Growth Hormone বা গ্রোথ হরমোন, উপকারী নাকি হুমকি

গ্রোথ হরমোন বা Growth Hormone মানুষের শারীরিক গঠন ও উচ্চতা বৃদ্ধির কাজ করে। মানুষের হাড়ের গঠন ও পেশী বিকাশে এই হরমোনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত মানুষের বয়ঃসন্ধিকালে এই গ্রোথ হরমোন তৈরির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়। আর বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই হরমোন তৈরির পরিমাণ কমতে থাকে। এবং বার্ধক্যকালে এই হরমোন নিঃসরণ অনেক কন যায়। অর্থাৎ বয়ষ্ক ব্যক্তিদের দেহ বিকাশের হার বন্ধ হয়ে যাই এই Growth Hormone এর নিঃঃসরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।
গ্রোথ হরমোনের আরেকটি নাম হচ্ছে সোমাটোট্রোপিন হরমোন।
আমাদের পিটুইটারি গ্লান্ডের এন্টেরিওর লোব থেকে এই হরমোন আমাদের দেহে নিঃসরিত হতে থাকে। যে কোষগুলো এই নিঃসরণের কাজ করে থাকে তাদের বলা হয় সোমাটোট্রোপ। এই কোষগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতিদিন ১ থেকে ২ মিলিগ্রাম হরমোন ক্ষরণ বা নিঃসরণ করতে থাকে। এই ক্ষরণ প্রক্রিয়া একটানা ঘটতে থাকে এমনটা নয়। এই কাজটি থেমে থেমে চলতে থাকে। বেশ কিছু সময় পরপর এই কোষগুলো বেশ কিছুটা হরমোন তৈরি করার পরে কিছুটা সময় হরমোন তৈরির কাজ বন্ধ রাখে। এরপর আবার কিছুটা সময় নিয়ে হরমোন নিঃসরণের কাজ শুরু করে।

গ্রোথ হরমোন যেভাবে কাজ করেঃ

Growth Hormone আমাদের শরীরকে বেড়ে তোলার কাজ করে। বাড়ন্ত বয়সে এই হরমোন নিঃঃসরণের ফলেই আমাদের শরীরের হাড়, কোষ ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রাপ্ত বয়ষ্কের আকার ও আকৃতির দিকে বেড়ে ওঠা ও পরিবর্তন হওয়া শুরু করে।
গ্রোথ হরমোনের কারণে আমাদের লিভার ইনসুলিন তথা গ্রোথ ফ্যাক্টর নিঃসরণ করে। এই গ্রোথ ফ্যাক্টর IGF-1 বা Insulin like Growth Factor -1 নামেও পরিচিত। এই IGF-1 এবং এর মত আরও কিছি উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের হাড়ের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধির উপায়:

মানুষের মধ্যে অনেকেই শারীরিক বৃদ্ধিজনিত নানা সমস্যায় ভুগে থাকে। যার কারণ হরমোন জনিত সমস্যা। আমাদের জানতে হবে কিভাবে আমরা আমাদের হরমোন বাড়াতে পারি। নিচে এই বিষয়ে কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করছি।

★স্বাস্থ্যকর খাবারঃ

বেশি পরিমাণে মেলাটোনিন রয়েছে এমন খাবারগুলো মানুষের Growth Hormone বৃদ্ধিতে বেশ ভালো সাহায্য করে। মেলাটোনিন রয়েছে এমন খাবারের মধ্যে রয়েছে ডিম, মাছ, সরিষা, পালং শাক, মটরশুঁটি, বাদাম, টমেটো, আঙুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

★ ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংঃ
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং Growth Hormone বাড়াতে বেশ ভালো কাজ করে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বলতে বুঝায় একবার খাবার পরে মাঝে দীর্ঘ সময় বিরতি দিয়ে পুনরায় খাবার গ্রহণ করে। মনে করুন আপনি সকাল ৮ টায় ভরপেট খাবার খেলেন, এরপর আবার বিকেল ৪ টায় খাবার খাবেন। এই সময়ের মধ্যে কোনো খাবারই খাবেন না। যখন আবার খাবার খাবেন পুষ্টিকর খাবার খাবেন৷ প্রথমে এই গ্যাপের সময় ৭-৮ ঘন্টা হলে পরবর্তীতে ১২ ঘন্টা গ্যাপ রেখে পুনরায় খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

★ চিনি খাওয়া কমিয়ে দিবেনঃ
চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চিনি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে মানুষের শরীরে ইন্সুলিন তৈরিতে ভারসাম্য তৈরি হয়। যা শরীরে গ্রোথ হরমোন তৈরিতে সহায়ক।

★ নিয়মিত ঘুম:
নিয়ম মাফিক রাতে পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের শরীরকে সতেজ করে তুলে। সাথে দেহের ক্লান্তি দূর করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমালে মানুষের হরমোনগুলো সঠিকভাবে নিঃসৃত হতে থাকে। এতে দেহে উপকারী হরমোনগুলো ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

গ্রোথ হরমোনের অভাবে যা হতে পারেঃ

যেহেতু গ্রোথ হরমোন আমাদের দেহের বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত, তাই এই হরমোনের অভাবে আমাদের দেহে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে এইটাই স্বাভাবিক। যে সকল সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছেঃ
★ হাড়ের ক্ষয়িষ্ণুতা বেড়ে যাওয়া,
★ পেশীর পুরুত্ব কমে যাওয়া,
★ দুর্বলতা,
★ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া,
★ কোমরের কাছে চর্বি জমা,
★ হতাশা ইত্যাদি।

গ্রোথ হরমোনের সুফলঃ

অনেক সময় বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক হারে না হওয়ায় ডাক্তার Growth Hormone প্রেসক্রাইব করে থাকেন৷ এর ফলে বাচ্চাদের শারীরিক গঠন উন্নয়নে বেশ কিছু সুফল লক্ষ্য করা যায়। আবার অনেক তরুণের স্বাভাবিক গঠন ফিরিয়ে আনতেও ডাক্তার গ্রোথ হরমোন প্রেসক্রাইব করে থাকেন। সুফলগুলো হচ্ছে-
★ হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়,
★ পেশী পুরু হয়,
★ এনার্জি বা শক্তি বৃদ্ধি পায়,
★ দেহে চর্বির পরিমাণ কমে যায়,
★ কায়িক পরিশ্রমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়,
★হার্টের সমস্যার ঝুঁকি কমায়।

কৃত্রিম গ্রোথ হরমোনের প্বার্শ-প্রতিক্রিয়া:

কৃত্রিম সকল জিনিসেরই কিছু না কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকে। বাহ্যিকভাবে এই গ্রোথ হরমোন ব্যবহারের ফলেও শারীরিকভাবে কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। হরমোন প্রয়োগের ফল বেশ কিছু সমস্যা দেহে দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
১. হাতে পায়ে পানি চলে আসতে পারে,
২. জয়েন্ট ও পেশীতে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে,
৩. রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে,
৪. স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে,
৫. ডায়াবেটিস হতে পারে,
৬. কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম- হাতের আঙ্গুল নাড়াতে সমস্যা ও ব্যথা অনুভূত হয়,
৭. কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে,
৮. শরীরে ক্যান্সার বা টিউমার থাকলে এর মাত্রা বা পরিমাণ বেড়ে যাবে।

কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন ব্যবহার কি বেআঈনীঃ

কালোবাজারে কৃত্রিম গ্রোথ হরমোনের বিশাল ব্যবসা ও চাহিদা রয়েছে। ক্রীড়াবিদ ও বডিবিল্ডারদের কাছে গ্রোথ হরমোনের মাধ্যমে মাসলস এবং এনার্জি বৃদ্ধির ব্যাপক ঝোক রয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রে এই গ্রোথ হরমোন নিজেকে সুস্থ বা ফিট রাখার আবার অনেকের কাছে দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত। যে যেমনটাই ভাবুক না কেন, বেশিরভাগ কৃত্রিম Growth Hormone ব্যবহারই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। আবার হার্টের সমস্যা তৈরি করে বা হার্ট অ্যাটাকের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম এইসব গ্রোথ হরমোন। সুতরাং, এসব থেকে দূরে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।

কিছু অনুমোদিত হরমোন আছে যার সাইড ইফেক্ট তুলনামূলক কম। তবে এইসব হরমোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা খুবই জরুরী। কারণ চিকিৎসক মানুষের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে কতটুকু পরিমাণে আর কতদিন হরমোন গ্রহণ করতে হবে সেই সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। অন্যথায় নিজে থেকে হরমোন গ্রহণের ফলে আমাদের এমন অবস্থা হতে পারে, যার ফলে আমরা আগের অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারি।

বার্ধক্য ও শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়া প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক নিয়ম। তবে বার্ধক্য আসার আগে আমরা শরীরের প্রতি যত্নশীল হই, তাহলে আমাদের সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে বাহ্যিক Growth Hormone এর সাহায্য নিতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে তার পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ কৃত্রিম গ্রোথ হরমোনের ঝুঁকি বা মৃত্যুর ঝুঁকি আছে এই কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

আরও পড়ুনঃ হাড় ক্ষয় রোধের উপায় জানুন।

Leave a Comment