মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ায় যে সকল খাবার।

মাইগ্রেনের সমস্যায় আক্রান্ত এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে প্রচুর। আমরা অনেকেই মাইগ্রেনকে ছোট করে দেখি। আর যাদের এই সমস্যা নেই তারা অনেকেই মনে করে থাকেন সামান্য মাথা ব্যথাই তো। বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। আসলেই কি তাই? না বিষয়টি এতটা সহজ নয়। মাইগ্রেনের ব্যথার পর্যায় এক এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এক এক রকম। অনেকের সামান্য বিশ্রাম নিলে ব্যথা ভালো হয়ে যায়। আবার অনেককে ব্যথায় বমি এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতেও দেখা যায়। মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে এমন কিছু খাবার আছে। যারা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন, এসব খাবার সুস্থ্যতার জন্য পরিহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আজ আপনাদের জানাবো কি কি সেই খাবার, যা মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে দেয়।

গরমের তাপদাহতে বা অতিরিক্ত শীতে অনেকেরই মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। সাধারণত মাইগ্রেনের সমস্যায় মাথার ভেতরের অংশ, বাম, ডান বা উভয় পাশ ব্যথা উপলব্ধি করতে হতে পারে। এই সমস্যার সম্মুখীন হলে সুস্থতার জন্য আপনাকে অতি জরুরী খাবার তালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দিতে হবে।

বিভিন্ন কারণে একজন মানুষ মাইগ্রেনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। সূর্যের প্রখর তাপদাহ অথবা অনেক সময় ধরে কম্পিউটার বা মোবাইলের সামনে বসে থাকা এই ব্যথা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হতে পারে। আবার ঘুম কম হওয়া, চোখের ক্লান্তি, সাইনাসের সমস্যা, দুশ্চিন্তা অথবা মস্তিষ্কের রক্তনালিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলেও মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় তীব্র মাথা ব্যথার সাথে বমি ভাব এমনকি বমি হয়ে যাওয়া, চোখে যন্ত্রণা এমনকি মুখ ও চোয়ালে ব্যথাও মাইগ্রেনের রোগীর মধ্যে দেখা যায়।

নিউরোলজিস্টগণ মনে করেন, অগোছালো জীবনযাত্রা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী। মেইগ্রেনের সমস্যা একেবারে নিরাময় করা সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপনের সাথে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলতে হবে বেশ কয়েকটি খাবার।

১. চকলেটঃ

বিশেষজ্ঞদের মতে, চকলেটে ক্যাফেইন এবং বিটা ফেনি লেথিলামাইন নামক দুটি উপাদান থাকে, যা মাথা ব্যথার বা ব্যথা বাড়ানোর কারণ হতে পারে। আমেরিকান মাইগ্রেন ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুসারে, প্রায় ২২ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের সমস্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় চকলেট। এ কারণে আপনাকে চকলেটের পাশাপাশি কফি, চা থেকেও দূরে থাকতে হবে। তবে পিওর ডার্ক চকলেট এক্ষেত্রে আলাদা।

২. চিজঃ

চিজে থাকা ‘টাইরামাইন’ নামক পদার্থ মাইগ্রেনের সমস্যার বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। চিজ যত পুরাতন হয় এই পদর্থটির পরিমাণও চিজে ততই বাড়তে থাকে। তাই যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তারা চিজ থেকে দূরে থাকুন। চিজের মতো আচার, কিমচি এবং কম্বুচার মতো খাবারগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে টাইরামাইনের উপস্থিতি রয়েছে। তাই এসব খাবারগুলোও এড়িয়ে চলা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ভালো।

৩. মিষ্টিঃ

অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কৃত্রিম মিষ্টিই মানুষের মস্তিষ্কে মাইগ্রেনকে ডেকে আনতে পারে। বিশেষত ‘অ্যাসপার্টেম’ নামক কৃত্রিম মিষ্টি মাইগ্রেনের রোগীর জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর।

 

৪. নাইট্রেট পিজারভেটিভঃ

রঙ এবং গন্ধ সংরক্ষণ করতে ডেলি মিটস, হ্যাম, হট ডগস এবং সসেজের মতো মাংসগুলোতে নাইট্রেট নামক প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। গবেষণা অনুসারে, এই খাবারগুলো রক্তে নাইট্রিক অক্সাইড বাড়িয়ে দেয়৷ যার প্রভাবে মস্তিষ্কের রক্তনালীগুলো প্রসারিত হয়ে যায় এবং মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেনের সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই মাইগ্রেন বা মাথা ব্যথা থেকে রেহাই পেতে এসব খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে।

৫. ধুমপান ও নেশাজাত দ্রব্যঃ

সিগারেট বা বিড়িতে থাকা নিকোটিন সরাসরি মানুষের মস্তিষ্কে ও লাঙ্কে আঘাত করে। এর প্রভাবে মস্তিষ্কের যন্ত্রণা অধিক পরিমাণে বেড়ে যায়। এমনকি মাইগ্রেনের ব্যথা হচ্ছে এমন অবস্থায় ধুমপান করলে রোগীর স্ট্রোক করার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় বলে গবেষণায় জানা যায়।

আর মদ বা নেশাজাত দ্রব্যে থাকা অ্যালকোহল মস্তিষ্ককে এতটাই ক্ষতিগ্রস্থ করে যা মানুষকে বিকারগস্ত করে দেয়। অ্যালকোহল খুব দ্রুত ব্যথা বাড়িয়ে দিতে দারুণ কাজ করে থাকে।

এসব খাবার ছাড়াও আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো এবং টক জাতীয় ফল, গম জাতীয় খাবার ( রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি) আপেল, কলা, চিনাবাদাম ও পেঁয়াজ মাইগ্রেনের ব্যথাকে বাড়িয়ে দেয় বলে গবেষণায় প্রমানিত।

সুতরাং, এসকল খাবার এরিয়ে চললে মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকা সম্ভব। বিশেষ করে মাইগ্রেনের ব্যথা থাকাকালীন অবস্থায় এসকল খাবার এরিয়ে চলতেই হবে।

কিছু খাবার পরিহারের মাধ্যমে যদি সুস্থ থাকা যায় তাহলে সেই খাবারগুলো পরিহার করে চলা উচিত। শুধু খাবার নয়, পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে সকল বদ অভ্যাস আছে সেগুলো পরিহার করাটাও খুব বেশি জরুরী।

–Rumel Rahman

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *