দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সহজলভ্য এক যানের নাম বাইক বা মোটর সাইকেল। এই বাহনটি বর্তমান সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। অফিস, আদালত বা জরুরী কাছে এখান থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য এর মত সহজলভ্য ও সুবিধার বাহন আরেকটি নেই। তবে যদি নিয়ম-কানুন মেনে না জেনে এবং না মেনে এই বাহনটি চালানো হয় তবে যে কোনো মুহূর্তে যে কোন ব্যক্তিই দূর্ঘটনার শিকার হয়ে পড়তে পারেন বিপদে। এমনকি অঙ্গহানি বা প্রাণ নাশের ঘটনাও অহরহ ঘটে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাতে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম জানা ও মানা অবশ্যই জরুরী। না হলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রবল।
চলুন তবে জেনে নেই রাতে মোটরসাইকেল চালাতে করণীয় ও বর্জনীয় কিঃ
১. রাতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় অবশ্যই গাড়ির হেডলাইট জ্বালাবেন। হেডলাইট জ্বালানো থাকলে অন্য গাড়ির চালকেরা হেডলাইটের কারণে দূর থেকে আপনার গাড়ি দেখতে পারবে ও সতর্ক থাকবে। এতে দূর্ঘটনার ঘটার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। অবশ্যই সবসময় হেলমেট পড়ে মোটরসাইকেল চালাবেন
২. নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের পর গাড়ি চালানো মারাত্মক দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ । তাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মোটেও মোটরসাইকেল চালাবেন না।
৩. রাতে সাধারণত রাস্তা ফাঁকা থাকে। সেই সুযোগে অনেকেই মোটরসাইকেলের স্পিড বাড়িয়ে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। রাতে হাইওয়েতে যত কম স্পিডে গাড়ি চালাবেন ততই নিরাপদ থাকবেন। ম্যাক্সিমাম রাতের দূর্ঘটনা ওভার স্পিডিং-এর কারণে হয়ে থাকে বলে ফরেনসিক রিপোর্টে পাওয়া যায়।
৪. কিছুক্ষণ পরপর লুকিং গ্লাসে পেছনের গাড়িগুলোর দিকে নজর রাখুন। বিশেষ করে টার্নিং বা ক্রসিং করার সময়। হঠাৎ করে গাড়ি ব্রেক করবেন না। হঠাৎ করে ব্রেক করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ এসময় বড় গাড়িগুলোর গতি থাকে অতিরিক্ত।
৫. রাতে রাস্তায় বিভিন্ন জীবজন্তু চলাফেরা করতে পারে। বিশেষ করে শিয়াল। অনেক সময় অন্ধকারে তাদের দেখা যায় না। তাই সতর্ক থাকতে হবে। যতটা সম্ভব ধীরে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করতে হবে।
৬. আপনি যদি চশমা পরেন, তাহলে অবশ্যই রাতে মোটরসাইকেল চালানোর সময় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ গ্লাস ব্যবহার করবেন। এতে দূরের কিছু দেখতে অসুবিধা হবে না আবার অন্য গাড়ি বা জিনিস থেকে আসা বেশি আলোতেও সমস্যা হবে না।
৭. রাতে মোটরবাইক চালানোর সময় অপরিচিত কেউ ডাকলে কিংবা বাইক থামাতে বললে শুনবেন না। এতে বিপদ ঘটতে পারে। ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে ডাকাত চক্র বাইক থামিয়ে লুটপাট ও ছিনতাই করে এভাবে। আবার অনেকের প্রাণও হারাতে হয় এমন ডাকে সাড়া দিয়ে।
৮. একটানা মোটরসাইকেল চালাবেন না। রাতে লং ড্রাইভে বের হলে অবশ্যই সঙ্গে এমন কাউকে নিবেন যিনি বাইক চালানোয় দক্ষ। শরীর বেশি ক্লান্ত লাগলে কোনো দোকানের সামনে কিংবা বাজারের কাছে থেমে বিশ্রাম নিবেন। চা পান বা গরম কিছু পান করবেন যেন শরীর চাঙ্গা থাকে এবং ঘুমের ভাব কেটে যায়।
৯. অপর পাশ থেকে আসা গাড়ি ক্রস করার সময় ডান পাশের ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন। এতে আপনার পিছে থাকা গাড়ি এসময় অভারটেক করবে না এবং অপর পাশ থেকে আসা গাড়িও ডান দিকে চেপে আসবে না।
১০. আপনার পিছের গাড়িকে ওভারটেক করার সুযোগ দেওয়ার সময় বাম দিকের ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন।
মোটরসাইকেল চালকদের জন্য হাইওয়ে পুলিশের জরুরী কিছু পরামর্শ:
১. মোটরসাইকেলে দু’জনের বেশি আরোহণ করবেন না। দুইজনের বেশি আরোহণ আইনত দন্ডনীয়।
২. চালক ও আরোহী উভয়ই হেলমেট ব্যবহার করুন। ভালো হেলমেট ব্যবহার করবেন যা সেফটি প্রদান করে। সামান্য খরচ আপনার জীবন বাঁচাতে পারে যে কোন মুহূর্তে।
৩. মোটরসাইকেলের সকল কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে নিন এবং হালনাগাদ কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন।
৪. ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে মোটরসাইকেল চালাবেন না।
৫. উল্টো পথে মোটরসাইকেল চালাবেন না।
মনে রাখবেন সামান্য অসাবধানতা একটি প্রাণ কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট৷ আর একটি প্রাণ শুধু নিজের সাথেই জড়িত নয়, জড়িয়ে থাকে পরিবারের প্রতিটি মানুষের জীবন, আনন্দ সুখ ও দুঃখের সাথে।
– Rumel Rahman