মাহবুব ভাইয়ের দুর্লভ এবি- রক্তদানে বাচ্চাটির তৃতীয় অপারেশন সম্পন্ন ।

শিশুটির বয়স মাত্র ১১ মাস চলছে। বাসা নওগা জেলার পোরশা থানায়। জন্মের কিছুদিন পর থেকেই পেটের সমস্যায় ভুগছে শিশুটি। নওগাঁ সদর হাসপাতালে দেখানো হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয় শিশুটিকে। রাজশাহীতে আনা হলে ডাক্তার জানান নাড়িতে সমস্যা, জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। রক্তের গ্রুপ দুর্লব AB- . অনেক প্রচেষ্টার পরে রক্ত সংগ্রহ হলে ডাক্তার অপারেশন করে শিশুটির। কিন্তু ‘নিয়তির লিখন না যায় খন্ডন’ কথাটি এই শিশুর জন্য প্রযোজ্য হয়ে যায়। অপারেশন করা হলেও সুস্থ হয় নি তখন বাচ্চাটি। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থতা বেড়ে যায় এবং পেটে ইনফেকশন তৈরি হয়ে যায়। ফলে প্রয়োজন হয় ২য় অপারেশনের। এবারও রক্তের জন্য বাবা মায়ের আকুর প্রচেষ্টা এবং সংগ্রহ হয় রক্ত এবং আবার সম্পন্ন হয় অপারেশন। কিন্তু নিয়তি যে তখনও বাম দিকে। ২য় অপারেশনও রোগীর সুস্থতার সহায়ক হয় নি।

কিছুদিনের মধ্যে অসুস্থতা ভয়ানক আকার ধারণ করলে শিশুটিকে আবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে দেখা যায় শিশুটির নাড়ি পঁচে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন না করলে বাঁচানো সম্ভব না বাচ্চাটিকে।

অন্য সময়ের মত বাবা এবারও আশায় ছিলেন ব্যবস্থা হবে রক্তের। কিন্তু ভ্যাক্সিনেশন আর রমজান মাস চলায় সংকট চলছে রক্তদাতা খুঁজে পাওয়ায়। হতাশ হয়ে দুপুরে আশাহত বাবা শিশুকে কোলে নিয়ে কান্না করতে থাকেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবী নুরুজ্জামান ভাইয়ের নজরে আসে বিষয়টি। রোগীর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পোস্ট করেন নিজের টাইমলাইনে এবং আমাদের অবহিত করেন বিষয়টি। কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী নিজেদের টাইমলাইনে পোস্ট সহ নানা ভাবে চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু কোন রকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছিলো না। এতে হতাশ হয়ে যাই আমরাও। তবে নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখি আমরা ম্যানেজ করতে পারবো ইনশা আল্লাহ। আর হয়তো সেই বিশ্বাসের জোরেই ঠিক ইফতারের আগ মুহূর্তে রক্তদাতা মাহাবুব ভাইয়ের নজরে পোস্টটি আসলে তিনি আমাদের আশ্বাস দেন রক্তদানের মাধ্যমে তিনি সহায়তা করবেন। মাগরীবের নামাজ পড়ে ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে গোদাগাড়ী থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি এবং রাত প্রায় সাড়ে ৯ টার দিকে মেডিকেলের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে রক্তদানের মাধ্যমের সহায়তা করেন তিনি।

দুর্লভ এবি- রক্তদান করছেন রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবী মাহাবুব ভাই।

রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ডাক্তার জরুরী ভিত্তিতে বাচ্চাটিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলেও রক্তের অভাবে অপারেশন শুরু করতে পারছিলেন না। আলহামদুলিল্লাহ মাহাবুব ভাইয়ের রক্তদানের ফলে ডাক্তারগণ আশ্বাস পেয়ে বন্ধ থাকা অপারেশন শুরু করেন।

সকলে দোয়া করবেন যেন আল্লাহ পাক বাচ্চাটিকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করেন। আর রক্তদাতা মাহাবুব ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন যেন নিয়ম মেনে প্রতি চার মাস পরপর অসহায় রোগীর রক্তের প্রয়োজনে নিজের হাতটি বাড়িয়ে দিতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *