গত পোস্টে লিখেছিলাম জন্ডিসে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যে কাজটি অবশ্যই করতে হবে সেটি হচ্ছে তেল ও মসলাযুক্ত খাবার পরিহার, বাহিরের খাবার পরিহার, ভারি কাজ ও অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি পরিহার, গরম ও তাপ পরিহার করে বিশ্রাম বিশ্রাম আর বিশ্রামে থাকার জন্য।
পাশাপাশি জন্ডিস কি? বিলুরুবিন বেড়ে গেলে কি হয়, জন্ডিস কত প্রকার, জন্ডিস হলে কি করবেন ও কি করবেন না এসকল বিষয়ে ধারণা দিয়েছিলাম আপনাদের।
আজ আপনাদের জানাবো,
★ জন্ডিসে ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কার,
★ জন্ডিসের লক্ষণ,
★ জন্ডিসে আক্রান্ত হলে কি খাবেন এবং
★ জন্ডিসের চিকিৎসা সম্পর্কে।
আসুন তাহলে জন্ডিস সম্পর্কে তথ্যগুলো জানি।
ভ্রান্ত ধারণা বা কুসংস্কারঃ
সত্য বলতে আমরা রোগাক্রান্ত হলে বা রোগমুক্ত থাকতে যতটা না সচেতন, রোগাক্রান্ত হলে তার থেকে অনেক গুন বেশি কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আতঙ্কে থাকি।
বিশেষ করে এই জন্ডিস আর কুকুর বা সাপের কামড়ে ভুক্তভোগী মানুষগুলোকে আমাদের সমাজ আরও বেশি কুসংস্কারে নিমজ্জিত করে ফেলে। এমন কিছু কুসংস্কার তুলে ধরছি আপনাদের কাছে।
১. কবিরাজি চিকিৎসা ও নানা পরা খাদ্য:
জন্ডিস হলে গুড় পরা, ডাব পরা, কাসা বা পিতল ঠেকানো, মাথা ধোয়া, হাত ধোয়া, লিভার খিলানো ( গরম লোহা বা পয়সা দিয়ে ছ্যাঁক দেওয়া), আঙটি পড়ানো, কবিরাজি ঔষধ খাওয়ানো এমন অনেক ভ্রান্ত ও কুসংস্কার আমাদের সমাজে প্রচলিত। আবার অনেক কবিরাজ ধোয়া দিয়ে রোগীর শরীরের জন্ডিস সাড়িয়ে দেয় এমনটাও দাবি করে। প্রথম ৭ দিন এসব পরা জিনিস খেয়ে বা ঝার ফুঁ রোগীর শরীরে কোন পরিবর্তন না আনলেও ২য় সপ্তাহে রোগীর শরীরে পরিবর্তন আনে এমনটাও অনেকে বিশ্বাস করে, বা রোগীর শরীরে আসলেই ৭ বা ১৪ দিনের পর থেকে পরিবর্তন বা রোগী সুস্থ হচ্ছেন এমনটা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই সুস্থ হওয়াটা আসলে এসব পরা জিনিস খাওয়া বা ঝার ফুঁ এর কেরামতি নয়।
আসল বিষয়টি হচ্ছে রোদে বা গরমে না গেলে, আর পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকলে ৭ দিন পর থেকে রোগীর রক্তের বিলুরুবিনের পরিমাণ একা একাই কমতে থাকে। আর এই কারণেই রোগীর চোখ, মুখ এবং দেহের ত্বকের হলুদ বর্ণ কমে যেতে থাকে। আর আক্রান্ত ব্যক্তির ৭-২৮ দিনের মধ্যে হলুদ বর্ণ সম্পূর্ণ দূর হয়ে যায়। এতেই বুঝা যায় রোগীর রক্তে বিলুরুবিন বা দেহের জন্ডিস নিরাময় হয়ে গেছে।
সুতরাং, কবিরাজের চিকিৎসা বা এসব ঝার ফুঁ জন্ডিসের কোন চিকিৎসা তো করেই না, পক্ষান্তরে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কবিরাজি ঔষধ খেয়ে রোগীর লিভার ক্ষতিগ্রস্ত, এমনকি টিউমার থেকে ক্যান্সারে রুপ নিয়ে নেয়। যা পরবর্তীতে রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
২. জন্ডিসে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা নেই:
আমাদের সমাজের প্রায় সকল জায়গাতেই এই কথাটি প্রচলিত যে, জন্ডিসে অ্যালোপ্যাথি কোন চিকিৎসা নেই বা অ্যালোপ্যাথি ঔষধ আবিষ্কার হয় নি। তাই কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
হ্যাঁ, আমিও বলছি জন্ডিসের অ্যালোপ্যাথি কোন ঔষধই নেই। আসলে ঔষধ তো রোগ নির্মূলের জন্য বানানো হয়। আমি আগের পোস্টেই বলেছিলাম জন্ডিস কোন রোগই নয়। এটি অন্য গুরুতর রোগের উপসর্গ মাত্র। যেহেতু এটি রোগ নয়, তাই এর কোন ঔষধেরও প্রয়োজন নেই। শুধু অ্যালোপ্যাথি নয়, হোমিও, ভেষজ বা অন্য কোন কিছুই জন্ডিসের কোন ঔষধ নয়।
তবে আপনার শরীরে জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। কারণ, ডাক্তার কিছু টেস্টের মাধ্যমে এটা নির্ণয় করবে যে আপনি কোন ধরনের জন্ডিসে আক্রান্ত। এবং আপনি কি কারণে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব নির্ণয় করার পরে আপনার চিকিৎসা কি পদ্ধতিতে হবে সেই বিষয়ে আপনাকে পরামর্শ প্রদান করবেন। আপনি যদি ভাইরাল জন্ডিস অর্থাৎ হেপাটাইটিস জনিত কারণে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে ডাক্তার আপনাকে বিশ্রামের পরামর্শ দিবেন। পাশাপাশি আপনার লিভার ফেইলর জনিত মারাত্মক সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না সে দিকে ডাক্তার লক্ষ্য রাখবেন।
৩. জন্ডিস হলে বারবার ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করতে হবেঃ
আমাদের বাপ-দাদার জেনারেশন জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অনেকে পালনও করে থাকে।
কিন্তু, জন্ডিসের সাথে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পানের কোন সম্পর্ক নেই। ফ্রিজের অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি মানুষকে সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা জনিত সমস্যায় আক্রান্ত করার পাশাপাশি নিউমনিয়ার মত মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। আবার ফ্রিজের ঠান্ডা পানি শরীরে চর্বি জমতে সহায়তা করে বলেও বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। তাই অতিরিক্ত ফ্রিজের পানি পান না করে টিউবওয়েল থেকে চাপ দিয়ে টাটকা পানি পান করতে পারেন।
৪. বারবার গোসল করতে হবেঃ
বারবার গোসল করলে জন্ডিস কমে যায় বা ভালো হয়ে যায় এমন ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে আমাদের অনেকের মধ্যেই। এই ধারণাটি মোটেও ঠিক নয়। দিনে ১ থেকে ২ বার স্বাভাবিক গোসল করাই যথেষ্ট। গোসল শরীরের ময়লা পরিষ্কার করে, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।
৫. জন্ডিস হলে হলুদ দিয়ে রান্না করা তরকারি খাওয়া যাবে নাঃ
অনেকেই এই ভ্রান্ত ধারণা বিশ্বাস করে যে, জন্ডিস হলে হলুদ দিয়ে রান্না করা তরকারি খেলে জন্ডিস ভালো হয় না। জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেশের সকল জেলাতেই হলুদ দেওয়া তারকারি খেতে দেওয়া হয় না। খেয়াল করে দেখবেন, খাবার হলুদের রঙ আর জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে এমন ব্যক্তির গায়ের বা চোখের হলুদ রঙ একই নয়। হলুদ যুক্ত খাবার খেলে জন্ডিসের প্রভাব বাড়ে না। ভাইরাল জন্ডিস অর্থাৎ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর মুখে এমনিতেই খাবারের রুচি থাকে না। এসময় হলুদ ও মসলাবিহীন খাবার খাওয়ালে মুখের রুচি আরও কমে যায়। এর ফলে রোগী কিছুই খেতে পারে না। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তি অপুষ্টিতে ভুগতে পারে।
আমাদের সকলেরই উচিত অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়া। আর জন্ডিস বা যে কোন রোগীর ক্ষেত্রে মসলা ও তেলের পরিমাণ কমিয়ে রান্না করা উচিত। তাই বলে এই নয় যে একেবারে মসলা বাদ দিয়ে খাবারের স্বাদ নষ্ট করে খাওয়াতে হবে।
৬. বারবার ডাবের পানি, আখের রস, লেবুর শরবত খেলে জন্ডিস ভালো হয়ঃ
জন্ডিস হলে ডাবের পানি, আখের রস বা লেবুর শরবত থেকে জন্ডিস সেরে যায়, এমন ভ্রান্ত ধারণা আমাদের প্রায় সকলের মধ্যেই রয়েছে। আর এই ধারণার কারণে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আখের রস, ডাবের পানি নিয়ে এসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পান করিয়ে থাকে।
এসব পানীয় শরীরের জন্য উপকারী এই কথাটি সত্য। তবে এগুলো জন্ডিসের ঔষধ নয় বা এগুলো জন্ডিস ভালো করে না। অতিরিক্ত ডাবের পানি ও আখের রস বা লেবুর শরবত পান করলে পেটে গ্যাস হয়ে থাকে।
সুতরাং, কষ্ট করে দূর দূরান্ত থেকে এসব সংগ্রহ করার প্রয়োজন নেই। হাতের কাছে থাকলে পান করাতে পারেন। পান না করালেও কোন ক্ষতি নেই।
৭. মেটে জন্ডিসঃ
গ্রামগঞ্জে ‘মেটে জন্ডিস’ কথাটির বেশ প্রচলন রয়েছে। কোন ব্যক্তির খাবারে অরুচি দেখা দিলেই গ্রামের মানুষ ভেবে নেয় মানুষটির মেটে জন্ডিস হয়েছে। অত:পর ঝার ফুঁ ও কবিরাজি চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়। আসলে মেটে জন্ডিস বলে কোন জন্ডিসই নেই।
জন্ডিসের লক্ষণঃ
বাহ্যিক কিছু লক্ষণ দেখেই বলে দেওয়া যায় একজন ব্যক্তি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব লক্ষণ হচ্ছে,
★ চোখ ও প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয়ে যাওয়া,
★ ত্বক বা মুখের ভিতরে হলুদ বর্ণ ধারণ হওয়া,
★ খাবারে অরুচি,
★ খাবারে গন্ধ অনুভব করা,
★ ক্ষুধামন্দা,
★ বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া,
★ জ্বর জ্বর ভাব,
★ কখনও কখনও পেট ব্যথা হতে পারে, এবং
★ কখনও কখনও পায়ে বা ত্বকে চুলকানি হতে পারে।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে রক্তে বিলুরুবিনের পরিমাণ এবং লিভার এনজাইমগুলো পরীক্ষা করার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে কোন ধরনের জন্ডিসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে তা নির্ণয় করা হয়। এবং আক্রান্ত ব্যক্তি কেন জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে তা নির্ণয়ের জন্য ভাইরাস টেস্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তির খাবারঃ
জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার ঠিক রাখতে এবং বিলুরুবিনের মাত্রা কমাতে কিছু খাবার গ্রহণের পাশাপাশি কিছু খাবার পরিহার করতে হবে। কি কি খাবার খাবেন আর কি কি খাবার এড়িয়ে যাবেন আসুন আজ জেনে নেই।
যে সকল খাবার খাবেনঃ
★ গোটা শস্য:
জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তি কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণে বাদামি চালের ভাত, রুটি এবং ওটস খেতে পারেন। ছোলা ও বুট জাতীয় খাবার খেতে পারেন পর্যাপ্ত পরিমাণে। গোটা শস্যে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার এবং ভিটামিন থাকে। এসব উপাদান শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়।
★ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ
জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মাছ, মুরগীর মাংস, ডাল পরিমাণমতো রাখতে হবে। প্রোটিন দেহে শক্তি জোগায়। এসময় প্রোটিন জাতীয় খাবার না খেলে আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। আর দূর্বলতা রোগ প্রতিরোধে বড় একটি বাঁধা।
জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তি মাছ-মাংস খেতে পারবে না, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য।
★ ফল:
পেঁপে, তরমুজ,পাকা আম, কলা, আনারস, জাম, জলপাই, তরমুজ, অ্যাভোকাডো, কমলা, আনারস, পেয়ারা, আমলকি, বেরি ইত্যাদি ফল প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় রাখবেন। বিশেষ করে, ভিটামিন সি যুক্ত ফল প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
★ সবজি:
বিটরুট, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, মূলা, বরবটি, করল্লা জাতীয় খাবার জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থতায় খুব ভালো কাজ করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এসকল সবজি ও শাক রাখাতে হবে।
★ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার:
লেবু ও বাতাবি লেবুর শরবত জন্ডিস আক্রান্ত রোগীর জন্য খুবই উপকারী খাদ্য। এই শরবতগুলো শরীরে পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। এসব ছাড়াও প্রতিদিন পরিমাণমতো বাদাম খেতে পারেন। দিনে এক থেকে দুইবার সামান্য আদা বা রসুন কুচি, আদার রস বা আদা চা পান করতে পারেন। এসব খাবার লিভারের জন্য খুবই উপকারী।
★ পানি:
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এটি শুধু জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তিকেই নয়, প্রতিটি সুস্থ মানুষের উচিত দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস বা ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করা। এথলেটদের বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হয়। তারা তাদের পরিমাণ অনুযায়ী পানি পান করবেন। তবে একসাথে বেশি করে পানি পান করার প্রয়োজন নেই। পানি শরীরের ভিতরে থাকা ময়লা এবং ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। আখের রস, ডাবের পানি এসবও শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তবে রাস্তার পাশ থেকে আখের রস না কিনে বাসায় আখ নিয়ে এসে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে সেখান থেকে রস বের করে পান করাটাই শ্রেয়।
যে সকল খাবার খাওয়া যাবে নাঃ
★ ভাজা-পোড়া:
তেলে ভাজা খাবার পরিহার করতে হবে জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে। বাহিরে বানানো পেয়াজু, চপ, কিমা তো খাওয়া যাবেই না। তার সাথে বাসায় বানানো এসব খাবারও পরিহার করে চলতে হবে।
কাচ্চি, বিরিয়ানি, রোস্ট এসকল অতিরিক্ত মসলাদার খাবারও একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে।
★ দুগ্ধজাতীয় খাবার:
জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তির ফুল ক্রিম দুধ বা দই, পনির, মাখন, মাঠা, লাবাং ইত্যাদি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। এসব খাবার খেলে আক্রান্ত ব্যক্তির স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেড়ে যায়। আর এটি লিভারের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
★ চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
★ অ্যালকোহল পান করা যাবে না।
★ সফট ড্রিংক পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
★ রেড মিট (গরু, ছাগল, মহিষ) এর মাংস খাওয়া যাবে না।
★ ট্রান্স ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবেঃ
সাধারনত রক্তে সেরাম বিলুরুবিনের মাত্রা ৩ এর বেশি হলে তাকে বলা হয় ক্লিনিক্যাল জন্ডিস। আর এই মাত্রার কম হলে তাকে সুপ্ত জন্ডিস বলা হয়ে থাকে। সুপ্ত জন্ডিস বা বিলুরুবিনের মাত্রা ৩ থেকে কিছুটা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ বা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে এবং সেই সাথে রোদ, তাপ, দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা, ভাজাপোড়া, তেল অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করে পুষ্টিকর খাবার খেলেই জন্ডিস ভালো হয়ে যায়।
তবে কিছু কিছু জটিলতা দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। জটিলতাগুলো হচ্ছে-
১. রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে,
২. রোগী মুখ দিয়ে কোন খাবার খেতে না পারলে এবং অতিরিক্ত বমি হতে থাকলে।
৩. আনুষাঙ্গিক কোন রোগ: যেমন ডায়াবেটিস, হাই প্রেসার, হার্টের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, ক্যান্সার ইত্যাদি থাকে এবং এসবের পরিমাণ বেড়ে যায়।
৪. যদি আক্রান্ত মহিলা গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং গর্ভাবস্থায় সমস্যা বেড়ে যায়। এবং
৫. আক্রান্ত ব্যক্তি অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকলে দেরি না করে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
এক্ষেত্রে চিকিৎসাসমূহ:
উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলো দেখা দেওয়া রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এম. আর. আই এবং এক্স-রে করতে দেওয়ার পাশাপাশি পুনরায় ব্লাড টেস্ট করতে দিবেন।
★ আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে লিভার, গলব্লাডার এবং বিলয়ারী ট্র্যাক্টের মধ্যে গঠনগত কোন অস্বাভাবিকতা যেমন- টিউমার, ফোঁড়া, টিস্যুর বিকৃতি ( লিভার সিরোসিস, গলব্লাডারে পাথরের উপস্থিতি বা নাইল ডাক্ট জ্যাম হয়ে যাওয়া) ইত্যাদি আছে কি না সেই বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।
★ সিটি স্যানিং (CT Scanning) এর মাধ্যমে পেটের চমৎকার প্রতিবিম্ব পাওয়া যায়। এতে করে লিভার টিউমার, ফ্যাটি লিভার এবং লিভারে অন্যান্য পদার্থের উপাদান থাকলে তা স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
★ এম. আর. আই (MRI)- এর মাধ্যমেও লিভারের পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায়। বিশেষ করে লিভারে থাকা সূক্ষ্ম টিস্যু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। এতে রোগ নির্ণয় করা সহজতর হয়।
★ এক্স-রের মাধ্যমে সাধারণত গলব্লাডারে পাথর আছে কি না তা সহজে নির্ণয় করা যায়।
★ ব্লাড টেস্ট: ডাক্তার পুনরায় ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা, ব্লাড সেলসমূহ এবং ইনফেকশন আছে কি না এসব বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যাবে।
আসুন সতর্ক থাকি। কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার পাশাপাশি আমাদের আশেপাশে কোন ব্যক্তি জন্ডিসে আক্রান্ত হলে তাকেও পরিপূর্ণ ও সুব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়ার জন্য উৎসাহিত করি।