ফুসফুস ক্যান্সারে মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশনঃ
শ্বাসতন্ত্রের যাবতীয় রোগের মধ্যে ফুসফুস টিউমার বা ফুসফুস ক্যান্সার সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাধি। এই ক্যান্সারের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এই টিউমার বা ক্যান্সার শুরুতে শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে রোগের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। কিন্তু সামান্য দেরি হলে এই ক্যান্সারে মৃত্যু নিশ্চিত৷
ফুসফুসের শ্বাসনালী, বায়ুথলি এবং এপিথেলিয়াম কোষ থেকে সৃষ্ট টিউমার, এবং সেই টিউমার থেকে সৃষ্টি ক্যান্সারই হচ্ছে ফুসফুস টিউমার ক্যান্সার বা ব্রংকোজেনিক কারসিনোমা (Bronchogenic Carcinoma).
বিভিন্ন কারণে মানুষের শরীরের কোষগুলোর DNA ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। যার ফলে DNA অনিয়ন্ত্রিতভাবে দ্রুততার সাথে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে আশেপাশের সুস্থ কোষগুলোকেও নষ্ট করে ফেলে। এই নষ্ট DNA রক্তনালী এবং লসিকানালী দিয়ে দেহের সমস্ত স্থানে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যখন ফুসফুসে এই টিউমার ক্যান্সার হয় তখন এটিকে বলা হয় প্রাইমারি ফুসফুস টিউমার ক্যান্সার। আর শরীরের অন্য অঙ্গ থেকে যদি এই টিউমার ক্যান্সার ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়লে এটিকে বলা হয় সেকেন্ডারি ফুসফুস টিউমার ক্যান্সার।
ধরণঃ
টিউমার ক্যান্সাররের কোষের ভিত্তিতে ফুসফুসের টিউমার ক্যান্সারকে Small Cell ও Non-Small Cell এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ভাগগুলো হচ্ছে স্কোয়ামাস এডিনোকরলিনোমা ও লার্জ সেল।
Small Cell Lung Cancer-
ক্ষুদ্র কোষের ফুসফুস ক্যান্সারে (SCLC) অধিকাংশ চেইন স্মকার বা অতিরিক্ত ধুমপানে আসক্ত মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই ধরণের ক্যান্সার ফুসফুস খুব দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
Non-Small Cell Lung Cancer:
নন-স্মল সেল ফুসফুস ক্যান্সার (NSCLC) হচ্ছে ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ ধরণ। Non-Small Cell Lung Cancer এর ৩টি ধরণ রয়েছে। ধরণগুলো হচ্ছে–
অ্যাডেনোকার্সিনোমাস (Adenocarcinomas):
অ্যাডেনোকার্সিনোমাস ক্যান্সারটি মানুষের গ্রন্থি কোষকে আক্রান্ত করে। এই ক্যান্সার শ্বাসনালীর আস্তরণগুলোতে অবস্থান করে এবং সেখানে শ্লেষ্মা বা কফ সৃষ্টি করে থাকে।
স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা (Squamous Cell Carcinoma):
স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা হচ্ছে কোষের মধ্যে হওয়া ক্যান্সার, যা শ্বাসনালীসমূহের পৃষ্ঠকে আচ্ছাদন করে ফেলে।
বৃহৎ কোষ কার্সিনোমা (Large Cell Carcinoma):
বৃহৎ সেল কার্সিনোমা সেই ক্যান্সার ক্যান্সার কোষ যা মাইক্রোস্কোপের নীচে বৃহত্তর এবং গোল আকৃতিতে দেখা যায়।
এগুলো ছাড়া আরও এক ধরণের ক্যান্সার কোষ ফুসফুস ক্যান্সারের সাথে যুক্ত। যেই ক্যান্সারকে বলা হয় অপ্রকাশিত অ-ক্ষুদ্র কোষযুক্ত ফুসফুস ক্যান্সার। এই কোষগুলো হচ্ছে অনুন্নত ক্যান্সার কোষ।
ফুসফুস ক্যান্সারের কারণসমূহঃ
ফুসফুস ক্যান্সারের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আবার অনেকের কোনো রকম লক্ষণ ছাড়াই ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দেখা যায়।
কারণগুলো হচ্ছে-
★ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধুমপান করা (৮০% রোগী এই কারণে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়),
★ তামাকজাত দ্রব্য সেবন, সুপারি, পানের মসলা, জর্দা, গুল ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস,
★ বংশে কারো ফুসফুস ক্যান্সার থাকলে,
★ ঘনঘন ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়া,
★ নিকেল, ক্রোমিয়াম ও জৈব পদার্থ, বেনজিন বা বেনজোপাইরিন বাতাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে,
★ রেডন গ্যাস, এসবেস্টসের প্রভাব, বিকিরণ, কার্সিনোজেনের সংস্পর্শ এবং অন্যান্য দূষণের প্রভাবে,
* পেট্রোলিয়াম কেমিক্যাল বা রাবার কারখানায় কাজের প্রভাব
★ কোনো মাধ্যমে উৎপাদিত ধোয়ায় শ্বাস নেওয়া।
লক্ষণ:
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণগুলো হচ্ছে-
১. ঘন ঘন কাশি হওয়া এবং কাশি ২১ দিনের বেশি থাকা,
২. কাশির সাথে রক্ত যাওয়া,
৩. ঘন ঘন বুকে সংক্রমণ হওয়া। যেমন ব্রংকাইটিস, নিউমনিয়া ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়া,
৪. বুকে কফ জমে থাকা,
৫. শ্বাসকষ্ট,
৬. কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের ওজন কমে যাওয়া,
৭. খাবারে অরুচি, খিদে কমে যাওয়া,
৮. গলার স্বর পরিবর্তন বা গলার স্বর ভেঙে যাওয়া।
নির্ণয় পদ্ধতি:
বেশ কিছু পরীক্ষার মাধ্যেম ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। এই পরীক্ষাগুলো হচ্ছে-
এক্স-রে:
এক্স-রে হচ্ছে ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। যে কোনো ব্যক্তির জন্য পরামর্শ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী কাশি হলে অবশ্যই এক্স-রে করতে হবে। বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব এবং ধূমপায়ীদের দীর্ঘমেয়াদী কাশি হলে যত দ্রুত সম্ভব এক্স-রে করতে হবে।
সিটি স্ক্যান:
এক্স-রের মাধ্যমে ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলেও সূক্ষ্ণভাবে ফুসফুসের ক্ষত নির্ণয় করতে প্রয়োজন সিটি স্ক্যানের। অর্থাৎ এক্স-রের মাধ্যমে ফুসফুস ক্যান্সার ধরা গেলে দ্রুত একটি সিটি স্ক্যান করাটাও জরুরী।
পেটের সিটি স্ক্যান:
টিউমার থেকে ক্যান্সার দেহের অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে কি না, তা নির্ণয়ের জন্য পেটের সিটি স্ক্যান করানো হয়ে থাকে।
ব্রংকোস্কপি:
এই টেস্টের মাধ্যমে টিউমার ক্যান্সার টিস্যুর বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে ক্যান্সারের অবস্থান বা পর্যায় সম্পর্কে জানা যায়।
FNAC:
FNAC এর মাধ্যমে ফুসফুসের ইনফেকশন থেকে লিকুইড বা রস সংগ্রহ করে ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়।
এসকল টেস্ট ছাড়াও আরও কিছু টেস্টের মাধ্যমেও ফুসফুস ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। টেস্টগুলো হচ্ছে লিম্ফনোড বায়োপসি, প্লুরাল ইফ্যুশন ইত্যাদি।
চিকিৎসাঃ
ফুসফুস টিউমার ক্যান্সারের প্রচলিত চিকিৎসা হলো সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি। আরো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। সর্বাধুনিক ও অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা ও মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশন। যাদের সার্জারি করা যায় না বা করতে চায় না তাদের এ চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটি কার্যকর ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশে গত চার বছরে ২৮০টি ফুসফুস টিউমার ক্যান্সার চিকিৎসা করেছি। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ রোগী এক বছর ভালো আছে, ৭৫ শতাংশ দুই বছর ভালো আছে, ৬৫ শতাংশ তিন বছর ভালো আছে, ৫৭ শতাংশ চার বছর ভালো আছে।
চিকিৎসা:
ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসায় বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ডাক্তার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কোন কোন চিকিৎসা রোগীর উপর প্রয়োগ করা প্রয়োজন। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-
সার্জারি:
ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারি বা অপারেশন। টিউমারের ধরণ, আকৃতি, অবস্থানের পাশাপাশি রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে সার্জারি করা যাবে কি-না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদি ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে, তাহলে সার্জারির মাধ্যমে ফুসফুসের টিউমারটির আংশিক বা সম্পূর্ণটা অপসারণ করে ফেলা হয়৷ অনেক ক্ষেত্রে রোগীর ক্যান্সার মাঝারি পর্যায়ে থাকা অবস্থায়ও সার্জারির নির্দেশ দিতে পারেন ডাক্তার৷ আবার রোগীর অবস্থা ভেদে অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর সম্পূর্ণ ফুসফুসটিকেই অপসারণ করে ফেলতে হতে পারে। সার্জারির বেশ কিছু ধরণ আছে। সেগুলো হচ্ছে-
বেদানাশক নিরীক্ষণ (Wedge Resection):
স্বাস্থ্যকর টিস্যুগুলোর একটি সামান্য মার্জিনের সাথে ক্যান্সারযুক্ত টিস্যুগুলো এই পদ্ধতিতে সরিয়ে ফেলা হয়।
বিভাগীয় নিরীক্ষণ (Segmental Resection):
এই সার্জারির মাধ্যমে লব (lobe) এর একটি বড় অংশ অপসারণ করে ফেলা হয়।
লোবেক্টমি (Lobectomy):
এই পদ্ধতির সার্জারির মাধ্যমে ফুসফুসের একটি সম্পূর্ণ লব (Lobe) বের করে ফেলে দেওয়া হয়।
নিউমোনেক্টমি (Pneuponectomy):
এই পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ফুসফুসকে অপসারণ করে ফেলা হয়।
ফুসফুস ছাড়াও ক্যান্সারের মেটাস্টেসিস (Metastasis) পরীক্ষা করতে বুকের লিম্ফ নোডগুলোও সরিয়ে ফেলা যেতে পারে।
কেমোথেরাপি:
কেমোথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষগুলো সংকুচিত বা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়। এটি মূলত ঔষধ যা স্যালাইনের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করানো হয়। এই কেমোথেরাপি অনেক সময় রোগীর সার্জারির পরবর্তী সময়ে দেওয়া হয় আবার অনেকের ক্ষেত্রে অপারেশনের আগেই দিতে হতে পারে। আবার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সার্জারি ব্যতীত শুধু কেমোথেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। কেমোথেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। এগুলো হচ্ছে- অতিরিক্ত বমি বমি ভাব, চুল পড়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি।
টার্গেটেড থেরাপি:
টার্গেটেড থেরাপি হচ্ছে ক্যান্সারের এমন এক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে ঔষধ বা অন্যান্য পদার্থ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়। এর ফলে ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি, ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া ও বিভাজনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই থেরাপি অন্যান্য চিকিৎসা, যেমন কেমোথেরাপি, সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপির পাশাপাশিও চালানো যেতে পারে।
ইমিউনোথেরাপি:
ইমিউনোথেরাপি বায়োলজিক থেরাপি নামেও পরিচিত। এটি এমন এক ধরনের নতুন পদ্ধতি যার মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়িয়ে তোলা হয়। আর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীর নিজে থেকেই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে নিজেকে সহায়তা করে। ইমিউনোথেরাপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সিস্টেমে কার্যকারিতাকে পুনরুদ্ধার বা উন্নত করতে শরীরে পরীক্ষাগারে তৈরি মেডিসিন ও পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
রেডিয়েশন থেরাপি:
রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে টিউমারগুলো সংকুচিত করার জন্য ক্যান্সার কোষগুলোকে মেরে ফেলতে উচ্চ মাত্রার রেডিয়েশন বীম ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন ডিএনএ (DNA) ধ্বংস করে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলে। ক্ষতিগ্রস্থ ডিএনএ (DNA) যুক্ত ক্যান্সার কোষগুলো বৃদ্ধি পেতে ব্যর্থ হয় এবং কোষগুলো মারা যায়। এরপরে এই কোষগুলো শরীরের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক করা হয়।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী:
প্যালিয়েটিভ কেয়ার, ক্যান্সারের মতো গুরুত্বর অসুস্থতার ব্যথা এবং অন্যান্য লক্ষণসমূহ হ্রাস করার জন্য বিশেষ এক চিকিৎসা। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ইত্যাদির মতো অন্যান্য আক্রমণাত্মক ব্যবস্থাসমূহর পাশাপাশি উপশমের জন্য এই চিকিৎসাটি দেওয়া যেতে পারে। এই চিকিৎসা ব্যথা হ্রাস করে এবং রোগের অবস্থা উন্নত হতে সহায়তা করে।
আধুনিক চিকিৎসা মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশন:
ফুসফুস ক্যান্সার অপারেশনের মাধ্যমে ফেটে ফেলে দেওয়াটা এই রোগের মূল চিকিৎসা হলেও, অনের রোগীর ক্ষেত্রে এই অপারেশন সম্ভব নয়। হতে পারে শারীরিক অবস্থার কারণে অপারেশন সম্ভব হয় না। আবার বয়সও অপারেশনের ক্ষেত্রে বড় একটি ফ্যাক্ট। সে ক্ষেত্রে এই রোগের ক্ষেত্রে অপারেশনের থেকে ভালো কিছু চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। এসবের মধ্যে স্টেরিওট্যাকটিক বডি রেডিওথেরাপি (SBRT), মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশন (MWA) উল্লেখযোগ্য
মূলত সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ক্যান্সারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশন করা হয়। যেন ক্যান্সার টিউমারটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সম্ভব হয়। জেনে খুশি হবেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি আমাদের দেশেও চালু আছে।
ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি, ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব ইন্টারভেনশঅন অনকোলজি, রাপচার স্টাডি গ্রুপের (বিশ্বের সকল নামি ক্যান্সার হাসপাতালের ফুসফুস টিউমার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত গ্রুপ) গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী–
★ যে সকল ফুসফুস ক্যান্সার টিউমার ৪ সেন্টিমিটারের নিচে, তাদের ক্ষেত্রে ৯৭ শতাংশ রোগীর টিউমার মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশন (MWA) এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা সম্ভব। পাশাপাশি রেডিও থেরাপি নেওয়ার মাধ্যমে ১ বছরের মত ৯৫ শতাংশ রোগী, ২ বছরের মত ৮৫ শতাংশ রোগী, ৩ বছরের মত ৭৫ শতাংশ রোগী এবং ৫ বছরের মত ৬২ শতাংশ রোগী রোগমুক্ত থাকে।
★ যাদের ফুসফুস ক্যান্সার টিউমার ৪ সেন্টিমিটারের বেশি, তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ রোগীর টিউমার MWA পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব। পাশাপাশি রেডিওথেরাপি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির মাধ্যমে ৫৭ শতাংশ রোগীকে ৩ বছরের মত রোগমুক্ত রাখা সম্ভব।
★ যাদের ফুসফুস ক্যান্সার টিউমার ৫ সেন্টিমিটার বা তার বেশি, টিউমার বুকের সঙ্গে লেগে থাকে এবং হৃদপিন্ড বা রক্তনালীর সাথে টিউমার লেগে থাকে, তাদের টিউমার ক্যান্সার কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং MWA এই ৩ পদ্ধতির সমন্বিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। শুধু কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির চেয়ে এই পদ্ধতি অনেক ভালো এবং উন্নত।
★ এডভান্স টিউমার ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ব্যথা, কাশির সাথে রক্ত যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে MWA পদ্ধতি দারুণ কার্যকর।
প্রতিরোধে করণীয়
ফুসফুস ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়। তবে এই রোগটি প্রতিরোধযোগ্য। অর্থাৎ আগে থেকে নিজেরা সচেতন হলে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখা যায়। এজন্য কিছু করণীয় হচ্ছে–
১. একদমই ধুমপান করা যাবে না। কেউ ধুমপায়ী হলে তাকে পুরোপুরি এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। আবার ধুমপান করে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শও এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা পরোক্ষ ধুমপানও এই ক্যান্সার তৈরিতে যথেষ্ট দায়ী।
২. শিল্প-কারখানা, গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
৩. সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হবে। ভাজাপোড়া না খেয়ে প্রতিদিন সবুজ তাজা শাক-সবজি, স্যালাদ এবং ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
৪. যক্ষা, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, এজমা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। এসব রোগের কারণে ফুসফুসের আক্রান্ত স্থানে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।
৫. যারা খুব বেশি ধুমপান করে তাদের উচিত নিজেদের ফুসফুস ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা। কারণ ধুমপায়ীদের এই ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সার ধরা পড়লে জটিলতা কমানো যায় বা মৃত্যু ঝুঁকি কমানো যায়।
৬. ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, এসবেস্টস ইত্যাদি বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ সম্পূর্ণরুপে এড়িয়ে চলতে হবে। এসব পদার্থ রয়েছে এমন পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।