সিফিলিস নামটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। কিন্তু এই রোগটি আসলে কি বা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কিরুপ প্রভাব ফেলে সেটা আমরা অনেকেই জানি না। আবার এটাও জানি না এই রোগের চিকিৎসা কি বা আদৌ কোন চিকিৎসা আছে কি না। আজ আপনাদের এই রোগ সম্পর্কে এবং এর চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
সিফিলিস রোগ কীঃ
সিফিলিস একটি সংক্রামক রোগ যা মূলত যৌনপথে সংবাহিত হয়। কিছুক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমেও এই রোগটি মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এই রোগটি একজন মানুষের দেহে দীর্ঘসময় সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। অত:পর রোগের জীবাণু ধীরে ধীরে সংক্রমণটির বাহকে পরিণত হয়। উৎসগতভাবে সিফিলিস এক প্রকার ব্যাকটেরিয়াল রোগ।
রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কিঃ
সিফিলিস্কে তিনটি পৃথক পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রতিটি পর্যায়ের নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ আছে।
★প্রাথমিক পর্যায়ের সিফিলিস:
= এটি প্রারম্ভিক পর্যায়। যা সংক্রমণের ৩ মাস অবধি দেখা যায়।
= আক্রান্তের শরীরে ক্ষুদ্র যন্ত্রণাহীন ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এছাড়া অন্য কোন গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয় না।
= কোন হস্তক্ষেপ ছাড়াই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের সিফিলিসের নিরাময় ঘটে বা ঘটতে পারে।
★দ্বিতীয় পর্যায়ের সিফিলিসঃ
= এই পর্যায়ে রোগের উপসর্গ অনেকটা বেড়ে যায়। আক্রান্তের হাতে,পায়ে ও যৌনাঙ্গে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
= সংক্রমণে আক্রান্তের পরে ৬ মাস পর্যন্ত এই পর্যায়টি স্থায়ী হয়।
= আক্রান্তের মধ্যে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা এবং যৌনাঙ্গে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রভৃতি উপসর্গ লক্ষ্য করা যেতে পারে।
★ তৃতীয়/অন্তিম পর্যায়ের সিফিলিসঃ
== এটি এই রোগের শেষ পর্যায়। যেখানে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।
এই পর্যায়ে সবথেকে গুরুতর যে উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে সেগুলি হচ্ছে অন্ধত্ব,পক্ষাঘাত এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা।
চিকিৎসা করা না হলে এই রোগ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে এই রোগ।
এই রোগের প্রধান কারণগুলি কিঃ
সিফিলিসে আক্রান্তের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াটি হচ্ছে ট্রেপোনেমা প্যালিডাম। এই সংক্রমণটি সাধারণত অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। অবৈধ যৌন মিলন অথবা একাধিক ব্যক্তি বা নারীর সাথে যৌন মিলন,যৌন মিলনের পরে পরিষ্কার না হওয়া এই রোগে আক্রান্তের মূল কারণ।
রিসার্চের মাধ্যমে প্রমানিত, সমকামী পুরুষদের সিফিলিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদের তুলনায় সমকামীদের এই রোগে আক্রান্তের হার কয়েক গুণ বেশি।
আক্রান্ত মা থেকে তার সদ্যজাত শিশুর শরীরে এই সংক্রমণ পরিবাহিত হতে পারে। মা থেকে সন্তানের দেহে এই পরিবাহিত পদ্ধতিকে বলা হয় কনজেনিটাল সিফিলিস বা জন্মগত সিফিলিস।
আক্রান্ত ব্যক্তির অনাবৃত ফুসকুড়ি বা ক্ষতের সংস্পর্শে আসলেও এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
সিফিলিস রোগ নির্ণয় পদ্ধতিঃ
এই রোগ পরীক্ষার আগে চিকিৎসক রোগীর থেকে তার যৌন সম্পর্কের ইতিহাস সংগ্রহ করবেন। ত্বক, বিশেষত যৌনাঙ্গের ত্বক পর্যবেক্ষণ করবেন।
যদি উপসর্গ ও পর্যবেক্ষণ সিফিলিস আছে এমনটা ইঙ্গিত করে, তবে রোগীকে রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সিফিলিসের ব্যাকটেরিয়া নির্ণয় করতে শরীরের ক্ষতগুলোও পরীক্ষা করতে হয়।
যদি রোগী সিফিলিসের ৩য় পর্যায়ে (3rd Stage) ভুগছে বলে সন্দেহ করা হয়। তাহলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অবস্থা জানার জন্য দেহের কিছু অংশ বা সম্পূর্ণ দেহ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সুষুম্নাকান্ড থেকে তরল সংগ্রহ করে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এর ফলে জানা যায় রোগটি স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলেছে কিনা।
রোগী সিফিলিস আক্রান্ত এমনটা নিশ্চিতভাবে নির্ণয় হলে আক্রান্তের যৌনসঙ্গীও এই রোগে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সিফিলিসের চিকিৎসা:
প্রাথমিক পর্যায়ে সিফিলিসের জন্য এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। এই এন্টিবায়োটিকগুলো সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। সিফিলিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত পরিচিত একটি এন্টিবায়োটিক হচ্ছে পেনিসিলিন।
তৃতীয় পর্যায়ের সিফিলিসে ব্যাপক চিকিৎসার প্রয়োজন হয় মূলত উপসর্গগুলোর উন্নতির জন্য। কারণ এই পর্যায়ে জীবাণুটিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।
চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর যে কোন যৌন কার্যকলাপ, অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা ভীষণ জরুরী।