বর্তমানে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হচ্ছে প্রচুর মানুষ। খোঁজ নিলে বা পরীক্ষা করালে প্রায় প্রতিটি ঘরেই কাউকে না কাউকে দেখা যাবে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত অথবা আক্রান্তের পর্যায়ে রয়েছে। ফ্যাটি লিভার মারাত্মক একটি রোগ। বাহ্যিক কোন লক্ষণ দেখা না দিলেও এটি ধীরে ধীরে লিভারকে ভিতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। আর লিভার তার কার্যক্ষমতা হারানোর ফলে প্রভাব পড়ে হার্ট বা কিডনীর উপরে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যায় রোগীর।
ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীকে খাবারের মধ্যে অনেক কিছু পরিহার করে চলতে হয়। এমন কিছু খাবার আছে যা অতি দ্রুত রোগীকে ক্ষতির বড় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। এই খাবারগুলোকে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীর জন্য বিষের সাথেও তুলনা করা হয়ে থাকে। কি কি সেই খাবার?
আজকের আলোচনা থাকছে সেই বিষয় নিয়েই।
১. মদ্যপানঃ
ফ্যাটি লিভারের একটি ধরনই রয়েছে মদ্যপানকে কেন্দ্র করে। এক্ষেত্রে বেশি মদ্যপান করলে শরীরে অনেকটা পরিমাণ ক্যালোরি ও ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া প্রবেশ করে। তখন এই অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরের ভিতরে নানা সমস্যা তৈরি করতে থাকে। সেই সমস্যার অন্যতম হচ্ছে ফ্যাট বা চর্বি। আর এই ফ্যাট সবচেয়ে বেশি জমা হয় লিভারে। এছাড়া দেখা যায় মদ্যপানের (Alcohol) কারণে লিভারে প্রদাহের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত ৮০ ভাগের অধিক রোগীর পূর্বের ইতিহাস বা খাদ্য তালিকা নিরীক্ষণ করলে যানা যায় তারা মদ্যপানে অভ্যস্ত। তাই মদ্যপান থেকে সকলকে দূরে থাকতে হবে।
২. ঘি ডালডা ও মাখনঃ
ঘি ও মাখন বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার হয়। এই খাবার স্বাস্থ্যের অন্য উপকারী নয় বা একেবারেই ভালো নয়। কারণ এই খাবারে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বিদ্যমান। স্যাচুরেটেড ফ্যাট লিভারে জমতে হতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই ঘি, মাখন বা ডালডা যতটা সম্ভভ এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষত ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীদের তো এই খাবার স্পর্শ করাই উচিত নয়।
অনেক সময় দেখা যায় মানুষ খাবারে ডালডা মিশিয়ে রান্না করেন। ডালডা মেশানো খাবারের নাকি খেতে ভালো ও সুস্বাদু হয়। ডালডা মিশালে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি পায় এই বিষয়টা কিছুটা হলেও সত্য। তবে ডালডাযুক্ত খাবার খেলে শরীরে খারাপ ফ্যাট জমা হয়। আর এই ফ্যাট থেকে ফ্যাটি লিভার,হার্টে চর্বি জমার মত নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তাই সতর্ক থাকুন। স্বাদের চেয়ে সুস্থতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাবারে ডালডা পরিহার করুন। নাহলে আপনি আক্রান্ত হবেন ফ্যাটি লিভারে৷ আর আগে থেকেই যদি আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে এই খাবার আপনাকে ফেলতে পারে বড় সমস্যায়। এমনকি মৃত্যুর মুখেও।
৩. ভাজা মিষ্টিঃ
প্রিয় খাবারের তালিকায় মিষ্টি নেই এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। মিষ্টি প্রিয় মানুষের মধ্যে অনেকেই ভাজা মিষ্টি (Sweets) খেয়ে থাকেন।এমনিতেই মিষ্টির মধ্যে সুগারের পরিমাণ থাকে প্রচুর। সেই মিষ্টিকে যখন আবার ভাজা হয়, তখন সুগারের পাশাপাশি আরও একটা সমস্যা যুক্ত হয়। সেই সমস্যার নাম তেল। সুগার আর তেল,রি দুই মিলিয়েই তৈরি হয়ে যায় বিক্রিয়া। তাই ফ্যাটি লিভারের রোগীর পাশাপাশি প্রতিটি মানুষেরি ভাজা মিষ্টি থেকে দূরে থাকতে হবে। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগী ভাজা মিষ্টি পরিহার না করলে ফ্যাটের সমস্যা আরও বাড়বে।
৪. কোল্ড ড্রিংকসঃ
গ্রীষ্মকাল। প্রচন্ড গরমে সকলেই কোল্ড ড্রিংকস (Cold Drinks) খেয়ে নিজের প্রাণ জুড়িয়ে নিতে চান। আর গরমে এক বোতল কোল্ড ড্রিংসের স্বাদ যেন অমৃতের চেয়ে কম নয়। সাময়িক তৃপ্তি দিলেও কোল্ড ড্রিংকস খেলে নিজের অজান্তেই শরীরই খারাপ করে ফেলে। এমনকি এক সময় মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী অসুখে ফেলে দিতে পারে এই কোমল পানীয়। কোল্ড ড্রিংকসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুগার। এই মিষ্টি শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমতে সহায়তা করে থাকে। আর এই ফ্যাট ক্ষতি করে আপনার লিভারকে। আবার কোল্ড ড্রিংসে থাকা কার্বনেটের বেভারেজ হাড়ের গঠন নষ্ট করে ভিতর থেকে ভঙ্গুর করে দেয়। তাই এই পানীয় থেকে দূরে থাকা সকল ব্যক্তির জন্যই ভালো। আর ফ্যাটি লিভারের রোগীর জন্য তো এটি নিষিদ্ধ বা হারামের সমতুল্য।
ফ্যাটি লিভার কি, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার কি এই বিষয়ে পূর্বে পোস্ট করা হয়েছে। আসুন নিয়ম অনুযায়ী চলার চেষ্টা করে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করি।
বিঃদ্রঃ পোস্টটি সচেতনতার জন্য করা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শর বিকল্প আর কিছুই নেই।
আরও পড়ুন: সামান্য আঘাতেই প্রাণ নিতে পারে যে রোগ