শিশুরা স্বভাবতই একটু চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। তবে এই চঞ্চলতা অতিরিক্ত পর্যায়ের হলে এবং তার সাথে কাজের প্রতি অমনোযোগিতা কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। অতিরিক্ত চঞ্চলতা এবং কাজের প্রতি বাচ্চাদের অমনোযোগিতা শিশুর মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। শিশুদের অতিমাত্রায় চঞ্চলতা, অতিমাত্রায় আবেগ এবং কাজে অমনোযোগী ভাব হতে পারে এডিএইচডি (ADHD) রোগের কারণে।
Attention Deficit Hyperactive Disorder বা ADHD নামক রোগটি ১২ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। তবে ১-৪ বছর বয়সের বাচ্চাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
শিশুর অতিমাত্রায় চঞ্চলতা ADHD রোগে আক্রান্তের প্রথম উপসর্গ বা লক্ষণ। শতকরা ৫ ভাগ শিশুর মাঝে এই রোগে আক্রানের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই রোগটি শিশুদের স্নায়ু বিকাশ জনিত আচরনগত একটি সমস্যা। সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলে শিশু এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়৷ আর এই বেশির পরিমাণ প্রায় ৩ গুন।
নির্দিষ্ট কোন কারণ এই রোগের জন্য দায়ী নয়। বাবা ও মায়ের দেহে এই রোগ থাকলে সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ ভাগেরও বেশি। আবার জমজ শিশুদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশেরও অধিক।
এই রোগের কারণঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে, জিনগত কারণেই শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তন, হরমোন জনিত সমস্যা, স্নায়ুবিজ রাসায়নিক পদার্থের তারতম্য, মস্তিষ্কের প্রদাহ, পরিবেশগত সমস্যাসহ নানা কারণে শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
জিনগত কারণের মধ্যে শরীরে ডোপামিন রিসেপটরে জেনেটিক মিউটেশন এই রোগের মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞগণ। মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তন যেমন- মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের আকৃতি ছোট বা বড় হয়ে যাওয়া, নার্ভ ছোট বা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বাচ্চা মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় মা রুবেলা ভাইরাস, সাইটোমেগালো ভাইরাস, হারপিস সিম্পেক্স ভাইরাস, এইচআইভি ভাইরাস অথবা টায়ফয়েড বা জন্ডিসে আক্রান্ত হলে সন্তান মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগতে পারে। আর এর থেকেই পরবর্তীতে নবজাতকের মস্তিষ্কে কোন জীবাণু সংক্রমণের কারণে (যেমন- মেনিনজাইটিস ও এনসেফালাইটিস) শিশু এডিএইচডি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
আবার কখনও কখনও এসব শিশুদের রক্তে লেড বা সিসার পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলে দেহের হরমোনে তারতম্য দেখা দেয়। ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড, ফুড এজিটিভিস, খাবারের রঙ, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য খাদ্যে ব্যবহৃত ফুড প্রিজারভেটিভস এ রোগের প্রখরতা অত্যাধিক বাড়িয়ে দেয় বলে বিশেষজ্ঞগণ মত প্রদান করেন। তাই এসব খাবার থেকে শিশুদের দূরে রাখার পাশাপাশি সন্তানের কার্যক্রমের উপর বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
যদি সন্তানের মাঝে কোন রকম অস্বাভাবিকতা, অধিক চঞ্চলতা, কাজে অমনোযোগিতা লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ভয়ংকর যন্ত্রণার নাম মাইগ্রেন
Pingback: এক বিরল রোগ Glanzmann Thrombasthenia - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon
Pingback: কনজেনিটাল অ্যাড্রিনাল হাইপারপ্লাসিয়া কি - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon