ভিটামিন-ডি এর অভাবে শিশুদের যে রোগ হয় তাকে বলা হয় রিকেট। আর এই একই ভিটামিনের অভাব যখন বড়দের দেখা যায়, তখন এই রোগকে বলা হয় অস্টিওম্যালেসিয়া।
অস্টিওম্যালেসিয়া বলতে মানব শরীরের হাড় নরম হয়ে যাওয়াকে বোঝানো হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব বা স্বল্পতা। অর্থাৎ এই রোগটি ভিটামিন-ডি এর অভাবে হয়ে থাকে।
ভিটামিন-ডি এর অভাবে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ঠিকমত হাড় গঠন করতে পারে না। আর হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কম থাকলে তা হাড়কে নরম আকারে পরিণত করে দেয়।
কি কি কারণে রিকেট বা অস্টিওম্যালেসিয়া হয়ঃ
১) ভিটামিন-ডি এর অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া বা রিকেট হয়। আমাদের জানতে হবে শরীরে ভিটামিন-ডি স্বল্পতা কেন ঘটে?
ভিটামিন-ডি’র অভাবের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে,
★ খাদ্যে ভিটামিন-ডি উপাদান না থাকা। অর্থাৎ, ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার না খাওয়া,
★ শরীরের চামড়ায় নিয়মিত ভিটামিন-ডি তৈরি না হওয়া। অর্থাৎ শরীরে রোদ না লাগানো, কোন কারণে অন্ত্র থেকে ভিটামিন-ডি শরীরে প্রবেশ না করা, যেমনঃ পাকস্থলীর অপারেশন, অন্ত্রের অপারেশন, সিলিয়াক ডিজিজ যকৃতের অসুখ, ইত্যাদি।
২) শরীরের বিপাকক্রিয়ায় কোন সমস্যা দেখা দিলে অভাব হতে পারে ভিটামিন-ডি’র। বিপাকক্রিয়ায় সমস্যা বলতে, রেনাল ফেইলিউর, রেনাল অস্টিওডিস্টোপি ও কিছু ঔষুধ, যেমনঃ এন্টিকনভালসেন্ট, রিফামপিসিন এবং সিডেটিব বা ঘুমের ঔষুধ সেবন করলে,
৩ ) রক্তে ফসফেটের পরিমাণ কমে গেলে যে কোন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগের লক্ষণঃ
১. শরীরের হাড়ের মধ্যে অস্বস্থি ভাব, পিঠে ও কোমরে ব্যথা অনুভব।
২. মাংসপেশির দুর্বলতা, যা প্রায়ই দেখা যায়।
৩. অনেক সময় রোগী দুর্বলতার কারণে হাঁসের মতো থপ থপ করে হাঁটে।
৪. রোগী সাধারণত উপরের দিকে উঠতে অর্থাৎ সিঁডি বেয়ে উপরে উঠতে এবং চেয়ার থেকে উঠতে কষ্ট হয় এবং দুর্বলতা অনুভব করেন।
৫. সাধারণত বুকের পাজরের হাড়, পায়ের উপরের অংশের হাড় এবং শ্রোণিচক্রের হাড় বেশি আক্রান্ত হয়।
৬. মুখের মাংসপেশি রোগীর অজান্তেই নড়তে বা কাঁপতে থাকে।
৭. ব্যথার কারণে এক্স-রে করে দেখা যায় কোন আঘাত ছাড়াই শরীরে হাড় ভেঙে গেছে।
৮. হাড়ের এক্স-রে করলে হাড় ক্ষয় এবং ভাঙা মনে হয়।
৯. রোগীর খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসাঃ
এই রোগের চিকিৎসার জন্য সর্বপ্রথম আক্রান্তের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণ খুঁজে বের করা গেলে কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিবেন চিকিৎসক। অস্টিওম্যালেসিয়া সাধারণত ভিটামিন-ডি কম গ্রহণ করার জন্য হয়। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে খাদ্যে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করার জন্য বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়। সাধারণত যে সকল খাবার ভিটামিন-ডি’ সমৃদ্ধ, সেসকল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারগণ । যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম, ফল ও যকৃত। ভিটামিন-ডি কে ‘সূর্য ভিটামনি’ নামে অভিহিত করা হয়। কারণ সূর্যরশ্মি শরীরের চামড়ায় পড়লে সূর্যের আলোর মাধ্যমে চামড়ায় ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। সুতরাং রোগীকে সকাল বেলার রোদে রোগীকে কিছুক্ষণ থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারগণ । প্রতিদিন ২৫-১২৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি যুক্ত ঔষুধ সেবন করা যেতে পারে।
যদি রোগীর অন্ত্রে কোনো অসুবিধা থাকে, যার কারণে শরীরে ভিটামিন-ডি শোষিত না হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে মাংসে একটি ভিটামিন-ডি ইনজেকশন নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ যদি কিডনীর কোন রোগের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসা হিসেবে আলফা-ক্যালসিডল দেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। এ রোগের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় রোগীকে ভিটামিন-ডি মেইনটেনেনস থেরাপি হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রতিকারঃ
আমি আগেই বলেছি, ভিটামিন-ডি’র অপর নাম ‘সূর্য ভিটামিন’। কারণ শরীরের ত্বকে সূর্যরশ্মি পড়লে সেই সূর্যরশ্মি থেকেই ত্বকে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হয়। তাই অস্টিওম্যালেসিয়া অথবা শিশুদের রিকেট থেকে বেঁচে থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে শরীরে রোদ লাগানো। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুক্ষণের জন্য শিশুদের সূর্যের আলোতে রাখলে সহজেই রিকেট থেকে রক্ষা পায়। বড়দের জন্যও একই পদ্ধতি প্রদান করা হয়। শরীরে সূর্যের আলো লাগানো সবার জন্যই দরকার। তা হলে সহজে অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আবার অস্টিওম্যালেসিয়া ছাড়াও ত্বকের নানা রকম ভাইরাস রোধে কার্যকরী এই সূর্যের আলো। ধনী-গরিব সবাই অতি সহজে বিনা পয়সার এবং বিনা পরিশ্রমে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন-ডি পেতে পারে। আর এর মাধ্যমে রিকেট বা অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন খুব সহজেই।
ভিটামিন-ডি খুব সহজভাবে পাওয়ার উপায় হচ্ছে, দিনের বেলা প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট রোদে যেতে হবে। বিশেষ করে মুখমণ্ডল ও হাত রোদে রাখতে হবে। আর সম্ভব হলে সমস্ত শরীর সঁপে দিতে হবে রোদের কাছে। রোদের পাশাপাশি ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ, ফলমূল ইত্যাদি প্রতিদিন গ্রহণ করার মাধ্যমেও অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
তাছাড়া প্রতিরোধের জন্য প্রোফাইলেকসিস হিসেবে প্রতিদিন ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি সেবন করা যাবে।
পরিশেষে আবারও বলছি, আসুন আমরা সবাই প্রতিদিন সূর্যরশ্মি থেকে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করি। নিজেদের রিকেট ও অস্টিওম্যালেসিয়া থেকে রক্ষা করি। অপরকেও এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় জানিয়ে সুস্থ্য রাখি।
– Rumel Rahman