ইন্ডিয়া থেকে যেভাবে ফিরিয়ে আনবেন মৃতদেহ।

পোস্টের শেষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য দেওয়া থাকবে, যা জেনে রাখলে ইন্ডিয়ায় মৃতদেহ নিয়ে পুলিশি বা হাসপাতালের সমস্যা এড়িয়ে থাকতে পারবেন।

আমাদের দেশ থেকে প্রতিদিন চিকিৎসা, ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক কাজে ইন্ডিয়ায় যায় প্রচুর মানুষ। বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসার জন্য গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসে। আবার ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক কাজ শেষ করে ফিরে আসে অধিকাংশ মানুষ। আবার মাঝেমাঝেই আমাদের কানে খবর আসে চিকিৎসা, ভ্রমণ বা ব্যবসার কাজে গিয়ে মারা গেছে অনেকেই। কিভাবে মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে, কি কি প্রসেসিং সম্পন্ন করতে হবে আর কত টাকা খরচ হবে এসব বিষয়ে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না। আজকের পোস্ট এসকল বিষয় নিয়েই লেখা।

ইন্ডিয়ায় গিয়ে কেউ মারা গেলে সেই লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে আপনাকে লম্বা একটি রাস্তা বা বেশ কিছু প্রসেস সম্পন্ন করে দেশে মৃতদেহ ফেরত আনতে হবে। এসময় বেশ কিছু অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে মৃতদেহটি আপনার আত্মীয়র, বা রোগীর এটেন্ডেন্স হিসেবে রোগীর সাথে আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। সাথে এটাও প্রমাণ দিতে হবে সেখানে অবস্থানকালে আপনি বা মৃত ব্যক্তি অবৈধ কোন কাজ করেন নি। অবৈধ কাজ বলতে পাসপোর্ট ব্যতীত ইন্ডিয়া গমন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও অবস্থান, মাদক বা আইনী মামলায় আটক, অবৈধ উপায়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ইত্যাদি।

আমি একের পর এক ধাপ সম্পর্কে লিখছি যা আপনাদের জন্য এই পরিস্থিতিতে সহায়ক হবে।

ধাপ-১ঃ

ডেথ সার্টিফিকেট ( Death Certificate):

রোগীর মৃত্যুর পরে প্রথমেই আপনাকে হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা খুবই সহজ। রোগী হাসপাতালে যে ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনিই রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিবেন। হাসপাতালের এডমিনেস্ট্রেশন বিভাগ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে এটির ১০ টি জেরক্স কপি করে নিবেন।

ধাপ-২ঃ

পুলিশ এন.ও.সি (Police N.O.C):

ডেথ সার্টিফিকেটের অরজিনাল আর জেরক্স কপি এবং রোগীর যে কোনো একজন এটেন্ডেন্সের পাসপোর্ট ( অরজিনাল এবং জেরক্স) নিয়ে যে থানার অধীনে হাসপালে পড়েছে সেই থানায় যেতে হবে। সেখানে কথা বলে নাম, ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য প্রদান করে পুলিশের নিকট থেকে N.O.C সংগ্রহ করতে হবে। N.O.C সংগ্রহ করতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। কাউকে দিয়ে পাসপোর্ট বা কোন কপি পাঠাবেন না। যিনি রোগীর এটেন্ডেন্স এবং মৃতদেহ নিয়ে দেশে আসবেন তিনি নিজে স্বশরীরে থানায় উপস্থিত হবেন।

ধাপ-৩ঃ

Passport Cancellation and N.O.C:

ডেথ সার্টিফিকেট, N.O.C পেপার এবং মৃত রোগীর পাসপোর্ট এবং এটেন্ডেন্সের পাসপোর্ট ( অরজিনাল এবং জেরক্স) নিয়ে নিকটস্থ হাই কমিশনারের কার্যালয়ে চলে যেতে হবে এটেন্ডেন্সকে। হাই কমিশনারের কার্যালয় ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। তবে সন্ধ্যা ৬ টার পরে ফোন করলে বা উপস্থিত হলে পরের দিন সকালে যেতে বলে। মৃত ব্যক্তির পাসপোর্ট ক্যান্সেলেশনের জন্য আসছেন এটা বলবেন। তাহলে অনেক সময় ৬ টার পরেও কাজ করে দেয়। ওখানে মৃত ব্যক্তির মূল পাসপোর্টটা ক্যান্সেল করে সীল মেরে হাই কমিশনারের আরেকটি N.O.C সংগ্রহ করে নিবেন। সংগ্রহ করে এই কাগজেরও ১০ টি জেরক্স কপি করে নিবেন।

ধাপ-৪ঃ

FRO:

উপরের সব মূল কাগজ এবং তার জেরক্স নিয়ে FRO তে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করলে মোটামুটি মেডিকেল এবং আইনি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। মনে রাখবেন FRO সকাল ১০ টার আগে খুলে না। তাই ১০ টার আগে ওখানে গিয়ে কোন কাজ হবে না।

ধাপ-৫ঃ

Embalming Certificate:

ইন্ডিয়ায় অনেক সংস্থা আছে যারা মৃতদেহ প্রিজারভেশন (Preservation) এর কাজ করে থাকে। তাদের মধ্যে Peace Heaven হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে পুরাতন সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিগত ৭০ বছর ধরে তারা মৃতদেহ সংরক্ষণের কাজ করে আসছে। আর এরা সংরক্ষণের জন্য অন্যদের তুলনায় কম টাকা নিয়ে থাকে। এছাড়াও Green Ambulance সংস্থাটিও বেশ ভালোভাবে এই কাজ করে। 

যে কোন একটি সংস্থায় কথা বলে সকল ফর্মালিটিস সম্পন্ন করতে হবে। ফর্মালিটিস পূরণের জন্য এখানে উপরের ৪টি কাগজ নিয়ে যেতে হবে সেখানে। অত:পর সেখান থেকে Embalming Certificate সংগ্রহ করে নিবেন। বডি প্রিজারভেশন এর জন্য এখানে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিতে হয়। এক এক সংস্থায় এক এক রকম চার্জ নির্ধারণ করা থাকে। Peace Heaven সংস্থা ৭২ ঘন্টার জন্য বডি প্রিজারভেশন, কফিন এবং ১ দিনের মর্গ চার্জ হিসেব করে ১৬,২০০ রুপি নিয়ে থাকে। এছাড়া উপরের প্রসেসগুলোতে আর কোন টাকা লাগে না।

★ ইন্ডিয়া থেকে দেশে মৃতদেহ ফিরিয়ে আনতে হলে উপরে উল্লেখিত ৫ টি পেপার অবশ্যই সংগ্রহ করে সাথে রাখতে হবে। এবং সবগুলো পেপারের ৭ টি করে জেরক্স করে আলাদা আলাদা করে ৭ টি সেট তৈরি করে নিতে হবে।

মৃতদেহ যদি বাই রোডে নিয়ে আসতে চান, তাহলে এম্বুলেন্সের ড্রাইভার বা মালিকের সাথে যোগাযোগ করে ভাড়া নির্ধারণ করে নিতে হবে। এবং বিকেল ৫ টার মধ্যে যেন বর্ডারে পৌঁছানো যায় এমন সময়ে রওনা দিতে হবে। কারণ ৬ টার পরে বর্ডার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫ টায় মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে ৬ টার মধ্যে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে বের হয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে।

আর যদি বাই এয়ারে মৃতদেহ নিয়ে আসতে চান, তাহলে প্লেনের টিকিট কেটে টিকিটের একটি প্রিন্ট কপি এবং যাবতীয় কাগজ (উপরের ৫ টি পেপার) নিয়ে কার্গো বিভাগে গিয়ে কথা বলে বডি ডিস্প্যাচ করার কাগজ সংগ্রহ করে নিতে হবে। বাকি কাজ কখন কিভাবে করতে হবে তার দ্বায়িত্ব তারা নিজেই নিয়ে নিবে।

কার্গোতে মৃতদেহ আনতে কোন টাকা লাগে না। শুধুমাত্র এটেন্ডেন্ট-এর এয়ার টিকিট লাগবে। বাই রোডে কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনের সময় বডির জন্য কিছু টাকা খরচ করতে হয়। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের সময় দেশে দেহ আনার সময় ৯০০০ রুপি জমা দিতে হয়।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ 

আমাদের দেশ থেকে যারা ইন্ডিয়ায় যারা চিকিৎসা করাতে যায়, ইন্ডিয়ায় পৌঁছে তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষ কোন হোটেল বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। ক্যান্সার চূড়ান্ত পর্যায়ে, ব্রেন টিউমার, হার্টের সমস্যা বা বড় বড় রোগে আক্রান্ত রোগীকে হোটেলে বা বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে না রেখে একটু বেশি টাকা খরচ করে হাসপাতালে রাখার চেষ্টা করবেন। আমাদের অনেকেই জানি না চিকিৎসা বা যে কোন কারণে অন্য দেশে গিয়ে কোন ব্যক্তি যদি সেখানের হোটেল বা বাসায় থাকা অবস্থায় মারা যায়, তাহলে পুলিস কেস এবং পোস্টমর্টেম ব্যতীত মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আর এই প্রসেস সময় সাপেক্ষ এবং বেশ ঝামেলারও। 

নিশ্চয়ই আমরা কেউ চাই না আমাদের প্রিয় মানুষটির দেহ ময়নাতদন্ত করা হোক বা তার দেহ সামান্য আঘাত লাগুক ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। 

হাসপাতালে স্বাভাবিক মৃত্যু হলে রোগীর পোস্টমর্টেমের কোন প্রয়োজন নেই। তবে এক্সিডেন্ট বা সুইসাড জনিত কেস হলে যেখানেই থাকুক না কেন পুলিশ কেস এবং পোস্টমর্টেম করা হবে।

 

–Rumel Rahman 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *