হিস্টেরেক্টমিঃ
নারীদের জরায়ু জনিত একটি অপারেশনকে বলা হয় হিস্টেরেক্টমি। শরীর থেকে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়ার এই অপারেশনকে বলা হয় হিস্টেরেক্টমি। যে সকল মহিলাদের এই অপারেশনের প্রয়োজন হয়, সেই সকল মহিলাগণ পিরিয়ড এবং গর্ভধারণের ক্ষমতা সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ এই অপারেশনের ফলে আর না তাদের পিরিয়ড হবে, আর না তারা সন্তান জন্ম দিতে পারবে। মূলত ফাইব্রয়েড টিউমার, অস্বাভাবিক রক্তপাত এবং রক্তপাত বন্ধ না হওয়া, জরায়ু ক্যান্সার, ক্যান্সার, জরায়ু প্রল্যাপস সহ বেশ কিছু রোগের কারণে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে হিস্টেরেক্টমি করা হয়ে থাকে।
হিস্টেরেক্টমি কি, হিস্টেরেক্টমি কত প্রকার, এর লক্ষণ, চিকিৎসা, প্রতিরোধের উপায়, অপারেশন পদ্ধতি এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য রোগ সম্পর্কে আলোচনা করছি।
হিস্টেরেক্টমি কিঃ
মূলত জরায়ু এবং সার্ভিক্স অপসারণের একটি অপারেশন পদ্ধতিকে বলা হয় হিস্টেরেক্টমি। জরায়ু হচ্ছে একটি জরায়ু হলো শিশুর গর্ভ, মাসিক প্রতিমাসে এর আস্তরণ ভেঙে দেয়। জরায়ুর সাথে অন্যান্য অঙ্গ এবং টিস্যুসমূহ ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয় অপসারণ করা হবে কিনা এই বিষয়ে রোগীর অসুস্থতার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে ডাক্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। যদি হিস্টেরেক্টমি করা হয়, তাহলে কোনো নারী পরবর্তী মাসিক পাবে না এবং কখনোই গর্ভধারণ করতে পারবে না।
হিস্টেরেক্টমি কত প্রকারঃ
হিস্টেরেক্টমি সংক্রান্ত বেশ কয়েক ধরণের সার্জারী রয়েছে। রোগীর অবস্থার তীব্রতাতার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বাশয় অপসারণ করা হবে কি না।
★ সুপার সার্ভিক্যাল হিস্টেরেক্টমিঃ
অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর জরায়ুর উপরের অংশকে সরিয়ে জরায়ুমুখ অপসারণ করা হলে এই অপারেশনকে বলা হয় সুপার সার্ভিক্যাল হিস্টেরেক্টমি।
★ টোটাল হিস্টেরেক্টমিঃ
ডিম্বাশয় ছাড়া জরায়ু এবং সার্ভিক্স উভয়কে অপারেশনের মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারণ করা হলে তাকে বলা হয় টোটাল হিস্টেরেক্টমি।
★ বিলাটেরাল সালপিঙ্গো-ওফোরেক্টমি উইথ টোটাল হিস্টেরেক্টমিঃ
ডিম্বাশয়ের সাথে জরায়ু, সার্ভিক্স এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবকে অপসারণ করে ফেলা হলে এই অপারেশনকে বিলাটেরাল সালপিঙ্গো-ওফোরেক্টমি উইথ টোটাল হিস্টেরেক্টমি ( Bilateral Salpingo-oophorectomy with Total Hysterectomy বলা হয়।
★ র্যাডিকাল হিস্টোরেক্টমিঃ
যোনির উপরের অংশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সালপিঙ্গো-ওফোরেক্টমি সহ টোটাল হিস্টেরেক্টমি করা হলে তাকে বলা হয় র্যাডিকাল হিস্টেরেক্টমি। মূলত জরায়ু ক্যান্সার বা পেটের ক্যান্সারের কারণে জরায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই র্যাডিকাল হিস্টেরেক্টমি অপারেশনটি করা হয়ে থাকে।
হিস্টেরেক্টমি করার কারণ কি কিঃ
আগের আপনাদের অবগত করেছি যে হিস্টেরেক্টমি হচ্ছে এক ধরণের অপারেশন। যার মাধ্যমে জরায়ু অপসারণ করা হয়। এবং কিছুক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে জরায়ু, ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবও অপারেশনের মাধ্যমে দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এই অপারেশনটি সাধারনণত গাইনী বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন করে থাকেন। এই ধরণের অপারেশনগুলোকে মহিলাদের জন্য সবচেয়ে সাধারণ অপারেশনের মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয়। বেশ কিছু কারণে জরায়ুর সমস্যায় ভুগছে এমন মহিলাদের হিস্টেরেক্টমি করতে হতে পারে। এই সব কারণের মধ্যে রয়েছে:
★ Uterine Fibroids:
Utreine Fibroids কে অ-ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি বা টিউমার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো জরায়ুতে বা জরায়ুর আশেপাশে বিকশিত হয়ে থাকে। এই টিউমারগুলো অত্যন্ত ভারী এবং পিরিয়ডের ক্ষেত্রে বেদনাদায়ক, পেলভিক চাপ এবং অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। যখন ফাইব্রয়েডগুলো বড় হয়ে যায় বা উল্লেখ্যযোগ্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তখন ডাক্তার রোগীকে হিস্টেরেক্টমি করার জন্য পরামর্শ দিতে পারে।
★ Endometriosis:
এর কারণে জরায়ুর অস্তরণে থাকা টিস্যুগুলো (এন্ডোমেট্রিয়াম) জরায়ুর বাহিরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর প্রভাবে জরায়ু এবং পেটে ব্যথা, জ্বালা বা প্রদাহ এবং দাগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রোগীর এডোমেট্রিয়াম ধরা পড়লে অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে যদি রোগী না হয়, তাহলে এই সকল রোগীর সুস্থতা নিশ্চিতে বা ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে ডাক্তার হিস্টেরেক্টমি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
★ Uterus Cancer:
যখন কোনো রোগীর জরায়ুতে ক্যান্সারের কোষ সনাক্ত করা হয়, তখন রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টায় ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ অপসারণের বিকল্প আর কোনো উপায় থাকে না। ক্যান্সার অপসারণ করতে এবং এই ক্যান্সার যেন শরীরের অন্য কোনো অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, এজন্য হিস্টেরেক্টমির মাধ্যমে রোগীর জরায়ুর সাথে ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবও বের করে ফেলতে হয়।
★ Chronic Pelvic pain:
যে সকল ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী পেলভিক পেইন তীব্র হয় এবং সকল চিকিৎসায় ব্যথা নিরাময় করা সম্ভব হয় না, তখন এই ব্যথা থেকে রোগীকে মুক্তি করার জন্য শেষ চিকিৎসা হিসেবে রোগীর হিস্টেরেক্টমি করা হয়ে থাকে।
★ Uterine Dilatio বা জরায়ু প্রসারণঃ
যখন জরায়ুর আশেপাশের এবং জরায়ুকে সমর্থনকারী পেশী ও লিগামেন্টগুলো দুর্বল হয়ে যায়, তখন জরায়ু বড় বা প্রসারিত হয়ে যায়। এর ফলে মেয়েদের জরায়ু যোনিতে ঝুলে যায়। এর ফলে রক্ষণশীল ব্যবস্থাগুলো অকার্যকর হয়ে যায় এবং সহবাসের সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় এবং ব্লিডিংসহ বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে হিস্টেরেক্টমি।
★ Abnormal Bleeding বা অস্বাভাবিক রক্তপাতঃ
যদি কোনো মহিলার দীর্ঘস্থায়ী, অনিয়মিত বা অতিরিক্ত রক্তপাত হয় এবং ঔষধ, স্যালাইন, মেডিসিন, ইনজেকশন, ব্লাড ট্রান্সফিউশন ইত্যাদি চিকিৎসার মাধ্যমে যদি রোগীর ব্লিডিং বন্ধ করা না হয় বা বন্ধ হওয়ার পরে আবার ব্লিডিং জনিত সমস্যা শুরু হয়, তাহলে রোগীকে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করার শেষ পন্থা হিসেবে হিস্টেরেক্টমি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গঃ
যদি কোনো মহিলা নিন্মলিখিত লক্ষণগুলোর কোনো একটি লক্ষণ অনুভব করে তাহলে জরায়ুর একটি পরীক্ষা করে ডাক্তার নিশ্চিত হয়ে এবং অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করে যদি রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে না পারেন, তাহলে সেই রোগীকে হিস্টেরেক্টমি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
লক্ষণগুলো হচ্ছে-
১. যদি কোনো নারীর যোনিপথ দিয়ে অতিরিক্ত রক্তপাত হয় এবং এই রক্তপাত অস্বাভাবিক হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তার ঔষধ, ইঞ্জেকশন বা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে রক্তপাত বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়।
২. জরায়ু প্রোল্যাপস, অর্থাৎ জরায়ু যোনি খালে নেমে যাওয়া। এই সমস্যাটি যোনির আশেপাশের পেশী ও টেন্ডন দুর্বল হওয়ার কারণে হতে পারে। আবার জটিলতার মধ্যে প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ না থাকা মলত্যাগ করার সময় অসুবিধা হওয়াও অন্যতম।
৩. হাইপারপ্লাসিয়া, বারবার জরায়ু পলিপ বা অ্যাডেনোমায়োসিসের মত রোগে আক্রান্ত হওয়া।
৪. জরায়ুতে পেলভিক পেইন বৃদ্ধি পাওয়া। এর ব্যথা অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হাওয়া।
৫. পিরিয়ডের সাথে তীব্র ব্যথা হওয়া, এবং অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়ার পরেও যখন ব্যথা ও রক্ত ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
৬. সার্ভিক্যাল বা জরায়ু ক্যান্সার বা জরায়ু ও জরায়ুর অস্বাভাবিকতা। ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য নানা অপারেশন করা যেতে পারে।
৭. অ-ক্যান্সার যোগ্য টিউমার জরায়ু ফাইব্রয়েড বা Leiomyomas হওয়া।
রোগ নির্ণয়ঃ
শারীরিক এবং জরায়ু পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। ডাক্তার রোগীর শারীরিক ওজন পরিমাপ করার পাশাপাশি রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গও নিরীক্ষণ করবে। এই সব পরীক্ষা প্রথমেই করে নিয়ে ডাক্তার রেকর্ড করে নিবেন। এরপর প্রয়োজন হলে রোগীর রক্ত পরীক্ষা, ইউরিন টেস্ট, এক্স-রে, এমআরআই এর পাশাপাশি এন্ডোস্কোপি টেস্ট করিয়ে এর রোগ নির্ণয় করতে পারে।
এই সকল টেস্টের রিপোর্টের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা কতটা তীব্র এবং রোগীর কোন ধরণের অপারেশন করতে হবে তা নির্ধারণ করে থাকে।
চিকিৎসাঃ
যেহেতু এটি একটি সার্জারী, তাই রোগীর শারীরিক অবস্থার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে সার্জারীটা করা হয়ে থাকে। সার্জারীর পূর্বে রোগীকে হাসপাতালের পোশাক পড়ানো হবে। এরপর ইসিজির মাধ্যমে রোগীর হার্ট রেট চেক করা হয়। পাশাপাশি পালস চেক করা, প্রেশার চেক করা, ডায়াবেটিস টেস্ট ইত্যাদি সম্পন্ন করা হবে। জরায়ুর ভিতরে ঔষধ সরবারহের জন্য রোগীকে লিকুইড IV দেওয়া হতে পারে। এই অপারেশনে অবশ বা অজ্ঞান করার জন্য রোগীর আবেদনের ভিত্তিতে জেনারেল বা লোকাল এনেস্থিশিয়া দেওয়া হয়ে থাকে।
হিস্টেরেক্টমির অনেকগুলো সার্জারী প্রসেস রয়েছে। এগুলো হচ্ছে–
★ যোনিলেখার হিজিস্টোমিমিঃ
এই প্রসেসের অস্ত্রপাচারে জরায়ু অপসারণের জন্য যোনির উপরের অংশটি কাটা হয়। এই অপারেশনে বাহ্যিক কোনো ছেদ বা কাটার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে যোনির দ্রবীভূত বা ভিতরে সেলাই দেওয়া হয়ে থাকে। এই পদ্ধতি সাধারণত অ-ক্যান্সারজনিত টিউমার বা সমস্যার ক্ষেত্রে অবলম্বন করা হয়ে থাকে। এই অপারেশনের ফলে রোগী ন্যূনতম জটিলতার ভুক্তভোগী হতে পারে। অপারেশনের পরে সুস্থ হতে বা জটিলতা কাটতে ৪ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এই ধরণের সার্জারির পরে সেই দিনই রোগী বাসায় চলে যেতে সক্ষম।
★ পেটের হিস্টেরেক্টমিঃ
এই পদ্ধতিতে পেট কেটে অপারেশন করা হয়। মূলত পিউবিক হাড় থেকে শুরু করে নাভি পর্যন্ত চিরে ফেলা হয় এবং অপারেশনের পরে চিরে ফেলা অংশ বন্ধ করতে স্ট্যাপল বা সেলাই করা হয়। মূলত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে এবং অন্যান্য পেলভিক এই ক্যান্সার পেলভিক এরিয়ার আশেপাশে ছড়িয়ে পড়লে এই পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয়। আবার পেলভিক পেইন ছড়িয়ে পড়লেও এই পদ্ধতিতে অপারেশন করতে হতে পারে। এই পদ্ধতিতে অপারেশনের পরে রোগীকে ২-৪ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়।
★ ল্যাপারোস্কোপিক হিস্টেরেক্টমিঃ
এই পদ্ধতিতে একটি ল্যাপারোস্কোপের সাথে ভিডিওক্যাম টিউবের মাধ্যমে জরায়ুর ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। সার্জন এর মাধ্যমে পেটের বোতামটি কেটে ফেলেন এবং জরায়ু অপসারণের জন্য সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিতে অপারেশনের পরে রোগীর সুস্থ হতে কম সময় লাগে এবং এই অপারেশন পেটের হিস্টেরেক্টমির তুলনায় ছোট অপারেশন এবং অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে কম বেদনাদায়ক। এই ধরণের অপারেশনের পরে রোগীকে একদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হতে পারে।
মূলত এই পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে সার্জারী মাধ্যেমে রোগীর জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করা হয়।
হিস্টেরেক্টমির জটিলতা কী কীঃ
যে কোনো অপারেশনের ফলেই রোগীকে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সমস্যা বা জটিলতাগুলোর অধিকাংশই সাময়িক। অন্যান্য অপারেশনের মতো হিস্টেরেক্টমির পরেও কিছু জটিলতা বা সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্মুখীন হতে হয়। এসব জটিলতাগুলো হচ্ছে–
★ ব্লাড ক্লটিং বা রক্ত জমাট বাঁধা,
★ অত্যাধিক রক্তপাত,
★ মারাত্মক সংক্রমনে আক্রান্ত হওয়া,
★ অভ্যন্তরীণ সেলাই ছিঁঁড়ে বা কেটে যাওয়া,
★ মূত্রনালীর ক্ষতি হওয়া,
★ অন্ত্র বিঘ্ন বা পেটের সমস্যা হওয়া,
★ এনেস্থেশিয়া সংক্রান্ত সমস্যা ( ব্যাক পেইন, নার্ভে টান লাগা ইত্যাদি),
★ জরায়ু বা যোনিমুখে জ্বালাপোড়া বা প্রদাহ (অপারেশনের ফলে সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহ)।
অপারেশনের পরে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাঃ
★ হিস্টেরেক্টমির পরে রোগী চ্যানেলের আবেদন অনুভব করতে পারে। এই অনুভূতি ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। স্রাবের জন্য স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে কোনো কারণেই হোক, স্যানিটারি প্যাড ৫-৬ ঘন্টার বেশি ব্যবহার করা যাবে না। এর বেশি ব্যবহার করলে এই প্যাডের জেলি ছত্রাক আক্রান্ত হয়ে নারীকে জরায়ু টিউমার, জরায়ুর ইনফেকশন এমনকি জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় তাদের ৭০-৯০ ভাগ নারী দিনে ১ থেকে ২ টি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে।
★ অপারেশনের পরে রোগীকে ৪-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ১০ পাউন্ডের বেশি ওজন এমন কোনো জিনিস তুলতে দেওয়া যাবে না। এতে করে সেলাই/স্ট্যাপল কেটে গিয়ে ব্লিডিং বা অভ্যন্তরীণ ভয়াবহ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
★ অপারেশনের পরে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ রোগীকে সহবাস থেকে বিরত থাকবে না। এবং যোনিতে কোনো কিছু রাখতে পারবে না। বর্তমান যুগে অনেক নারীই প্লাস্টিক, সিলিকন, কাঠ বা অনেক জিনিস বা কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। এগুলো ব্যবহার বা যোনিতে রাখা যাবে না।
★ রোগী গোসল করলে পারবে। তবে কিছুদিন কাটা স্থানে সাবান লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু পানি দিয়ে গোসল করতে পারে এবং গোসলের পরে ভায়োডিন বা জীবাণুনাশক দিয়ে চিরা বা ক্ষত স্থান ড্রেসিং করে নিতে হবে। দিনে ২ বার ড্রেসিং করা উত্তম।
★ পেট চিরে অপারেশন করা হলে নিজে থেকে ব্যান্ডেজ, স্ট্যাপল বা সেলাই খুলতে যাবেন না। ডাক্তার যতদিন সেলাই/স্ট্যাপল এবং ব্যান্ডেজ রাখতে বলবে ততদিন রাখতে হবে। এসব সরাতে বা খুলে ফেলতে হলে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। এসবের অবস্থা বিবেচনা করে ডাক্তার এগুলো খুলার কাজ করবেন।
★ অপারেশনের ১৪ দিন বা ২ সপ্তাহ পর থেকে রোগী গাড়ি চালাতে পারবে। এর আগে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
★ ৬ সপ্তাহ পরে রোগী যদি কোনো ঘুমের ঔষধ না খেয়ে থাকে তাহলে সে তার দৈনন্দিন কাজগুলো করতে পারবে। তবে ভারী কাজে সমস্যা হলে সেই কাজ থেকে আরও কিছুদিন বিরত থাকতে হবে।
★ অপারেশনের ৬ সপ্তাহ পর থেকে রোগী চাইলে হালকা ব্যায়াম শুরু করতে পারে। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ৬ সপ্তাহর মধ্যে বা তার পরে ভারী ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
★ অপারেশনের পরে রোগীর সুস্থ হতে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। সুস্থ হওয়ার সময় অপারেশনের ধরণ, নিরাপত্তা এবং রোগীর ইমিউনিটির উপর নির্ভর করে। ৬ সপ্তাহ পর থেকে রোগী স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারে।
★ অপারেশনের পরে নিচে বসে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং প্রস্রাব-পায়খানার জন্য কমোড টয়লেট ব্যবহার করতে হবে।
সকল নারীকে হিস্টেরেক্টমির সকল দিক সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নিজেকে সব সময় সুস্থ রাখতে এবং নিরাপদ ও সুখী জীবন যাপনের জন্য উপরে উল্লেখিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো অনুসরণ করতে হবে। নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে। এমন জীবন-যাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে যে জীবন-যাপন আপনাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, যা আপনাকে বড় বড় রোগ, সন্তান জন্মদানে অক্ষম বা মৃত্যুর মুখে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন: সিস্টাইটিস কি?
Pingback: জরায়ু টিউমার মানেই ক্যান্সার? - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon