যে খাবার আপনাকে বৃদ্ধ হতে দিবে না।

বৃদ্ধ হতে চায় না এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে অনেক। অনেকেই চাই সারাজীবন ৩০ বছরে নিজেকে আটকে রাখতে। আপনিও যদি তাদেরই একজন হয়ে থাকেন তাহলে জেনে নিন এমন কিছু খাবার সম্পর্কে। যে খাবারগুলো কেলে ত্বকের বয়স তো বাড়বেই না, সেই সাথে আমাদের জিনের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করবে, যার প্রভাবে শরীরেরও বয়স কমবে চোখে পড়ার মতো। ফলে ৫০ বছরেও আপনাকে মনে হবে যুবকের মত।

খাবারগুলো খেলে আমাদের দেহের বয়স যুবকের মত ধরে রাখা সম্ভব। লিখাটা পড়ে বিশ্বাস হচ্ছে না?  ভাবছেন খাবারের সঙ্গে বয়সের কী সম্পর্ক, তাই তো! আসলে বেশ কিছু খাবারে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যেমন ধরুন নিউট্রিয়েন্ট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো ত্বক সতেজ রাখে, ত্বকে ভাঁজ পড়তে দেয় না। এতে বয়স কম বলে মনে হয়। সেই সাথে শরীরকেও চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।

১. খেজুর: 

খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলে শেষ করা সম্ভব নয়। গবেষণার মাধ্যমে বলা হয় খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি, প্রোটিন,  ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজসহ আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। খেজুর শক্তির অন্যতম একটি ভালো উৎস হিসেবে বিবেচিত। এই ফল একদিকে যেমন শরীরে শক্তি জোগায়, তেমনই ত্বকের মসৃণতা বাড়াতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

২. অলিভ অয়েল:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর অলিভ অয়েল ক্যান্সার প্রতিরোধ করার পাশাপাশি বয়সজনিত নানা অসুবিধা কমাতেও দারুন কাজ করে। খাওয়ার পাশাপাশি এই তেল ত্বকে এবং চুল-দাড়িতে ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল জয়তুনের তেল নামেও অনেকের কাছে পরিচিত।

৩. জাম:

এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বয়স বাড়ার গতিকে আটকানোর কাজ করে। শুধু জামই নয় ক্র্যানবেরি, স্ট্রবেরি এবং ব্ল্যাক বেরি শরীরের সার্বিক গঠনের উন্নতি ঘটাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম।

৪. বাদাম:

শরীরকে ভাল রাখতে উপকারি ফ্যাটেরও প্রয়োজন পড়ে। তাই প্রতিদিন বাদাম মুঠো ভরে বাদাম খেতে পারেন। কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম বা পেস্তা বাদামই খেতে হবে এমনটা নয়। দেশি বাদামও প্রচুর শক্তির উৎস। যদি পেটের সমস্যা না হয় তাহলে কাঁচা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন। কাঁচা বাদামে বেশি উপকার পাবেন।

৫. সবুজ শাকসবজি:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কপির পাতা এবং পালং শাকে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নামক একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এই ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট সেলের ক্ষয় আটকে ত্বক এবং শরীরের বয়স ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৬. কিসমিস:

শক্তির উৎস হিসেবে দারুণ এক খাবার কিসমিস। কিসমিসে এনার্জি, কিলোক্যালরি, ডায়েটরি ফাইবার, ফ্যাট, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও সোডিয়ামের মত উপাদান ভরপুর। দুর্বলতা দূর করতে এবং ত্বক মসৃণ রাখতে কিসমিসের মত খাবারের জুড়ি মেলা ভার। এটি শুধু ত্বক মসৃণই করে না, ত্বককে ভাঁজ হওয়া রোধেও দারুণ কাজ করে।

৭. মটরশুঁটি:

হার্টকে নানা ধরণের ক্ষতিকর উপাদানের হাত থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মটরশুঁটির বিকল্প আর কোন খাবার নেই। তাই কেউ যদি দীর্ঘদিন জোয়ান থাকতে চান, তাহলে এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে মটরশুঁটি নামক এই খাবারটি।

৮. গ্রিন টি: 

প্রতিদিন এক কাপ গ্রিন টি পান করলে শরীরে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রবেশ করতে পারে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার, হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক এমনকি অ্যালঝাইমার রোগ আটকাতে দারুণভাবে কাজ করে থাকে।

৯. টমেটো: 

টমেটোতে লাইকোপেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এই উপাদান ত্বককে সতেজ রাখে। এই উপাদানের কারণে সহজে চামড়ায় ভাজ পড়ে না বা চামড়ায় দাগ পড়ে না। শুধু তাই নয়, লাইকোপেনের কারণে স্টমাক, লাঙ্ক এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো মরণব্যধি রোগকে প্রতিরোধ করতেও টমেটো দারুণ কাজ করে।

১০. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:

শরীরের বয়স যুবক হিসেবে ধরে রাখতে ফাইবার যুক্ত খাবারের বিকল্প আর কিছুই হয় না বললেই চলে। তাই দেহকে রোগমুক্ত রাখার পাশাপাশি শরীর এবং ত্বকের বয়স  ধরে রাখতে প্রতিদিনের ডায়েটে মটরশুঁটি, ডাল, ব্রকলি, ছোলা, অ্যাভোকাডো এবং ওটমিলের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে ভুলবেন না।

১১. মাছ:

আমরা সকলেই জানি মাছে ওমেগা-ত্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই উপাদানটি শরীরের ভিতরের যে কোন ধরনের প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া কমাতে দারুন কাজ করে। ফলে শরীর সচেজ থাকার পাশাপাশি শরীরের বয়স বাড়িয়ে দেওয়ার সময়টা বেড়ে যায়। তাই সপ্তাহে দুদিন মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন।

১২. শস্যদানা:

ঝাড়াই বা মাড়াই করা শস্য দানার পরিবর্তে যদি হোল গ্রেন খাওয়া যায়, তাহলে বয়স বাড়ার হার অনেকটাই হ্রাস পায়। শুধু তাই নয় এই ধরনের খাবার বয়সজনিত নানা রোগ হওয়ার আশঙ্কাও কমায়, বিশেষত হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

১৩. টক দই:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দই খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়, সেই সঙ্গে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে রিবোফ্লাবিন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি১২ এর মাত্রাও বাড়তে থাকে, যার প্রভাবে শরীরের বয়স কমে চোখে পড়ার মতো। সেই সঙ্গে একাধিক রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

সুতরা, বাহিরের খাবার পরিহার করে উপরোক্ত খাবারগুলো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিজেকে সুস্থ ও তরুণ রাখুন।

আরও পড়ুন: ডায়েট মানে কি না খেয়ে থাকা? 

Leave a Comment