে গেলে সেটি শুকাতে অনেক সময় লেগে যায়। আর ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি বেশি হয় তাহলে সামান্য কেটে গেলে সেখান থেকে দ্রুত ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায় কেটে যাওয়ার পরে মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে রোগীর দেহে ইনফেকশন হয়ে তা অনেকটা ছড়িয়ে গেছে। এতে করে প্রতিদিন ড্রেসিং এর মত কষ্টদায়ক প্রসেসের মধ্যে যেতে হয়। আবার অনেকের আক্রান্ত স্থান বা অঙ্গ কেটে ফেলে রোগীর প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করতে হয় ডাক্তারকে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর শরীরের কোথাও কেটে গেলে বা কোন রকম ক্ষত, ফোঁড়া বা ঘা হলে একদিনও দেরি না করে আক্রান্ত স্থান জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করেওতে হবে। এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এন্টিবায়োটিক বা ঔষধের মাধ্যমে স্থানটি শুকিয়ে ফেলতে হবে।
>> অনেক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলেন না। হয়তো ঠিক সময়ে ঔষুধ খাওয়া হয় না, ঠিক সময়ে টেস্ট করানো হয় না বা চিকিৎসকের কাছে ফলোআপে যাওয়ার সময়ও বের করতে পারেন না অনেকে। এমন করলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। আর এই ভুলগুলো অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। তবেই নিজেকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ ভ্যারিকাস ভেইন কি? কেন হয় এই রোগ?
Pingback: ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স কি? - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon