ভয়াবহ সমস্যার নাম স্লিপ ডিজঅর্ডার

স্লিপ ডিজঅর্ডার কিঃ

ঘুমানোর সময় অস্বস্তি, ঘুমানোর ছন্দের পরিবর্তন বা ঘুমের সময় বাধা সৃষ্টি ইত্যাদি পরিস্থিতিগুলো স্লিপ ডিজঅর্ডারের সাথে সম্পর্কিত। স্লিপ ডিজঅর্ডারের ফলে রোগীর দিনের বেলা ঘুম পাওয়া এবং রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে না পারার প্রবণতা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কিঃ

স্লিপ ডিজঅর্ডার অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে অনেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এর সাথে জড়িত নিদিষ্ট কিছু সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে–

– ঘুম আসার সময় অসুবিধা সৃষ্টি,

– ঘনঘন বা একবার ঘুম ভাঙার পরে পুনরায় ঘুমানোর চেষ্টায় অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া,

– সারাদিন শরীরে ক্লান্তি ও ঘুমাচ্ছন্নতা অনুভব করা,

– উদ্বিগ্নতা,

– মনোযোগের অভাব,

– অল্পতে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা,

– অবসাদ,

– বিরক্তবোধ।

নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয় পোস্ট পেতে রেজিষ্ট্রেশন করুন নিচের লিংকেঃ

https://roktobondhon.com/registration


রোগের প্রধান কারণ কি কিঃ

বিভিন্ন রোগের কারণে একজন ব্যক্তি স্লিপ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে অন্যাতম–

* মানসিক অবস্থা (দুশ্চিন্তা বা চাপ),

* উদ্বিগ্নতা,

* অবসাদ,

* বাইপোলার ডিজঅর্ডার

* অ্যালার্জি জনিত সমস্যা,

* এডিনয়েডস – গলার লিম্ফনয়েড টিস্যু ফুলে যাওয়া,

* স্লিপ অ্যাপ্নিয়া (ঘুমানোর সময় শ্বাস প্রশ্বাসের গতি কমে আসা বা হঠাৎ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া),

* রাইনাইটিস- অ্যালার্জি বা সংক্রমণের ফলে নাকে সর্দি বা নাক বন্ধ থাকা,

* অ্যালার্জি জনিত কাশি,

* নকটুরিয়া ডায়াবেটিস বা মুত্রথলির সমস্যার কারণে (রাতে বেশি প্রস্রাব পাওয়া,যা ঘুমে অসুবিধা ঘটায়)

* আরথারাইটিস,ফাইব্রোম্যালিঙ্গা ইত্যাদির কারণে দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর ব্যথা,

* রাতে ঘুমানোর আগে ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ব্যবহার বা আসক্তি।

কিভাবে এই রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়ঃ

সাধারণত সম্পুর্ণ চিকিত্‍সাগত ইতিহাস ( previous History of Treatment) স্লিপ ডিজঅর্ডারের সাথে জড়িত অন্তর্নিহিত কারণগুলির ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়। শারীরিক রোগটির সাথে জড়িত কিছু তথ্য অনুসন্ধান, এবং সাথে শারীরিক পরীক্ষা রোগটি নির্ণয় নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এর সাথে জড়িত পরীক্ষাগুলো হচ্ছে–

★ রক্ত পরীক্ষা যেমন সম্পূর্ণ রক্ত গননা (সিবিসি), এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন হার (ইএসআর), সি-রিয়াকটিভ প্রোটিন (সিআরপি), প্রস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ) (পুরুষদের ক্ষেত্রে), রক্তে শর্করার মাত্রা ইত্যাদি উপস্থিত শারীরিক উপাদানগুলি নির্ণয়ে সাহায্য করে।

★ ইইজি (ইলেক্ট্রোয়েন্সফ্যালগ্রাফি) মস্তিষ্কের তড়িৎ সঞ্চালন ও মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে।

★ পলিসনোগ্রাফি বা ঘুমের পর্যবেক্ষণঃ ঘুমানোর সময় শরীরের কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের,এবং অক্সিজেনের মাত্রা নির্ধারণে সাহায্য করে এর সাথে জড়িত রোগগুলোর চিকিৎসা এবং উপসর্গগুলো দূর করতে সহায়তা করে। নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ও পদ্ধতি স্লিপ ডিসঅর্ডার উপশমে সাহায্য করে।

চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

এই চিকিৎসার প্রধান ঔষুধগুলো হচ্ছে – ঘুমের ঔষুধ, উদ্বেগ কমানোর ঔষুধ,অ্যালার্জিনাশক ঔষুধ ইত্যাদি। নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ঘুমাতে সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। নিজে থেকে ঔষধ সেবন রোগীকে আরও বিপদগ্রস্ত করে দিবে।

পরামর্শঃ

সাধারণত মানসিক দুশ্চিন্তা বা মানসিক অসুস্থতার কারণবশত স্লিপ ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে। স্লিপ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলার পাশাপাশি ঔষুধগুলি এর রোগ নিরাময়ে সাহায্য করবে।

জীবনশৈলীর পরিবর্তন –

নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন যেমন বেশি ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত আমাদের। পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় চিনি গ্রহন রোগমুক্তির ক্ষেত্রে ফলদায়ক হবে। ঘুমানোর আগে সীমিত পরিমাণ পানি পান করা শ্রেয়। এটি ঘুমের মাঝে প্রস্রাবের বেগকে কমাতে সাহায্য করবে। সন্ধ্যা বা রাতে ক্যাফেইন, সফট ড্রিংক এবং মদ্যপানের মত পানীয় এড়িয়ে চললে তা সুস্থতার ক্ষেত্রে অপরিহার্য হবে। ঘুমানোর সময় মোবাইল, ল্যাপটপ বা সকল ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে এবং বিছানা থেকে মিনিমার ৫ ফুট দূরত্বে ডিভাইসগুলো সরিয়ে রাখতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *