সিস্টাইটিস (Cystitis) কি?
সিস্টাইটিস হচ্ছে এক ধরণের সংক্রামণ যা ইউরিনারি থলিতে জ্বালা বা প্রদহ সৃষ্টি করে। মূত্রনালীর এ সংক্রমণটিতে পুরুষের তুলনায় নারীদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। ২৫ বা আর অধিক বয়স এমন নারী ও পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অধিকাংশ সময়েই রোগের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। জানলে অবাক হবেন, সংক্রমক এই রোগ সিস্টাইটিসে বিশ্বে ২০ মিলিয়নের অধিক মানুষ আক্রান্ত।
রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গঃ
বেশ কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ রোগীর মাঝে ফুটে উঠতে পারে। কিছু লক্ষণকে অধিকাংশ মানুষ ততটা আমলে নেয় না। কারণ অনেকেই মনে করে থাকেন কম পানি পানের কারণে বা অধিক পরিশ্রমের কারণে এমনটা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, অধিক পরিশ্রম বা পানি কম খাওয়ার কারণে সমস্যা কিছু সময়ের জন্য হতে পারে। কিন্তু যদি সমস্যা এক, দুই বা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে অন্য কারণে প্রস্রাবের পরিবর্তন হচ্ছে।
লক্ষণগুলো হচ্ছে–
★ ঘোলাটে ও প্রচন্ড গন্ধযুক্ত প্রস্রাব,
★ প্রস্রাব করার স্থির এবং প্রবল ইচ্ছা,
★ প্রস্রাব করার সময় মূত্রনালীর ভিতরে জ্বালা বা প্রদাহ অনুভব করা,
★ পেলভিক (শ্রোনী) স্থানে অস্বস্তি বোধ করা,
★ হালকা জ্বর হওয়া। রাতে এমনটা বেশি হতে পারে,
★ প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হওয়া। হলুদ বা লাল বর্ণ ধারণ করা,
★ ঝাঁজালো প্রস্রাব হওয়া।
প্রধান কারণ কি কি?
প্রায়শই এক ধরণের ব্যাকটেরিয়াগত সংক্রামণের কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগের চিকিৎসা করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা করা না হলে এই সংক্রমণ ধীরে ধীরে মূত্রাশয় ও মূত্রনালী থেকে উপরের দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। এবং পাইলোনেফ্রাইটিসের মাধ্যমে কিডনিকে প্রভাবিত করতে পারে। মহিলাদের মূত্রনালী (ইউরেথ্রার) পুরুষের তুলনায় ছোট হওয়ায় মহিলারা পুরুষের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। আবার অনেক মহিলাকে এই সংক্রামণে একের অধিকবারও আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
এই কারণ ছাড়াও আরও কিছু কারণ আছে যার প্রভাবে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে–
★ মূত্রনালীর পদ্ধতিগত বা কোন প্রকার ত্রুটি,
★ মূত্রনালীতে স্নায়ুর কর্মহীনতা,
★ বাইরের কোন পদার্থ বা ঔষধের প্রয়োগ যা মূত্র স্থলীকে উত্তেজিত করে,
★ মূত্র স্থলীতে পাথর,
★ ইমিউন সিস্টেমের কোন অসুখ থাকলে তার প্রভাবে সিস্টাইটিস হতে পারে,
এসব কারণ ছাড়াও কখনও কখনও মাদকদ্রব্য সেবন, অতিরিক্ত ধুমপান, রেডিয়েশন থেরাপি, মহিলাদের হাইজেন স্প্রে-র মত নির্দিষ্ট উত্তেজক অথবা স্পারমিসাইডসের ব্যবহারের ফলে সিস্টাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও, ক্যাথেটারের ব্যবহারের কারণে মুত্রনালী এই সংক্রমণে সংক্রামিত হতে পারে।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতিঃ
প্রাথমিকভাবে রোগীর উপসর্গ ও উপসর্গের সময়সীমা, দৈনন্দিন রুটিনের উপর প্রভাব ফেলে এমন অন্যান্য সম্ভাব্য শর্তগুলোকে এড়িয়ে চলার ফলে রোগী এই সংক্রমণে সংক্রমিত হয়েছে বলে ধারণা করেন ডাক্তার। আর রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তার কিছু টেস্ট করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই সকল টেস্টের মাধ্যমে রোগের ধরণ ও পর্যায় নির্ধারণ করে পরবর্তীতে করণীয় কি সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন তিনি। টেস্টগুলোর মধ্যে রয়েছে–
★ শারীরিক ও স্নায়ুবিক টেস্ট,
★ ব্যথার পর্যায় এবং প্রস্রাব এড়ানোর পরীক্ষা,
★ প্রস্রাব বিশ্লেষন,
★ প্রস্রাব কালচার,
★ সিস্টোস্কোপি– মূত্রথলির ভিতরের অবস্থান দেখার জন্য ক্যামেরাযুক্ত একটি টিউব প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়,
★ পেলভিসে (শ্রোনীতে) আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ও এক্স-রের মত ইমেজিং টেস্ট,
সিস্টাইটিসের চিকিৎসাঃ
মূত্রাশয় বা মূত্রনালী এবং অন্য কোন স্থানে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সেই অঙ্গকে সম্পূর্ণভাবে সারিয়ে তুলতে এন্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। হালকা সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর কোর্স হিসেবে ডাক্তার নারীদের জন্য ৩ দিন এবং পুরুষের জন্য ৭-১৪ দিনের এন্টিবায়োটিক দিতে পারেন। এর বেশি এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে ১,২ কয়েকদিন এন্টিবায়োটিক সেবনের পরে যদি রোগীর উপসর্গগুলো কমে যায় তাহলে ঔষধ সেবন করা বন্ধ করা যাবে না। ডাক্তার যে পরিমাণ এন্টিবায়োটিক সেবন করতে বলবেন সেই পরিমাণ ঔষধ সেবন করতেই হবে। মাঝে কোন গ্যাপ দেওয়া যাবে না। ওভার দ্যা কাউন্টার ঔষধগুলোর মধ্যে অ্যাসকর্বির অ্যাসিডের মত কিছু অ্যাসিডিক উপাদান থাকে, যা সংক্রমিত এজেন্টগুলোকে ধ্বংস করে থাকে।
★ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে তা ঘনঘন বা একটু পরপর। একসাথে অতিরিক্ত পানি পান করলে কিডনিতে প্রভাব পড়বে।
★ সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য অভ্যন্তরীণ এলাকায় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। অধিকাংশ নারীর পিরিয়ডের সময় অপরিষ্কার থাকার কারণে বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। নারী ও পুরুষের ব্যবহৃত অন্তর্বাস প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার করে ব্যবহার করাটা খুব জরুরী।
★ যে খাবারগুলো অস্বস্তিকর কারণ হতে পারে সেই খাবারের তালিকা করে সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
★ মশলাযুক্ত খাবার, চকলেট এবং কফির মত কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
★ অ্যালকোহল, ধুমপান ও এনার্জি ড্রিংক এড়িয়ে চলতে হবে।
★ প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাব ধরে রাখার চেষ্টা করে মূত্রাশয়ের ক্ষমতা বাড়াতে পারেন। এমনটা মাঝেমাঝে করতে পারেন। তাই বলে সবসময় প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
★ প্রস্রাব করার পরে, বিশেষত মেয়েদের মলদ্বার থেকে মূত্রনালীর সংক্রমণ সম্ভাবনা প্রবল। এই সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সামনে থেকে পিছনের অংশ অবশ্যই মুছে নিবেন। তবে মেয়েরা প্রস্রাবের স্থানে কখনোই টিস্যু ব্যবহার করবেন না। টিস্যু মেয়েদের জরায়ু ইনফেকশন এমনকি টিউমার সৃষ্টি করতে সক্ষম।
★ গোসলের সময় বাথটাব ব্যবহার এড়িয়ে চলাটাই উত্তম। বাথটাবে অনেকে গোসল করার ফলে একজনের জীবাণু অন্যের শরীরে সহজেই ছড়িয়ে যেতে পারে। বাথটাবের পরিবর্তে ঝরনা বা বালতিতে গোসল করার মাধ্যমে সংক্রমণ কমাতে পারেন।
সাধারণত যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সিস্টাইটিস রোগটি সহজে এবং কার্যকরভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে সিস্টাইটিসকে যদি হালকা ভাবে নেওয়া হয় এবং এর চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে এই সংক্রমণ আপনার অস্বস্তির কারণ হতে পারে এবং আপনাকে অনেক বড় সমস্যা বা রোগের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জানতে পারলাম আজ 👍👍👍
Pingback: জরায়ু ফেলে দিতে কখন ও কেন করা হয় হিস্টেরেক্টমি অপারেশন - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon