দুই ইঞ্চি কাপড়, জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা ।

“দুই ইঞ্চি কাপড়েই ফয়সালা জান্নাত নাকি জাহান্নাম”

বর্তমান অনেক বিষয়েই আল্লাহর হাবীব রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বাণী এবং সমাজের বাস্তব চিত্র সম্পুর্ন উল্টো,
রসুল (সঃ) বলছেন,ছেলেদের পরিধেয় কাপড় থাকবে টাখনুর উপর আর মেয়েদের পায়ের পাতা পর্যন্ত। কিন্তু এখন হচ্ছে  কি?
ছেলেদের কাপড় পায়ের পাতা পর্যন্ত আর মেয়েদের টাখনুর উপর। অর্থাৎ আমলের দিকে আমরা সবাই উলটো পথের পথিক।

আমরা যারা যুবক আছি, সবাই যে প্যান্ট বা লুঙ্গি ব্যবহার করি বলতে গেলে প্রায় সবার কাপড়ই টাখনুর নিচে ঝুলে থাকে। এমনকি জিন্সের প্যান্ট ভাঁজ হয়ে গোড়ালির নিচে ঢুকে যায়। যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন তাদের মধ্যেও অনেকেই এই বিষয়টা নিয়ে সতর্ক নন।
যখন নামাজ পড়ি প্যান্ট গুটিয়ে রাখি। আর অন্য সময় আবার আগের মত। চলুন জানি এই বিষয়ে আল্লাহর হাবীব (সঃ) কি বলেছেন,

১. “ছেলেদের পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নিচে থাকবে সে অংশ জাহান্নামে যাবে” বুখারী-৫৭৮৭.

২. “বিচারের মাঠে আল্লাহ তায়া’লা ঐ ব্যক্তির দিকে তাকাবেন না, আল্লাহর দয়া ও রহমত দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে তার গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না যে ব্যক্তি অহংকার বশত পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে পরিধান করে”
-বুখারী-৫৭৮৮.

অনুরুপ হাদিস বর্ণিত সহীহ মুসলিমেও দেখে নিতে পারেন,
৫৩৪৬ থেকে ৫৩৫৬ পর্যন্ত।

অনেককেই বলতে শুনি, ভাই আমি তো অহংকার বশত কাপড় ঝুলিয়ে পড়ছি না। তাকে জিজ্ঞেস করবেন তাহলে কেন আপনি প্যান্ট কেটে নিচ্ছেন না? তখন উত্তর পাবেন,
ভাই টাখনুর উপর প্যান্ট পড়লে কেমন জানি লাগে, বন্ধুরা নানা কথা বলে।
এই যে কেমন কেমন লাগে,
এটাই আপনার অহংকার।

আবার অনেকে বলে, ধুর ভাই
ঐটুকু জায়গা জাহান্নামে দিলে ক্ষতি কি? চলুন বোঝার চেষ্টা করি-
বিষয়টা এমন না যে টাখনু থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত কেটে শুধু ঐ অংশ টুকু জাহান্নামে দেওয়া হবে আর আপনি জান্নাতে বসে হাওয়া খাবেন। আবার অনেকেই বলে আরে ভাই জাহান্নামে গেলেও দু’একদিন পর ঠিক আবার জান্নাতে চলে আসবো।
জাহান্নাম আমাদের মামার বাড়ি না যে, যখন ইচ্ছা গেলাম মামির হাতের মোয়া মুড়ি খেয়ে আবার চলে আসলাম।
জাহান্নামের আগুন কি আমরা ১ মিনিট সহ্য করতে পারবো? যাই হোক, এই বিষয়টার জন্য আপনাকে আমাকে যদি জাহান্নামিদের মধ্যে সব থেকে কম শাস্তিও দেওয়া হয় আপনার আমার অবস্থা কি হবে জানেন?
জাহান্নামিদের মধ্যে সব থেকে কম শাস্তি দেওয়া হবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর চাচা আবু তালিবকে। তার পায়ে পড়ানো হবে আগুনের জুতা। শুধু এতেই তার মাথার মগজ টগবগ করে গলে গলে পড়তে থাকবে। সহীহ বুখারী-৩৮৮৫.
ভাবুন তো সহ্য করতে পারবেন কি না?

আবার অনেক বোকা বলে,
দু’চারদিন জাহান্নামে শান্তি দিয়ে আল্লাহ তো জান্নাত দিবেনই।
অনেক সহী হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, “জাহান্নামের গভীরতা হবে ৭০ বছরের পথ”
( রিয়াদুজ সলেহিন-২০৬,৪০৯.)
“জাহান্নামের গভীরতা হবে ৭০ হাজার বছরের পথ”
সহীহ মুসলিম-৩৭০.
ধরে নিলাম ৭০ বছর। তো যেখানে জাহান্নামের তলদেশে যেতেই সময় লাগবে ৭০ বছর সেখানে এটা ভাবেন কিভাবে হিসেবে দু চারদিন জাহান্নামে শান্তি ভোগ করার পর জান্নাতে চলে যাবেন?

দুইটা হাদিস বলেই আমার কথা শেষ করছি,

“কেউ নিজের আমল দিয়ে জান্নাতে যেতে পারবে না যদি আল্লাহ দয়া,রহম,অনুগ্রহ না করেন” সহীহ বুখারী-৫৬৭৩.

“আল্লাহ তা’য়ালার ১০০ ভাগ দয়া, রহমত এর মধ্যে শুধুমাত্র  ১ ভাগ সমস্ত সৃষ্টিকুলের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন আর ৯৯ ভাগ দয়া, রহমত নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন বিচারের মাঠে বান্দার জন্য রহমত প্রদর্শন এর জন্য” ইবনে মাজাহ-৪২৯৩.

ভাইয়েরা, এই দুটা হাদিস থেকে দুটি বিষয় স্পষ্ট, আল্লাহর দয়া, আর করুণা ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। আর আল্লাহ ৯৯ ভাগ দয়া, করুণা নিজের কাছে রেখেছেন কঠিন বিচারের দিনে আমাদের মাফ করার জন্য।

একটু ভাবুন তো,
টাখনুর নিচে প্যান্ট পড়ার কারণে যদি আল্লাহ আমাদের দিকে না তাকান,
তাহলে কি আমরা আল্লাহর দয়া বা অনুগ্রহ পাবো?
আল্লাহ কি আমাদের মাফ করবেন?
পারব কি জান্নাতে যেতে?

নিজেকে নিয়ে একটু ভাবুন।
খুব ছোট্ট একটা বিষয় চাইলেই আমরা আল্লাহর দয়া আর অনুগ্রহ নিয়ে জান্নাতে যেতে পারি।
আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন।

আমিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *