মোজা পরায় পায়ে দুর্গন্ধ হয়? বিব্রত ও লাঞ্ছিত হতে হয় আপনাকে? আজ জেনে নিন প্রতিকার কি আর মুক্তি পেতে কী করবেন!
অনেকেই পা সুন্দর রাখতে মোজা পরে জুতা পরার অভ্যাস আছে। এতে পায়ের সৌন্দর্য অটুট থাকলেও দীর্ঘক্ষণ মোজা পরে থাকার কারণে পায়ে দুর্গন্ধ হয়। কিছু মানুষের পা থেকে এমন বিকট দুর্গন্ধ বের হয় যা সহ্যের বাহিরে। আর এ দুর্গন্ধের কারণে অনেক স্থানে হতে হয় অপমানিত ও লজ্জিত। আজ আপনাদের জানাবো এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে থাকার উপায়।
পায়ে দুর্গন্ধ মূলত ব্যাকটেরিয়া এবং ঘামের কারণে হয়। ঘামের মাধ্যমে পায়ে কিছু ছত্রাক জন্মায়। আর এই সকল ছত্রাকের উপস্থিতি পায়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
১) ল্যভেন্ডার অয়েলঃ
পারের দুর্গন্ধ রোধে খুব কার্যকরী একটি জিনিস ল্যভেন্ডার অয়েল। পায়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে এই তেল বেশ কার্যকর। পায়ে কয়েক ফোঁটা ল্যভেন্ডার অয়েল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এর ফলে পায়ের দুর্গন্ধের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। তবে ল্যাভেন্ডার অয়েল ছাড়াও টি ট্রি অয়েল, লেমন অয়েল, পিপারমেন্ট অয়েলের মত কিছু অয়েল ব্যবহার করতে পারেন যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে।
২) চাঃ
চা স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন ভালো তেমনই পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেও বেশ কার্যকর। দুইটি টি ব্যাগ ২ লিটার পানিতে দিয়ে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর টি ব্যাগগুলো পানি থেকে তুলে নিন। এরপর মিশ্রণটি ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকুন। পানি ঠান্ডা হয়ে গেলে ১৫-২০ মিনিট পানিতে পা ডুবিয়ে রাখুন। চায়ে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে এবং পায়ের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। পায়ের দুর্গন্ধ দূর করার পাশাপাশি এই পদ্ধতিটি পা কম ঘামতেও সাহায্য করবে।
৩) অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পায়ের দুর্গন্ধ রোধে এবং ব্যকটেরিয়া রোধে খুবই ভালো একটি উপাদান। একটি বালতি বা গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে তার মধ্যে ১/২ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মেশিয়ে নিন । এরপর ১০-১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে থাকুন এই পানিতে। এতে পায়ে দুর্গন্ধের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। ভিনেগারে থাকা অ্যাসিড দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার কাজ করে।
৪) কর্নস্টার্চঃ
পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে কর্নস্টার্চ ব্যবহার করা যেতে পারে। কর্নস্টার্চ ঘাম শোষণ করে এবং পা’কে ফ্রেশ রাখে। মোজা পরার আগে প্রতিদিন পায়ে কিছু স্টার্চ ছিটিয়ে দিবেন। কর্ণস্টার্চের পরিবর্তে বেকিং সোডাও ব্যবহার করা যায়। এগুলো পায়ের ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক ধ্বংস করে থাকে।
৫) অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডারঃ
পা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি শুকনো পায়ে অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার লাগিয়ে কিছুক্ষণ হাওয়া বাতাস লাগানোর চেষ্টা করুন। বাসায় ফেরার পর কিংবা বাইরে বের হওয়ার সময় এবং বিশেষ করে জুতা মোজা পরার আগে অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করলে পায়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
৬) নিয়মিত পা ধুয়াঃ
পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতে বাইরে থেকে বাড়ি ফেরার পর অবশ্যই পা ভালো করে ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। পরিষ্কার পানিতে অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে প্রায় ১০ মিনিট পা ভিজিয়ে রেখে ভালো করে ধুয়ে নিবেন । তারপর শুকনো ও পরিষ্কার গামছা বা তোয়ালে দিয়ে পা ভালোভাবে মুছে নিবেন।
৭) ফুট ক্রিমঃ
সর্বোপরি পায়ের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং অ্যালার্জি এবং ব্যাকটেরিয়া রোধ করতে অবশ্যই ভালো ফুট ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। ফুট ক্রিম পা কোমল ও মসৃণ রাখতে খুবই ভালো কাজ করে। প্রতিদিন গোসলের পরে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শুকনো পায়ে অবশ্যই এই ক্রিম লাগানোর অভ্যাস করুন।
উপরের সকল পদ্ধতিই একসাথে অবলম্বন করতে হবে এমনটি নয়। আপনার সুবিধা এমন একটি পদ্ধতি বা একাধিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে পায়ের দুর্গন্ধ দূর করে নিজেকে বাঁচাতে পারেন ব্যাকটেরিয়া ও লাঞ্ছনার হাত থেকে।
– Rumel Rahman