শীত আসতেই পায়ের পেশিতে বা রগে টান ধরার ঘটনা বেড়ে যায়। ঘুমের মধ্যেই বেশিরভাগ মানুষের পায়ের পেশি বা রগে টান ধরে। আবার ঘুম থেকে উঠতে গেলে কিংবা সকালে হাঁটা শুরু করতেই পায়ের শিরায় টান ধরতে পারে। কখনো আবার হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই বেঁকে যায় পায়ের আঙুল। হাতের ও কোমরের পেশীতেও একইভাবে টান ধরতে পারে। আর শিরায় টান ধরলে থাকে অনেকক্ষণ অসহ্য যন্ত্রণা।
এর কারণ কী?
আসলে এই টান ধরার কারণ হলো ডিহাইড্রেশন। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে পেশীতে টান ধরার প্রবণতা বেড়ে যায়। লক্ষ্য করে দেখবেন, শীত আসতেই আমাদের পানি খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। যার ফলে ঘাটতি স্থিতিস্থাপকতায় ঘাটতি পড়ে। আর এতেই শিরায় টান ধরা বা ক্রাম্পের প্রবণতা বাড়ে। এই কারণ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে পায়ের রগে টান ধরতে পারে।
★ আর কি কি কারণে পেশিতে টান ধরতে পারেঃ
শরীরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতির কারণেও পেশিতে টান ধরে থাকে। অতিরিক্ত ব্যায়াম, পরিশ্রম বা পায়ের পেশির বেশি ব্যবহার পেশির টান ধরার অন্যতম কারণ। পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন, খুব ঠান্ডা আবহাওয়া ইত্যাদি এর অন্যতম কারণ। আবার গর্ভকালীন সময় বিশেষ করে শেষের দিকে প্রয়োজনীয় খনিজের অভাবে রগে ও পেশিতে টান ধরে থাকে। শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা, এক ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, বেশি সময় নিচে বসে থাকা, ঘুমের সময় ভুল দেহভঙ্গির কারণেও পেশিতে টান ধরতে পারে।
হঠাৎ পায়ের রগে টান ধরলে ঘরোয়া উপায়েই তা সারিয়ে তুলতে পারবেন। এসব উপায়ে যদি না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। হাত-পায়ের পেশী অথবা আঙুল বা কোমরে ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে আক্রান্ত স্থানে ও তার চারপাশে আঙুলের চাপ দিয়ে মাসাজ করুন। এমনভাবে মাসাজ করতে হবে যার ফলে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। পায়ে ক্র্যাম্পের ক্ষেত্রে হালকা করে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে স্ট্রেচিং করুন। অন্য কোনো ব্যায়াম এ সময় না করাই ভালো। কারণ অতিরিক্ত চাপে পেশি বা টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। থাইয়ের পেশীতে টান লাগলে জায়গাটা নরম করে একটি শক্ত কিছুতে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। টান ধরা পাশে কোমর অবধি ধীরে ধীরে টানটান করুন। হট ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন টান ধরার জায়গায়। ১০ সেকেন্ড রাখার পর টান লাগা বা ব্যথার জায়গায় বরফের সেক দিতে পারেন। আবার ১০ সেকেন্ড পর হট ব্যাগের মাধ্যমে সেক দেন। এভাবে ঠান্ডা ও গরম সেঁক দিলে ব্যথা কমতে শুরু করবে। হঠাৎ পায়ে টান ধরলে শক্ত কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এতে টান ধরা জায়গায় চাপ পড়তে পারে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
★★পায়ে টান ধরা ব্যথা কমাতে যে সকল খাবার খাবেনঃ
সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করুন। শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে ডাবের পানি, গ্লুকোজ বা লেবু পানিও পান করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরীরে পানির ঘাটতির জন্যই এমনটি হয়। পটাশিয়ামের সেরা উৎস হলো কলা। পটাশিয়াম কার্বন ভাঙতে এবং পেশির গঠনে সাহায্য করে। তাই কলা এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী খাবার হতে পারে। পটাশিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। কলার পাশাপাশি মিষ্টি আলুও খেতে পারেন। রাঙা আলু পটাশিয়ামের আরেকটি ভালো উৎস। এ ছাড়াও মিষ্টি আলুতে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম আছে। সাধারণ আলু ও কুমড়া শরীরে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামের জোগান দিয়ে থাকে। শীতকালে শিম ও মটরশুঁটি শরীরে প্রোটিন ও ম্যাগনেশিয়ামের জোগান বাড়িয়ে থাকে। এ ছাড়াও শিমের কালো বীজ খেতে পারেন। শিমের বীজে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে। আসুন সবাই কিছু জানি, নিয়ম মেনে সুস্থ থাকি।