হিট স্ট্রোক থেকে যে খাবারগুলো আপনাকে বাঁচাতে পারে

আসছে রমজান মাস। সাথে এসে পড়েছে গ্রীষ্মকালও। আর এই গরমে পানিশূন্যতার কারণে বেড়ে যায় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি। আর সারাদিন রোযা থাকায় পানি পান না করার কারণে শরীরে দেখা দিতে পারে পানির অভাব। এ সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় শরীরে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। এ কারণে যে কোন স্থানে যে কোন সময় যে কোন ব্যক্তি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। তাই, এই গরমে যেন দেহে পানি শুণ্যতা দেখা না দেয় সেদিকে রাখতে হবে বিশেষ নজর। ইফতারের পর থেকে রাতে পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণে পানি বা পানি জাতীয় খাবার। 

একদিকে প্রচণ্ড গরমের দাবদাহ, অন্যদিকে শুষ্ক আবহাওয়ায় অনেকেরই অতিরিক্ত ঘাম হয়। আর এই অতিরিক্ত ঘামের কারণেই শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। আর পর্যাপ্ত পানি বা পানীয় পান না করার কারণে শরীরে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা। আর এই পানি শূন্যতা থেকে হতে পারে হিট স্ট্রোক। যার প্রভাবে ঘটতে পারে মৃত্যু পর্যন্তও।

এ বিষয়ে পুষ্টিবিদরা বলেন, এসব সমস্যার সূত্রপাত ঘটে শরীরে পানির ঘাটতির কারণেই। সূর্যের তাপ, গরম বাতাস, নিঃশ্বাস, ঘাম, প্রস্রাব ইত্যাদির কারণে শরীর হয়ে পড়ে পানিশূন্য। যখন শরীরে এই পানির ঘাটতি শুরু হয় তখনই দেখা দেয় ডিহাইড্রেশনের সমস্যা।

এছাড়া গরমে ঘাম হলে শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ঘাটতি তৈরী হয়। এখান থেকেও হতে পারে বিপত্তি। এক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু খাবার রাখা জরুরী। এসব খাবার শরীরে পানির ঘাটতি মিটবে আবার শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সহায়তা করে। সাথে দেহে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের সঠিক মাত্রাও বজায় থাকবে। এ বিষয়ে পুষ্টিবিগগণ বেশ কিছু খাবার রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ডাবের পানিঃ

গরমে ডাবের পানি পানের বিকল্প নেই। এই পানীয় পেট ঠান্ডা রাখতে বেশ সহায়ক। এছাড়া ডাবের পানি পান করলে শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে।

এবং দ্রুত শরীরে এনার্জি ফিরিয়ে আছে।

পানিশূন্যতা রোধে ডাবের বিকল্প নেই।

কাঁচা আমঃ

আর কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে কাঁচা আম। এই ফল শরীর থেকে টক্সিন পদার্থগুলো বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে।

গরমের দিনে এই ফল খেলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাবে। এ সময় লবণ দিয়ে কাঁচা আম খেতে পারেন। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের লবণ পরিহার করাই উত্তম। তাছাড়া কাঁচা আম পোড়া, শরবত কিংবা কাঁচা আমের জুস ও চাটনিও শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

কাঁচা আম গরম থেকে রক্ষা করতে বেশ কার্যকরী।
লাউঃ

লাউও শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। তবে রান্না করা লাউয়ের তুলনায় কাঁচা লাউয়ের রসে উপকারিতা অনেক বেশি। লাউ ব্লেন্ড করে এর রসে সামান্য লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এই পানীয় শরীরকে বেশ ঠান্ডা রাখে এবং শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে।

তরমুজঃ

গরমের ফল তরমুজে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, সি এবং ভিটামিন বি। এছাড়াও এই ফলে রয়েছে লাইকোপেন ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। আর এসব উপাদানের উপকারিতা কিন্তু বিশাল। গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমায় আর উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও বেশ সাহায়তা করে।

গরমে বেশি বেশি তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করুন।

তরমুজে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম আর প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে এর মাঝে। গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, তরমুজে থাকা উপাদান লাইকোপেন মানবদেহের কয়েক ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে।
তরমুজে ৯২ ভাগই পানি। তাই শরীরকে ঠান্ডা করতে এবং পানিশূন্যতা কমাতে তরমুজ অতুলনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্যাফেইনের তুলনায় তরমুজ অনেক গুণ বেশি উপকারী। তাই ক্যাফেইন পান কমিয়ে বেশি বেশি তরমুজ খাওয়া উচিত।

মুগ ডালঃ

গরমের এ সময় খিদে পেলে বিকেলের স্ন্যাকসে অঙ্কুরিত মুগ ডালের সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। এতে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম। আবার শরীরের তাপমাত্রাও বাড়ে না, এটি পেট ঠান্ডা রাখে এবং শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রাও বজায় রাখে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক পোস্ট পেতে রেজিষ্ট্রেশন করুন নিচের লিংকেঃ


https://roktobondhon.com/registration


বেল বা বেলের শরবতঃ

বেল খুবই উপকারী একটি খাদ্য। বেল শরীর ঠান্ডা রাখতে বেশ সহায়তা করে। দুপুরে বেলের শরবত পান করতে পারেন। পারতপক্ষে শরবতে চিনি পরিহার করার চেষ্টা করুন। কারণ চিনি উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি করে থাকে।

তেঁতুলঃ

গরম থেকে মুক্তি পেতে তেঁতুল খুবই ভালো একটি খাবার। গরমে কাজ করতে হলে এক গ্লাস পানিতে কিছু পরিমাণে তেঁতুল গুলিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। দেখবেন শরীরে গরমের তাপ কম লাগছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে তেঁতুলের জুড়ি মেলা ভার। আর রক্তচাপ কম থাকলে শরীরে গরমের অনুভূতিও কম থাকে। তবে যাদের লো প্রেশার বা নিন্ম রক্তচাপ আছে তারা এই খাবারটি এড়িয়ে চলবেন।

টক দইঃ

টক দই খুবই উপকরী একটি খাদ্য। এজন্য খাওয়ার পর নিয়মিত টকদই খাওয়ার অভ্যাস করুন। আবার দইয়ের ঘোল কিংবা লাচ্ছিও খেতে পারে। টকদই খেলে হজম ভালো হবে, আর শরীরে পানির চাহিদাও মিটবে। টক দই শরীরের জন্য উপকারী ব্যক্টেরিয়ার তৈরি করতে সহায়তা করেন।

শসাঃ

শসা শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য খুবই ভালো একটি খাবার। এটি শরীরের চর্বি কাটতে বেশ সহায়তা করে। তাই গরম থেকে বাঁচতে এই খাবারটিও আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।

এছাড়াও লেবু বা লেবুর শরবত, কদবেল, আমড়াসহ ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খেতে পারেন। ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী খাদ্য। সাথে পানিশূন্যতা দূর করতে স্যালাইন বা গ্লুকোজ পান করতে পারেন। তবে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি স্যালাইন পান থেকে এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত গ্লুকোজ পান করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

আসুন এই গরমে বেশি বেশি পানি বা পানি জাতীয় খাবার গ্রহণের মাধ্যমে হিট স্ট্রোক থেকে নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যকে বাঁচাতে সহায়তা করি।

আরও পড়ুনঃ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কি। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *