স্তন ক্যান্সার কি?

ক্যান্সার শব্দটার সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সঠিক সময়ে ক্যান্সার নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা না গেলে এর প্রকোপে মৃত্যু নিশ্চিত। ক্যান্সার দেহের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। আবার এমনটাও বলা যেতে পারে, দেহের যে কোনো স্থানে ক্যান্সার হতে পারে। এই ক্যান্সার নানা ধরণের হতে পারে। তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে স্তন ক্যান্সার। আমাদের অজান্তেই শরীরের মধ্যে এই ক্যান্সার বৃদ্ধি পেতে থাকে। কেন বা কি কি কারণে এই ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে বা এই রোগের প্রধান কারণ কি সেই সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অসচেতন।

যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে অধিকাংশ রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব।
প্রায় সকল ধরণের ক্যান্সারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শরীরে কোষের অস্বাভাবিকতা, কোষের অনিয়মিত বৃদ্ধি এবং কোষের বিভাজন। আর ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যার ফলে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
স্তন ক্যান্সারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরাই আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদেরও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। সংখ্যা অল্প হলেও বেশি বয়সের পুরুষকে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আর নারীদের ক্ষেত্রে যে কোনো বয়সে এই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। মধ্য বয়সী এবং কম বয়সী নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেশি।

কিভাবে স্তন ক্যান্সার হয়ঃ

Fatty, Fibrous এবং Glandular কোষের (কলা) সমষ্টি দ্বারা স্তন গঠিত হয়। মানুষের স্তনের মধ্যে থাকা এই কোষসমূহ বা যে কোনো একটি কোষ যদি হটাৎ অস্বাভাবিক বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়, তখনই স্তন ক্যান্সারের উৎপত্তি হয়। স্তনে থাকা বিভিন্ন কোষগুলোর মধ্যে যে কোনো কোষের দ্বারাই এই ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। তবে মাতৃ দুগ্ধ উৎপাদনকারী কোষের ( Milk Ducts) এর আস্তরণ-কারী কোষ এবং Lobules -এ এই ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। আর পুরুষের এই কোষ থাকে না বলেই নারীরা এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।
স্তনের মধ্যে থাকা কোষগুলো অতিরিক্ত বেড়ে ওঠার সাথে সাথে স্তন ও স্তনের আশেপাশের অঙ্গগুলোতে ক্যান্সারের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন হতে থাকে। স্তনের ভিতরের মাংসল পিন্ডের (Lump) আকার অনুভূত হয়। যা অনেকটা চাকতির মত এবং শক্ত অনুভূত হয়। তবে এমনটা অনুভূত হলেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। কারণ স্তনে পিন্ডের মত আকার বা চাকতি অনুভূত হলেই যে তা ক্যান্সার এমনটা নয়। এই চাকতি একটি সাধারণ টিউমারও হতে পারে। তবে চাকতি বা শক্ত অনুভব করলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে নিশ্চিত হতে হবে এটি ক্যান্সার, টিউমার নাকি অন্য কিছু।
মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (malignant tumor) থেকেই মারাত্মক ক্যান্সার তৈরি হয়। ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার রক্ত ও লসিকা (Lymph) বাহিকার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর ছড়িয়ে পড়লে এই অবস্থাকে বলা হয় Metastasized.

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণঃ

কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে। ল্যাবে পরীক্ষা না করে স্তন ক্যান্সার সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তবে বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা দিলে নিজেকে সচেতন হতে হবে। আর ঘরোয়া ভাবে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন রাখতে পারেন। সম্ভাব্য লক্ষণগুলো হচ্ছে–
★ স্তনের কোনো কোনো অংশ ফুলে যাওয়া,
★ স্তনের আকার বা আকৃতির অস্বাভাবিক পরিবর্তন,
★ স্তন বা স্তন বৃন্ততে (বোঁটায়) ব্যথা অন্যভব হওয়া,
★ স্তনের বোঁটা বা ত্বক লালচে এবং শুষ্ক হয়ে যাওয়া,
★ স্তনের অভ্যন্তরে কোনো পিন্ডের অস্বিত্ব অনুভব করা,
★ স্তনের কোনো অংশ ভিতরে ঢুকে যাওয়া,
★ বাহুর নিচে বা কন্ঠার হাড়ের কাছে ফোলা অনুভব করা,
★ স্তন ভারি অনুভব করা এবং অস্বস্তি হওয়া,
★ স্তন থেকে সাদা তরল (স্রাব) অথবা রক্ত মিশ্রিত তরল বের হওয়া।

স্তন ক্যান্সারের কারণঃ

স্তন ক্যান্সারের সঠিক কারন কি তা এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারে নি। তবে বেশ কিছু রোগীকে পর্যালোচনা করে ক্যান্সারের সম্ভাব্য কিছু কারণ অনুধাবন করা গেছে। আর সেগুলো হচ্ছে-
★ জেনেটিক্স বা বংশগত ইতিহাস,
★ ৫০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবণা সবচেয়ে বেশি। ৩০-৫০ এই বয়সের নারীদেরও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে।
★ নিয়মিত ধুমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান,
★ তেজস্ক্রিয় বিকিরণ,
★ হরমোন থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,
★ শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি হওয়া,
★ স্তনে পূর্বে পাওয়া আঘাত,
★ স্তনে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ (স্বামী/বয়ফ্রেন্ড বা কোনো পুরুষ কর্তৃক সেক্সের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ)
★ মিলনের পরে দ্রুত এবং ভালোভাবে পরিষ্কার না হওয়া,
★ ছোট বা টাইট অন্তর্বাস পরিধান করা। আবার ঢিলা ব্রা পরিধানও স্তনের আকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

স্তন ক্যান্সারের প্রকারভেদঃ

স্তন ক্যান্সার কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে-
Infiltrating (invasive) Ductal Carcinoma:
এই ধরনের ক্যান্সার অত্যন্ত সাধারণ বা সবচেয়ে বেশি নারী এই ক্যান্সারে আক্রান্য হয়। Infiltrating Ductal Carcinoma এর সূচনা হয় স্তনের দুগ্ধ নালী থেকে নালীর গাত্র ভেদ করে এই ক্যান্সার ধীরে ধীরে স্তনের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
Ductal Carcinoma in Situ:
এই ধরনের ক্যান্সারকে লেভেল জিরো বা প্রি-ক্যান্সারাস পর্যায় বলা হয়। ক্যান্সারের এই অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে এবং সঠিক নিয়ম মেনে চললে সফলভাবে এই ক্যান্সারকে নির্মূল করা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে অবশ্যই সময়মতো এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে তবেই এই পর্যায়ের ক্যান্সার নির্মূল করা সম্ভব। সঠিক সময়ে নির্ভুল চিকিৎসা করা না হলে চিকিৎসায় সফলতা পাওয়া যাবে না।
Infiltrating (Invasive) Lobular Carcinoma:
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের অন্তত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নারীর শরীরে এই ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া যায়। অর্থাৎ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ১০০ জন নারীর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন নারী এই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত। এর ধরনের ক্যান্সারের উৎপত্তি স্তনে দুধ উৎপাদ করে এমন কোষগুলোতে (Lobules) হয়ে থাকে।
Lobular Carcinoma in Situ:
এই ধরণের ক্যান্সারকেও প্রি-ক্যান্সারাস হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এই ধরনের ক্যান্সার ম্যালিগন্যান্ট স্তন ক্যান্সারে রুপান্তর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর এইজন্য Lobular ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ম্যামোগ্রাম বা ম্যামোগ্রামের অনুরুপ FNAC টেস্ট করতে হয়। কারণ এই ক্যান্সার ম্যালিগন্যান্ট স্তন ক্যান্সারে রুপান্তর হলে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। এবং রোগীর চিকিৎসাও কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।
Triple Negative Breast Cancer:
স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ১৫ শতাংশ নারীদের দেহে এই ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া যায়। এই ধরণের ক্যান্সার নির্ণয় করা এবং এর চিকিৎসা করানো অত্যন্ত দুরোহ এবং ব্যয়বহুল। আর এই ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু অনেকটাই নিশ্চিত।
এই ৫ ধরণের স্তন ক্যান্সার ছাড়াও আরও দুই ধরণের স্তন ক্যান্সার রয়েছে। এগুলো হচ্ছে Inflammatory Breast Cancer এবং Paget’s Disease of the Breast.
এই দুই ধরনের ক্যান্সার প্রধানত স্তনের ত্বকে প্রভাব বিস্তার করে থাকে এবং ত্বকের ক্ষতি সাধন করে।

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের উপায়ঃ

স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আধুনিক ও উন্নত কিছু পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এসব পদ্ধতি হচ্ছে-
★ ম্যামোগ্রামঃ
ম্যামোগ্রাম হচ্ছে এক ধরণের এক্স-রে। এর মাধ্যমে স্তনের আকার এবং গঠনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন সহজেই নির্ণয় করা যায়। এই পরীক্ষা কোনো রকম ক্ষত সৃষ্টি করে না। পাশাশি প্রাথমিক পর্যায়ের স্তন ক্যান্সারও ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে ধরা যায়।
★ আল্ট্রাসনোগ্রামঃ
সাউন্ড রেডিয়েশন বা শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে স্তনের অভ্যন্তরের সকল কোষের ছবি তোলা যায়। এর ফলে কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন থাকলে তা দেখা যায়।
★ পি-টি-ই স্ক্যানঃ
এই টেস্টে DYE নামক বিশেষ রঞ্জকের ব্যবহার করে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলোকে রঞ্জিত করে দেখানো হয়। স্ক্যানের সময় বিশেষভাবে এই রঞ্জিত কোষগুলো সহজেই ধরা পড়ে। আর এই টেস্টের মাধ্যমে ক্যান্সার বৃদ্ধির হার বা কত দ্রুত ক্যান্সার ছড়িয়ে যাচ্ছে সেই সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা পারয়া যায়।
★ এম. আর আইঃ
ম্যাগনেটিক এবং রেডিয়েশন তরঙ্গের মাধ্যমে করা বিশেষ টেস্টকে বলা হয় এম. আর. আই। এই টেস্টের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত সকল কোষকে নির্ধারণ করা যায়।

স্তন ক্যান্সার কত দিনে ছড়ায়ঃ

রোগের ক্ষতিকারক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে স্তন ক্যান্সারকে ৫টি স্তর বা স্টেজে ভাগ করা হয়। এই স্টেজগুলো হচ্ছে-
Stage 0, Stage 1, Stage 2, Stage 3 আর Stage 4.
মনে রাখতে হবে, প্রতি ১৮০ দিনে বা প্রায় ৬ মাসের মধ্যে স্তন ক্যান্সার এক স্টেজ থেকে অন্য স্টেজে পৌঁছে যেতে পারে। এজন্য স্তনের আকার এবং গঠনের পরিবর্তন খুব ভালো আর নির্ভুলভাবে পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভুন পরীক্ষার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়েই নিশ্চিত হয়ে সতর্ক হওয়া যায় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলাও সম্ভব হয়।
Stage 0:
এই স্টেজের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো আক্রমণাত্মক হয় না। যার কারণে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো স্তনের মধ্যে এবং দেহের বিভিন্ন স্থানে ছড়ায় না। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
Stage 1:
এই স্টেজের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলো আশেপাশের সুস্থ কোষগুলোকে আক্রমণ করতে শুরু করে। এতে করে ক্যান্সারের জীবাণু এক কোষ থেকে অন্য কোষে ছড়িয়ে যেতে থাকে। ফলে স্তনের ভিতর থেকে শুরু করে দেহের বিভিন্ন স্থানে ক্যান্সার ছড়িয়ে যায়।
Stage 2:
সাধারণত চাকতি বা পিন্ডের আকার এই সময় ২ সেন্টিমিটার এর থেকে ছোট থাকে, এবং বৃদ্ধি পেতে পেতে এই পিন্ড ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
Stage 3:
এই স্টেজে ক্যান্সার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। লসিকা-বাহু পর্যন্ত ক্যান্সারের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে, এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষগুলোও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ার এই পর্যায় ও প্রক্রিয়াকে Locally Advanced Breast Cancer ও বলা হয়। এই পর্যায়ে কেমো থেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি রোগীর দেহে কাজ করবে এমনটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভন নয়।
Stage 4:
এই স্টেজকে সর্বশেষ বা অন্তিম পর্যায় বলা হয়। এই পর্যায়ের রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ এই পর্যায়ে অপারেশন, কেমো থেরাপি, রেডিও থেরাপি বা আরও উন্নত চিকিৎসা দিয়েও সুস্থ করা সম্ভব নয়। কারণ এই স্টেজে এসব কোনো চিকিৎসাই রোগীর দেহে সফলভাবে কাজ করবে না। এই স্টেজে ক্যান্সার খুব দ্রুত দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়াতে থাকে এবং হাড়, লিভার, ফুসফুস এবং ব্রেনে ক্যান্সার ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যার ফলে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত। আর এই স্টেজের রোগী আগামীকাল বেঁচে থাকবে এই কথাটিও বলা সম্ভব নয়।
সব মানুষের দেহে ক্যান্সার বৃদ্ধির হার একই রকম এমনটা নয়। ক্যান্সার কত দ্রুত ছড়াবে, ক্যান্সারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে নাকি কমবে তা মানুষের ইমিউনিটি ক্ষমতা, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

স্তন ক্যান্সার প্রতিকারের উপায়ঃ

ক্যান্সারে যে কোনো মানুষ যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে। তবে নিয়ম মাফিক জীবন-যাপন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।
স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা এড়িয়ে যাওয়াত বিশেষ কিছু উপায় হচ্ছে–
১. শরীরের ওজন স্বাস্থ্যকর স্তরে ধরে রাখতে হবে। অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান এবং অতিরিক্ত চিকন উভয়ই মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ। মেদ বাহুল্যতা বর্জন করে নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। আবার যোগ ব্যায়ামও করা যেতে পারে। এতে করে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা যাবে।
২. মদ্যপান ত্যাগ বা সীমিত করতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৩. সকল প্রকার তামাক জাতীয় পদার্থের নেশা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
৪. শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এতে করে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ কমে যাবে। বর্তমান সময়ে নিজের ফিগার মেইনটেই করতে বা স্তন ঝুলে যাওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে অধিকাংশ মা নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ায় না। এতে করে শুধু শিশুরই ক্ষতি হয় না, স্তনে দুধ জমে থাকায় স্তন ভারি ও চাপে থাকায় সেখান থেকে নারীরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। এবং অস্বাভাবিক হারে এই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনটা নয় যে, সাথে সাথে নারীর দেহে স্তন ক্যান্সার দেখা দিবে। ধীরে ধীরে চাকতি, টিউমার আর সেখান থেকে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে।
. পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি সীমিত রাখার চেষ্টা করতে হবে বা সম্ভভ হলে একদম বন্ধ করে দিতে হবে।
৬. মিলনের সময় পার্টনার যেন স্তনে খুব জোরে চাপ বা বল প্রয়োগ না করে সেই বিষয়ে তাকে সচেতন করতে হবে। আবার উত্তেজনায় যেন স্তনে বা বোঁটায় জোরে কামড় না দেয় সেই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আর মিলন শেষে যত দ্রুত সম্ভব গোসলের মাধ্যমে নিজেকে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৭. এক্সিডেন্ট বা কোনো কারণে স্তনে গুরুতর আঘাত পেলে দেরি না করে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে তাকে অবহিত করতে হবে। যদি স্তনের কোনো চিকিৎসা নিতে ডাক্তাদের কাছে যায় এবং আঘাত প্রাপ্তির পূর্ব ইতিহাস থাকে তা ডাক্তারকে

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর খাবারঃ

মূলত নিজের ইমিউনিটি স্বাভাবিক রাখতে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। কারণ ইমিউনিটি স্বাভাবিক থাকলে রোগী দ্রুত সুস্থ হতে পারবে বা ক্যান্সারের জীবাণু ধীরে ধীরে ছড়াবে। আর ইমিউনিটি কম হলে ক্যান্সার দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করে দিবে। যে সকল খাবার গ্রহণ করতে হবে–
★ প্রচুর পরিমাণে তাজা শাক-সবজি ও ফল খেতে হবে।
★ সুষম খাবার খেতে হবে।
★ শরীরে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের জোগান নিশ্চিত করতে হবে।
★ প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে প্রতিদিন যেন মিনিমাম ৩-৪ লিটার পানি যেন পান করা হয়।
★ টাইট বা ঢিল অন্তর্বাস পড়া যাবে না। মাপ অনুযায়ী সাবলীল অন্তর্বাস পরিধান করতে হবে।
যদিও ৫০ বছরেএ বেশি বয়স এমন মহিলাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়, তবে এই মরণব্যাধিতে যে কোনো বয়সেই মেয়েরা আক্রান্ত হতে পারে। তাই নিয়মিত স্তনের দিকে নজর রাখুন। যদি স্তন ক্যান্সারের কোনো একটি লক্ষণ নিজের বা পরিবারের মাঝে দেখে থাকেন, এবং এই লক্ষণ ৭ থেকে ১০ দিন বা তার বেশি থাকে তাহলে দেরি না করে ১০ দিন পার হলেই একজন অভিজ্ঞ মহিলা বিষয়ক চিকিৎকের স্মরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
নিজেনিজে সচেতন হোন এবং পরিবারের সদস্যদের স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে করুন। আপনার একটি পদক্ষেপ আপনার বা আপনার পরিবারের মা-বোনকে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধি থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

আরও পড়ুন: জরায়ু টিউমার মানেই কি ক্যান্সার? 

1 thought on “স্তন ক্যান্সার কি?”

  1. Pingback: জরায়ু ক্যান্সার, বছরে প্রাণ ঝরায় ৩ লক্ষ নারীর - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *