মাইগ্রেন, এক ভয়ংকর যন্ত্রণার নাম।

“মাইগ্রেন”

বর্তমান সময়ে সবার জন্যই আতঙ্কের একটি নাম মাইগ্রেন। মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় ভোগেন না এমন মানুষ আমাদের আশেপাশে খুবই কম পাওয়া যায়। যে ব্যক্তি এই সমস্যায় ভুগেন সে-ই জানেন এর ব্যথা কতটা কষ্টদায়ক। কিন্তু কেন হয় এই মাইগ্রেনের সমস্যা। আসুন জানি এই রোগ সম্পর্কে আর মুক্তির উপায়ই বা কি।

মাইগ্রেন কেন হয় এই বিষয়ে অনেক থিওরি বা কারণ রয়েছে। তবে জেনেটিক, অনিয়মিত জীবন-যাপন এবং পারিপার্শ্বিক কিছু কারণকে দায়ী করা হয় এই সমস্যায় জন্য।

মাইগ্রেনের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য কিছু কারণ রয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে-

১. অতিরিক্ত গরম (Height of Temperature):

অতিরিক্ত গরমে থাকলে বা অতিরিক্ত রোদে হাঁটলে বা কাজ করলে মাইগ্রেনের ব্যথা অনুভব হতে পারে। আবার অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রভাবেও অনুভব হতে পারে এই মাইগ্রেনের ব্যথা।

২. অতিরিক্ত ইমোশন (Height of Emotion):

অত্যাধিক রেগে যাওয়া, অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা, জোরে জোরে হাসা বা অট্টোহাসি, দুশ্চিন্তা বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে।

৩. রাত জাগা:

রাত জেগে থাকা মাইগ্রেনের ব্যথা সৃষ্টি বা বৃদ্ধির অন্যতম একট কারণ। রাত জাগার ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং চরম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।

৪. অতিরিক্ত পরিশ্রম:

অতিরিক্ত পরিশ্রম বা পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়ার কারণে আবার ক্ষেত্র বিশেষে অত্যাধিক যৌন মিলনের ফলেও বেড়ে যেতে পারে মাইগ্রেনের ব্যথা।

৫. অলস জীবন-যাপন:

সারাদিন বাসায় অবস্থান করা, অতিরিক্ত ঘুমানো বা ব্যায়াম না করা এবং অলসতাও মাইগ্রেনের সমস্যার অন্যতম কারণ,

 

৬. অতিরিক্ত পড়াশোনা বা ব্রেনে চাপ দেওয়া:

অধিক পড়াশোনা বা ব্রেনকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না দিলে মাইগ্রেনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে,

৭. অতিরিক্ত ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ব্যবহার:

অতিরিক্ত মোবাইল, কম্পিউটার বা ইলেক্ট্রিক ডিভাইস ব্যবহারের ফলে চোখ পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। ফলে চোখ ও মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয় এবং এখান থেকে মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে, 

৮. মাসিকের সময়:

মাসিকের সময় মেয়েদের এক ধরণের মাইগ্রেনের সমস্যা হয়। এই ধরণটিকে Menstrual Migraine বলা হয়। Menopause বা মাসিকের পরে মাইগ্রেনের ব্যথা অনবরত হতে পারে।

৯. জন্মনিরোধক পিল:

জন্মনিরোধক পিল খেলে বা হরমোন থেরাপি নেওয়ার ফলেও মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে।

১০. কিছু খাবার:

বিশেষ কিছু খাবার, যেমন চকলেট, পিনাট, মিষ্টি, অতিরিক্ত ঝাল এবং লবণযুক্ত খাবার, দুধ জাতীয় খাবার ইত্যাদি মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে সবার ব্যথা একই ধরণের খাবারের জন্য বৃদ্ধি নাও পেতে পারে। তবে কিছু চকলেট আছে যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে কাজ করে।

আবার, সময়মত খাবার না খাওয়া অথবা না খেয়ে থাকার কারণেও মাইগ্রেনের ব্যথা প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।

১১. উচ্চ শব্দ:

উচ্চ শব্দ এবং অতিরিক্ত আলো মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন এমন ব্যক্তির জন্য অসহননীয় বা অসহনশীল।

১২. অতিরিক্ত চা ও কফি পান:

মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে চা এবং কফি দারুন কাজ করলেও অতিরিক্ত চা বা কফি পান করার ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে

মাইগ্রেনের ব্যথা হলে করনীয় কিঃ

মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে মানুষ পাগলের মত আচরণ শুরু করে দেয়। অনেকে অতিরিক্ত ব্যথার কারণে বমি করে দেয়। এমনকি মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেকে অজ্ঞানও হয়ে যায়। অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। তবে এসব চেষ্টা নিজের জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিছু কাজ আছে যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমিয়ে দিতে বেশ সাহায্য করে। কাজগুলোঃ-

১. একটি বাটিতে বেশ কিছু বরফ নিয়ে হাতের কব্জি পর্যন্ত বরফে ডুবিয়ে রেখে ১০ মিনিট হাত মুঠো করুন আর ছাড়ুন। দেখবেন বেশ আরাম পাবেন।

২. নিরিবিলি এবং আলোহীন পরিবেশে থাকতে হবে। যেখানে উচ্চ শব্দ বা আলো থাকবে না।

৩. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

৪. ব্যথার জায়গা টিপে নিলে বা ম্যাসাজ করে নিলে কিছুটা আরাম পাওয়া যাবে।

৫. নিয়মিত সময় করে হাঁটা ও ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে,

৬. নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। না খেয়ে বেশি সময় থাকা যাবে না।

৭. যে সকল খাবারে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ছে সেগুলো নির্ণয় করে পরিহার করতে হবে।

৮. দুশ্চিন্তা, জোরে চিল্লিয়ে কথা বলা, অতিরিক্ত কান্না বা অট্টহাসি পরিহার করতে হবে।

৯. অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম এড়িয়ে চলতে হবে।

 

মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে কি কি খাবার কার্যকর ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে দ্রুতই পোস্ট করার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।

 

–Rumel Rahma

1 thought on “মাইগ্রেন, এক ভয়ংকর যন্ত্রণার নাম।”

  1. Pingback: ADHD রোগে আক্রান্ত নয় তো আপনার শিশু - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *