ডায়েটারি ফাইবার (Dietary Fiber) হচ্ছে আমাদের খাবারে থাকা সেই সকল শর্করা যেগুলো আমাদের পরিপাকতন্ত্র হজম করতে পারে না। এইসব শর্করার উপস্থিতি উদ্ভিজ্জ খাবার ভালো হওয়ার পেছনে অন্যতম ও বড় একটি কারণ। সব ফাইবারই যে একই রকম কাজ করে এমন নয়। একেক রকমের ফাইবার শরীরে একেক রকম কাজ করে থাকে। আর প্রতিটি ফাইবারের উপকারিতাও ভিন্ন রকমের।
ফাইবারের প্রকারভেদঃ
{{blog_info}}পানিতে দ্রবীভূত হয় কিনা এর উপর ভিত্তি করে ফাইবারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগগুলো হচ্ছে-
১. Water Soluble বা পানিতে দ্রবণীয়,
২. Water Insoluble বা পানিতে অদ্রবণীয়।
Water Soluble বা পানিতে দ্রবণীয়ঃ
Water Soluble বা পানিতে দ্রবণীয় ফাইবার পানিতে মিশে যায় এবং গাট ফ্লোরা (Gult Flora) এই ধরণের ফাইবারকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। এজন্য এই ধরণের ফাইবারকে ফার্মান্টেবল ফাইবারও বলা হয়ে থাকে।
Water Insoluble বা পানিতে অদ্রবণীয়ঃ
water insoluble বা পানিতে অদ্রবণীয় ফাইবারগুলো পানিতে মিশে যায় না। এবং যেহেতু গাট ফ্লোরা (Gult Flora) একে ফার্মান্টেশন করতে পারে না, তাই একে নন ফার্মান্টেবল ফাইবারও বলা হয়ে থাকে।
ডায়েটারি ফাইবারের উপকারিতাঃ
আমাদের প্রতিদিনের খাবারে একটি নির্দিষ পরিমাণে ফাইবার থাকা আবশ্যক। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকলে খাবারের মাধ্যমে বেশ কিছু উপকার পেতে পারি। নিচে এসব উপকারিতার কথা উল্লেখ্য করা হলোঃ
১. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ
ফাইবার মানুষের কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেমের উন্নতি করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং হার্ট ব্লকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২. GUT এর সুস্থ্যতায়ঃ
ডায়েটারি ফাইবার আমাদের GUT কে সুস্থ রাখে। পাশাপাশি এই ধরণের খাবার কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। GULT FLORA রক্ষণাবেক্ষণে ডায়েটারি ফাইবার অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেঃ
গবেষণার মাধ্যমে এই কথা প্রমাণিত যে, আমাদের খাদ্যে থাকা ফাইবার ডায়াবেটিস কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে অবদান রাখে। এসব খাবার আমাদের শরীরের ভিতর শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এবং শরীরে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে রক্তে সুগারের লেভেলও কম থাকে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ
দেহের ওজন কমাতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের জুড়ি মেল দায়। যারা নিজেদের ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য বেশি বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো একটি সলিউশন হতে পারে। এই ধরণের খাবার অনেক সময় ধরে পেট ভরা আছে দীর্ঘ সময় এমন অনুভূতি দিয়ে থাকে। যার ফলে মানুষের ঘনঘন বা বেশি খারার গ্রহণের হার কমে যায়।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করাঃ
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কষা পায়খানার সমস্যা আছে তাদের জন্য ভালো একটি সমাধান ফাইবারযুক্ত খাবার। এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে দারুণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়েটারি ফাইবারের উৎসঃ
বিভিন্ন ধরণের খাবারের মাধ্যমে আমরা ফাইবার পেতে পারি। তবে ধরণের ভিন্নতার কারণে ফাইবারের উৎসও আলাদা। নিচে ফাইবারের কিছু উৎস সম্পর্কে আলোচনা করছি।
১. সনিউবল ফাইবারের উৎসঃ
★ শিম ও ডাল জাতীয় খাবার। যেমন: শিমের বিচি, মটরশুটি, ছোলা, মসুর ডাল ইত্যাদি।
★ নানা ধরণের ফল। যেমন: মাল্টা, কমলা, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা ইত্যাদি।
★ ওটস, বার্লি বা ওটস দিয়ে তৈরি যে কোনো খাবার।
★ বাদাম- কাজু বাদাম, চিনা বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি।
★ বিভিন্ন ধরণের সবজি। যেমন: পাতাকপি, ব্রকলি, পুঁই শাক, বেগুন, সবুজ শাক, কাঠুয়া ডাটা ইত্যাদি।
ইনস্লিউবল ফাইবারের উৎসঃ
★ হোল গ্রেইন ফুড। যেমন: গম, বাদামী চাল, কাওন, ভুট্টা, বার্লি, রাই, মিলেট, ব্যাকহুইট ইত্যাদি।
★ বিভিন্ন ধরণের ফল। যেমন: আনারস, আঙ্গুর, কিউই ইত্যাদি।
★ বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি। যেমন: আলু, পালং শাক, ফুলকপি, এসপারাগাস ইত্যাদি।
★ বিভিন্ন ধরণের বাদাম। যেমন: আখরোট ও কাঠবাদাম।
★ বিভিন্ন ধরণের বীজ জাতীয় খাবার। যেমন: কুমড়োর বিচি, চিয়া সিড, তিল, সূর্যমুখীর বিচি ইত্যাদি।
আবার এমন কিছু খাবার আছে, যেসকল খাবারে একই সাথে দুই ধরণের ফাইবারের উপস্থিতি পাওয়া যায়৷ এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে আপেল, চিনা বাদাম ইত্যাদি। এছাড়া, এভোক্যাডো, র্যাম্পবেরিসহ বেশ কিছু ফল থেকেও ফাইবার পাওয়া যায়।
ফাইবারের ভারসাম্যহীনতা জনিত সমস্যাঃ
ফাইবার মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ফাইবারের গুরুস্ত্ব বিবেচনা করে একে ৭ম খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষের শরীরে ফাইবারের অভাব দেখা দিনে অনেক রোগ বালাই ও নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব সমস্যা সম্পর্কে নিচে কিছু উল্লেখ্য করা হলো।
★ দুর্বলতা,
★ কোনোকিছু গিলতে সমস্যা হওয়া
★ IBS (InvoluInvoluntary BowelBowel Syndrome)
★ দুধ ও দুধ জাতীয় ( ল্যাকটোজ) খাবার গ্রহণে পরিপাকে সমস্যা হওয়া,
★ হৃদরোগ,
★ ডায়াবেটিস,
★ কোলারেক্টাল ক্যান্সার,
★ বারবার মুড সুইং হওয়া,
★ অ্যাবডোমিনাল ক্রাম্প,
★ Gult Flora এর অবস্থার অবনতি,
★ কন্সটিপেশন এবং ডায়রিয়া,
★ হাড়ের জোড়াতে ব্যথা এবং সম্ভাব্য আর্থ্রাইটিস,
★ নিদ্রাহীনতা,
★ হঠাৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ওজন কমে যাওয়া,
★ চুল পড়া, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া,
★ যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া।
ডায়েটারি ফাইবার গ্রহণের পরিমাণঃ
ফাইবার শরীরের জন্য উপকারী বলেই যে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা যাবে এমনটা না। আবার সকল মানুষ ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ করতে পারবে না।
ইন্সটিটিউট অব মেডিসিনের প্রকাশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী নিচের চার্ট অনুযায়ী পরিমাণ মতো ফাইবার গ্রহণ করা উচিত।
৫০ এর কম বয়সী পুরুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ৩৮ গ্রাম এবং ৫০ এর কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে দৈনিক ২৫ গ্রাম।
৫০ এর অধিক বয়সী পুরুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ৩০ গ্রাম, এবং ৫০ এর অধিক বয়সী নারীর ক্ষেত্রে দৈনিক ২১ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা জরুরী।
পরিশেষে বলতে পারি, আমাদের প্রতিদিনের খাবারে ফাইবার থাকাটা খুবই জরুরী। আমাদের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার না থাকলে আমাদের শরীরে নানা ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ফাইবারের অভাবে অসুস্থ এমন রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশে কম নয়। নিজেকে সুস্থ্য রাখতে ফাইবার আছে এমন খাবার আমাদের তালিকায় রাখতেই হবে।