মিলাদুন্নবী, আসলেই কি ঈদ? এ অপ-আয়োজন কিভাবে এলো আমাদের মাঝে?

১২ ই রবিউল আউয়াল।
এই দিনে রাসূল (সঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন এটা তো সবাই জানি। এটা কতজন জানেন যে এই ১২ ই রবিউল আউয়ালেই রাসূল (সঃ) ইন্তেকাল করেছেন??

এখন কথা হচ্ছে, আপনি যেই দিনে রাসূল (সঃ) ইন্তেকাল করেছেন সেদিন আনন্দ করবেন কিভাবে? আর যেদিন তিঁনি জন্মগ্রহণ করেছেন সেদিনই বা কিভাবে শোক পালন করতে পারেন ??

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, ছোট কাল থেকে আমার বাপ-দাদাদের দেখে আসছি তাঁরা এসব পালন করে আসছে। আমরাও পালন করেছি। এখন কোথা থেকে কে এসে বললো তাতে আমাদের ঐতিহ্য হারাবো নাকি?

বেশি কিছু বলবো না। ১ টা উদাহরণ দেইঃ ছোটবেলায় আমাদের দাঁত পড়ে গেলে মা-দাদি-নানী বলতেন পড়ে যাওয়া দাঁত ইঁদুরের গর্তে ফেলে আসো আর বলে আসো ‘

“ইঁদুর ভাই, ইঁদুর ভাই আমার মোটা দাঁতটা তুমি নাও, আর তোমার চিকন দাঁত আমাকে দাও ” (নাঊযুবিল্লাহ)
মানে আল্লাহর কাছে না চেয়ে ইঁদুরের কাছে চাইতে শিখিয়েছিলেন তারা৷ যা সম্পূর্ণ শিরক। যেহেতু আপনার আমার পূর্বপুরুষ এসব শিখিয়েছে তাহলে কি এই ধারণা আপনার মাঝে লালন করে শিরক করতে থাকবেন ?

আর শিরক প্রকাশ্যে করুন আর গোপনে করুন, জেনে করুন আর না জেনে করুন আপনাকে তওবা করে পুনরায় ঈমান আনতে হবে শিরক করে থাকলে।

সমাজ কি শিখিয়েছে সেটা ইসলাম নয়। ইসলাম কি বলেছে সেটা মেনে পরিচালনা করতে হবে সমাজকে।

আপনি মানুন বা না মানুন, এশিয়ায় আমরা যারা মুসলিম আছি তাঁরা কনভার্টিং মুসলিম বা রুপান্তরিত মুসলিম। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, এশিয়া অঞ্চলে এক সময় মুসলিমের অস্তিত্ব ছিল না। সবচেয়ে বেশি ( প্রায় ৯৭%) মূর্তি ও অগ্নি উপাসক এবং বাকি ৩% খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মের মানুষের বসবাস ছিল।

অত:পর হযরত শাহ মুখদুম (রহঃ), শাহজালাল ( রহঃ ) , শাহ পরান (রহঃ), ইবনে সিনা, ইবনে বতুতা, মুঘল সাম্রাজ্যের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশে ইসলামের আলো বা দাওয়াত ছড়াতে থাকে।

ধর্ম রুপান্তর করলেও আগের কিছু কিছু কাজ বা রীতি আমাদের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে থেকে গিয়েছিল এবং এশিয়ায় এই সকল মুনিষীদের মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে প্রথাগুলো মাথা চাড়া দিতে শুরু করে। যেখান থেকে আমরা, শব-ই-বরাত, শব-ই-ক্বদর, শব-ই-মেরাজ, ১০ ই মহরম ( আমরা মনে করি কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার জন্য এই দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করা থেকে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আল্লাহ পাক ঘটিয়েছেন। আবার সর্বশেষ এই দিনেই সংঘটিত হবে কেয়ামত বা মহা প্রলয়। আর এই দিনে আমরা একত্রিত হয়ে মসজিদে নামাজের বা ইবাদাতের রীতি বানিয়ে নিয়েছি। ইসলামে এসব রাতে আমলের কিছু হাদিস থাকলেও সমন্বিতভাবে আমলের হাদিস পাওয়া যায় না। রাসূল (সঃ) একাকী এই রাতগুলোতে আমল করেছে বলে হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়।

আমরা আমাদের রীতিতে আজ রাসূল (সঃ) এর আজ জন্মদিন এটা স্মরণ রেখে আনন্দ করি। আবার দেখি লেখা থাকে বড় ঈদ ঈদে মিলাদুন্নবী। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই দিনেই তো রাসূল (সঃ) মারা গেছেন। মহামানব, যার সৃষ্টি না হলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না, তার মৃত্যুর দিন কিভাবে ঈদ হতে পারে। ঈদ মানে তো আনন্দ। তাহলে এই ঈদ কাদের ? মুসলিমের ? নাকি মুনাফিক, মুশরিকদের ? সম্ভবত যতদূর জানি এইবার ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর ৫০ বছর উদযাপন করা হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাসূল (সঃ) জন্মগ্রহণ করলেন ১৪০০ বছরেরও আগে। কিভাবে তাহলে ৫০ বছর হতে পারে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর?

রাসূল (সঃ) এর যুগে, বা সাহাবীদের যুগে, বা রাসূল (সঃ) এর প্রিয় নাতী ইমাম হাসান (রাঃ) বা ইমাম হোসাইন (রাঃ) এর শাসন আমলে কি পালন হতো মিলাদুননবী? বা ইমান বুখারী, ইমাম হানিফা, ইমাম সাফীদের মত বড় বড় মুহাদ্দিসের আমলে কেন পালন করা হয় নি তথাকথিত এ ঈদ ঈদ-এ- মিলাদুন্নবী ? কেন আজও সৌদি আরবে বা আরবে পালিত হয় না এই দিনে কোন রাষ্ট্রীয় আয়োজন?

এখন আসি ঈদ নিয়ে। ঈদ আল্লাহ পাক আমাদের খুশি হয়ে দিয়েছেন। যা অনেক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অর্থাৎ ঈদ আল্লাহর প্রদত্ত বিধান। এমন কোন হাদিস দেখাতে পারবেন যেখানে আল্লাহ পাক দিবস পালন বা ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী বিষয়ক কোন নির্দেশনা দিয়েছেন? বরং রাসূল (সঃ) অন্য ধর্মের রীতি, অনুষ্ঠান বা আয়োজনকে অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। আর দিবস পালনের রীতি এসেছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকেই।

আল্লাহ পাক আমাদের সহীহ আমল করার তৌফিক দান করুন। সকল বিদ’আত থেকে এবং শয়তান থেকে হেফাজতে রাখুন।

-Rumel Rahman

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *