রক্তদানের পরে অসতর্কতায় প্রাণ হারালো ভার্সিটি পড়ুয়া যুবক।

রক্ত দিয়ে বিশ্রাম না নিয়ে উঠে চলে আসার সময়  মাথা ঘুরে সিঁড়ির পাশ দিয়ে নিচে পড়ে প্রাণ হারালেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ছাত্র। 

রক্ত দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় হাসপাতাল ভবনের উপর থেকে নিচে পড়ে শাহরিয়ার শুভ (২৫) নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রক্ত দেয়ার পর বিশ্রাম না নিয়ে ফিরে আসার সময় মাথা ঘুরে ভবনের সিঁড়ির পাশ দিয়ে নিচে পড়ে যান তিনি। 

বুধবার (২২ জুন) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেই মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত ১০টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত শুভর বাবার নাম গোলাম মওলা রিপন। তাদের বাড়ি সাভারে।  সেখানে স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতেন শুভ। পড়ালেখার পাশাপাশি ফিল্যান্সিংয়ের কাজও করতেন তিনি।

বোনের রক্তের প্রয়োজনে শুভকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বন্ধু মো. রাকিব হোসেন জানান, তাদের বাড়ি সাভারের উলাইল এলাকায়। পাশাপাশি বাড়িতে থাকেন তারা। ছোটবোন তানজিলা বাতজ্বরে আক্রান্ত। ২০ দিন ধরে ভর্তি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। ডাক্তার বোনের রক্তের প্রয়োজন জানালে রক্তদানের জন্যই বন্ধু শুভকে সঙ্গে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালের ২য় তলায় ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দেয়ার পর সিঁড়ির পাশে এসে বসেছিল শুভ। তাকে রেখেই রাকিব ৫ তলায় রোগীর কাছে যান। ৫ তলা থেকে ২য় তলায় এসেই শুনতে পান শুভমা থা ঘুরে ভবনের নিচে পড়ে গেছে । সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকলে মিলে তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তবে শুভর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালের  চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে শুভকে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার জানান শুভ আর বেঁচে নেই। 

রক্তদান বাহাদুরির কাজ নয়। এটি মহৎ ও গর্বের একটি কাজ। শরীর থেকে অনেকটা রক্ত দান করতে হয় রোগীর প্রয়োজনে। রক্তদানের পরে কিছুটা সময় শুয়ে ও বসে থেকে বিশ্রাম নিতে হয়। এতে শরীরে থাকা বাকি রক্তের সাথে শরীর খাপ খাইয়ে নিতে পারে। মস্তিষ্ককে শরীর জানান দিতে পারে, আমার দেহে পর্যাপ্ত রক্ত আছে। আমি ঠিক আছে।

আর, রক্তদানের পরে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে হাঁটা শুরু করলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে শরীর থেকে চলে যাওয়া রক্তের শূন্যতা অনুভব করে আমাদের মস্তিষ্ক। মনে করে আমার রক্ত নেই। ফলে নিমিষেই মাথা ঘুরে পড়ে যায় ব্যক্তিটি। পরে যাওয়ার সময় যদি রাস্তায়, যানবাহনে বা উপরে থাকে রক্তদাতা তাহলে বড় দূর্ঘটনা ঘটাটাই স্বাভাবিক। এমনকি শুভর মত এভাবেই প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। আর এসব দেখে রক্তদানে আগ্রহ হারাবে শত শত নতুন রক্তদাতা।

অনুরোধ করছি। দয়া করে রক্তদানের পরে কমপক্ষে ১০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে সুস্থ মনে হলে তবেই ব্লাড ব্যাংক থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন।

 

–Rumel Rahman 

6 thoughts on “রক্তদানের পরে অসতর্কতায় প্রাণ হারালো ভার্সিটি পড়ুয়া যুবক।”

    1. নিজেকে সচেতন হতে হবে এবং পরিচিত বা অপরিচিত কেউ যেন চোখের সামনে এমনটা না করতে পারে সে বিষয়েও সচেতন করতে হবে।

  1. Tomal Rahman

    এই ভুল কাজ টা আমার দ্বারা ২ বার হয়েছে

    1. পরবর্তীতে যেন না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এবং পরিচিত বা অপরিচিত কেউ যেন চোখের সামনে এমনটা না করতে পারে সে বিষয়েও সচেতন হতে হবে।

  2. Pintu Sarker

    আমিও এমন ভুল কাজ একবার করেছিলাম, তবে এখন সতর্ক হয়ে গেছি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *