কিডনী নষ্ট হয়েছে কি না বুঝবেন যেসব লক্ষণেঃ
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে কিডনী অন্যতম। তবে বিভিন্ন কারণে কিডনী অকেজো হয়ে যেতে পারে। কিডনী রোগ খুব নীরবে শরীরের ক্ষতি করে ফেলে।
সাধারণত খুব জটিল অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত লক্ষণগুলো ভালোভাবে প্রকাশ পায় না। তাই কিডনী রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরী। সেই সাথে জানা দরকার এর সঠিক চিকিৎসা কি হবে।
★ কাদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে?
অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনীর প্রদাহ (যার কারণে প্রস্রাবের সঙ্গে আমিষ নিঃসৃত হয়) কিংবা মূত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী কোনো সমস্যা থাকলে কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আবার জন্মগত কিছু সমস্যার কারণেও এ রোগ দেখা দিয়ে থাকে।
একজন সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ প্রচণ্ড বমি বা পাতলা পায়খানা হলে কিডনী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে অনুমান করা যেতে পারে। যদি তিনি বমি বা পায়খানার সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও লবণের প্রতিস্থাপন না করেন। বা ঘাততি পূরণে অবহেলা করেন তাহলে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। প্রায়ই যারা ব্যথার ওষুধ সেবন করেন তাদের কিডনীর সমস্যা হওয়াত সম্ভাবনা প্রবল। অতিরিক্ত আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণের কারণেও কিডনী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আবার, শরীর থেকে অনেক বেশি প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়ার কারণে কিডনীতে প্রোটিন চলে যায়। আর প্রোটিন শরীরে পেশি তৈরি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফলে রোগীর পায়ে পানি জমে ও প্রেশার বেড়ে যেতে পারে।
কারণ এতে করে শরীরে অ্যালবুমিন কমতে থাকে এবং প্রেশারও বাড়তে থাকে। এতে রোগী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে জাতীয় কিডনী ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. হাসিনাতুল জান্নাত বলেন, ‘অ্যালবুমিন একটি অপরিহার্য প্রোটিন উপাদান। যা টিস্যু বা কলাগুলোর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে।’ ‘রক্তক্ষরণকে প্রতিরোধ করে এবং এটি শরীরের মধ্যে তরল, রক্ত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুর স্বাস্থ্যকে বজায় রাখার জন্য সঞ্চালিত হয়। অনেকেই শুধু শরীর ফোলাকে কিডনী রোগ বা কিডনী নষ্ট হওয়ার কারণ বুঝে থাকে। তবে এসব ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ আছে কিডনী নষ্ট হওয়ার।’
কিডনীর রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। সাধারণত দেখা যায়, চিকিৎসায় ৩০-৫০ ভাগ রোগী ভালো থাকেন। আবার অনেকেরই চিকিৎসা না নিলে কিডনীই নষ্ট হয়ে যায়।
★★ কিডনী নষ্ট হয়েছে কি না তা জানার উপায়ঃ
> কিডনী নষ্ট হয়েছে কি না বোঝার জন্য নিয়মিত ফলোআপ করাতে হবে। প্রেসার মাপতে হবে।
> পা ফুলে যাচ্ছে কি না তা লক্ষ্য করুন।
> প্রসাবে সমস্যা বা জ্বালাপোড়া কিংবা প্রসাব কমে যাচ্ছে কি না তা খেয়াল করুন।
> ওজন কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপও কিডনী রোগের কারণ হতে পারে।
> খাবারে অরুচি, বমি ভাব, বারবার বমি হাওয়া কিডনী জনিত সমস্যার কারণে হতে পারে পারে।
> ডায়াবেটিক রোগীদের ইনস্যুলিন চাহিদা কমে যাওয়াও কিডনী রোগের একটি ধাপের লক্ষণ।
★★ কিডনী সুস্থ আছে কি না বা কিডনীতে কোন সমস্যা হয়েছে কি না তা জানার উপায়ঃ
বায়োসপি না করেও প্রাথমিকভাবে ইউরিন আরএমই টেস্ট করে জানা যায় কিডনীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে। এছাড়া এস. ক্রিটিনিন ও এস. বিলুরুবিন টেস্টের মাধ্যমে কিডিনীর সুস্থতা বা অবস্থা সম্পর্কে জানা যেতে পারে। আবার আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমেও জানা যেতে পারে কিডনীর অবস্থা সম্পর্কে। এই টেস্টগুলো যদি স্বাভাবিক থাকে ও প্রেশার স্বাভাবিক থাকে তাহলে বুঝতে হবে কিডনি ভালো আছে।
কিডনীর সমস্যা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হয়। বেশি দেরি হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। আর, কিডনীর সমস্যা দেখা দিলে সাধারণ ব্যক্তি বা অন্যান্য ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে কিডনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। না হলে জীবনের ঝুঁকি হয়ে যাবে।
বর্তমানে মেডিসিন প্রয়োগ, ডায়ালায়সিস, এস্ট্রিম সেল, অপারেশন ও কিডনী প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কিডনী রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আমাদের দেশে।
আরও পড়ুনঃ কিডনী রোগের ৫ টি লক্ষণ ও ১০ টি ভুল ধারনা সম্পর্কে।