একজন দুর্ভাগা শিশু মুহিনী ও দুর্লভ এ নেগেটিভ রক্তদাতা মিন্টু ভাই ।

মুহিনি। বয়স মাত্র ৮ বছর। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে অন্যের রক্তে। রাজশাহী থেকে ৪৫ কি.মি দূরের এক গ্রামে তার বসবাস। পিতা এখন ভ্যান চালক। ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন তাতে করেই খেয়ে পড়ে সংসার চলতো তাদের। মুহিনী জন্ম নেওয়ার পরে পরিবারে খুশির বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু সেই খুশি মাত্র কয়েকদিনের জন্যই স্থায়ী হয়। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই খুশি পরিবর্তন হয়ে যায় আজীবনের কষ্টে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুহিনীকে নিয়ে আসা হয় রাজশাহীতে। ডাক্তার পরীক্ষা করে যা জানান তাতে তার বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের কপালে আজীবনের জন্য দুঃখ ও কষ্টের ছাপ নেমে আসে। ডাক্তার জানান মুহিনী থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। অর্থাৎ, তার শরীরে রক্ত উৎপন্ন হয় না। যতদিন বাঁচবে, প্রতি মাসে অন্যের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে মুহিনীকে। রক্ত না পেলে অসুস্থতা বাড়বে ও দ্রুতই মারা যাবে সে।
একে তো অসহায় ও গরীব পরিবার এর উপর এত বড় একটি আসুখের কথা বাবা-মাকে চিন্তিত করে ফেলে। তার থেকেও শকিং বিষয় হচ্ছে মুহিনীর রক্তের গ্রুপ অতি রেয়ার। এ নেগেটিভ রক্ত প্রবহমান তার শরীরে। বাবা-মা প্রথমে বুঝতে না পারলেও ধীরে ধীরে বুঝে যায় এই রক্ত খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। দারিদ্র্যতার মধ্যেও পিতা-মাতা চায় আদরের সন্তান বেঁচে থাকুক। দারিদ্র্যতার জন্য সন্তানকে ছুড়ে ফেলে দেয় নি রাস্তায়। এমনকি কোন অনাথাশ্রমেও সন্তানকে ফেলে আসে নি। প্রতি মাসে এক ব্যাগ দুর্লভ এ নেগেটিভ রক্তের জন্য মুহিনীর বাবা হণ্যে হয়ে ছুটে বেড়ায় এখানে ওখানে। কল করে রক্তদাতা চেয়ে বেড়ায় এর ওর কাছে। কোন মাসে রক্তদাতা পায়, আবার কখনও হতাশার সাগরে ডুবে থেকে অসহায় অসুস্থ সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। তেমনই এই মাসে রক্তের প্রয়োজনে মুহিনীর জন্য রক্তদাতা খুঁজছিলেন মুহিনীর বাবা। কিন্তু কোথাও রক্ত বা রক্তদাতা পাচ্ছিলেন না। অবশেষে নিরুপায় হয়ে রাজশাহী ব্লাড ব্যাংক এন্ড ট্রান্সফিউশান সেন্টারের টেকনোলজিস্ট আব্দুল মোতালেব ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেন মুহিনীর বাবা। বিষয়টি আমাকে জানানো হলে যোগাযোগ করি রক্তদাতা মিন্টু ভাইয়ের সাথে। মিন্টু ভাই ০৪ই আগস্ট ২০২১ এ রক্তদানের মাধ্যমে মুহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ভাইকে মুহিনীর রক্ত প্রয়োজন এটা বলা হলে রক্তদানে রাজি হয়ে যান এবং জুম্মার নামার আদায় শেষে রক্তদানের মাধ্যমে ২য় বার মুহিনীকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করেন।
থ্যালাসেমিয়া রোগীর সাধারণ চিকিৎসা নেই। তবে এটি প্রতিরোধ সম্ভব।
বিয়ের আগে স্বামী-স্ত্রীর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়েই থ্যালাসেমিয়া জীবাণুর বাহক হয়ে থাকে তবে বিয়ে না করে বা সন্তান না নিয়ে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব। তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে তবেই বিয়ে করুন। নাহলে আপনাকেও হয়তো মুহিনীর বাবার মত প্রতিমাসে রক্তদাতা ও অর্থ সংগ্রহের জন্য হণ্যে হয়ে থাকতে হবে। এক সাগর পরিমাণ কষ্ট আর হতাশা নিয়ে অসুস্থ সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। আর মুহিনীর মত হয়তো আপনার সন্তানকেও বেঁচে থাকতে হবে বা বেঁচে থাকার লড়াই করতে হবে অন্যের রক্ত নিয়ে।

★★ অসহায় রোগীকে রক্তদান করতে বা রক্তের প্রয়োজনে রক্তদাতা খুঁজে পেতে রেজিষ্ট্রেশন করুন আমার ওয়েবসাইটে। রেজিষ্ট্রেশন করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।                                                                  https://roktobondhon.com

 

-Rumel Rahman

roktobondhon.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *