চুল পড়া কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়?

চুল সৌন্দর্য্যের অন্যতম একটি প্রতীক। ছেলে হোক বা মেয়ে, ঘন কালো চুল চেহারায় অন্য রকম এক আকর্ষণ তৈরি করে দেয়। কে না চায় তার মাথা ভর্তি ঘন চুল থাকুক। অনেকেই ঘন চুলের অধিকারী হয়ে থাকেন। একটা প্রবাদ বাক্য আছে ‘ চুল থাকলে চুল ঝরবে ‘।

চুল ঝরা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু তা যদি হয় সীমিত। অনেকেই লক্ষ্য করে দেখবেন হঠাৎ করে চুল পড়ার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। আর এমন পরিস্থিতিতে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষই ধারণা করে থাকেন ভিটামিনের অভাবে এমনটা হচ্ছে। ফলে অনেকেই ভিটামিন-ই ক্যাপসুল খেয়ে থাকেন আবার অনেকেই মেহেদি, মেথির গুড়ো, নারিকেল তেল, বাদামের তেল, জবা ফুলের রসসহ নানা ধরণের উপকরণ দিয়ে চুলের যত্ন নেওয়া শুরু করি। আবার এসব উপকরণের সাথে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মিশিয়েও শুরু করে দেয় চুলের যত্ন নেওয়া। কিন্তু, এত কিছু করার পরেও ফলাফল শূণ্য।

প্রথমেই আমাদের জেনে নিতে হবে শুধুমাত্র ভিটামিনের অভাবেই চুল ঝরে পড়ে না। ভিটামিন ব্যতীত কিছু রোগ আছে, যার প্রভাবে ঝরে পড়তে পারে আমাদের চুল। আসুন জেনে নেই শরীরে যে সকল রোগের উপস্থিতি বাড়িয়ে দিতে পারে চুল পড়া।

প্রথমেই বলেছি, চুল ঝড়ে পড়া এবং আবার চুল গজানো স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে গরম কালে বেশিরভাগ মানুষ এই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। আবার অনেকের চুল ঝরে যাওয়ার পরে নতুন চুল গজায় না। ফলে এক সময় চুল পড়ে গিয়ে টাক হয়ে যাওয়ার প্রবণতাও অনেকের মাঝে দেখতে পাওয়া যায়।

এছাড়াও,  অত্যধিক মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়মিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস এবং দূষণের প্রভাবেও চুলের খুবই ক্ষতি হয়ে থাকে। আবার পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকলেও চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়।

হেয়ার এক্সপার্টদের মতে, শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অস্বাভাবিক ফারে চুল ঝরে পড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন না কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। তাই অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যাকে একেবারে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।

আসুন জেনে নেই কি কি রোগের প্রভাবে আমাদের চুল অত্যধিক হারে ঝড়ে পড়া শুরু হয়।

মানসিক সমস্যাঃ 

বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত পরিমাণে চুল ঝরে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ। মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে পারলে চুল পড়ে যাওয়ার পরিমাণও কমে আসে। তাই চুল পড়া রোধ করতে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মত প্রদান করছেন এসব বিশেষজ্ঞগণ।

মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে ভ্রমণ, নামাজ/প্রার্থনা, কোরআন/ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ, যোগাভ্যাস অথবা মেডিটেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

থাইরয়েডঃ

কোন ব্যক্তি থায়রয়েডে আক্রান্ত হলে এর প্রভাবে চুল ঝরে পড়তে পারে। থায়রয়েড দেহ থেকে হরমোন, ক্যালশিয়াম ও আয়রনের মত খনিজ পদার্থ শোষণ করে নেয়। আর এই খনিজ পদার্থগুলো চুলের স্বাস্থ্যের খুবই ভালো উপাদান। হাইপার থায়রয়েডিজম এবং হাইপো থায়রেডিজম এই উভয় ধরণের প্রভাবেই অস্বাভাবিকভাবে চুল ঝরে পড়া শুরু হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, থায়রয়েডের প্রভাবে চুল ঝরে পড়ার পাশাপাশি স্মৃতিশক্তিকেও প্রভাবিত করে। এজন্য অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় ভুগতে থাকলে থায়রয়েড টেস্ট করে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম— উভয় রোগের ক্ষেত্রেই রোগীর চুল ঝরতে শুরু করে।

অ্যালোপেসিয়াঃ

আমাদের আশেপাশে অনেককেই দেখতে পাওয়া যায় যাদের মাথায় গোল গোল চাকতির মত হয়ে চুল পড়তে শুরু করে। এই সমস্যাটিকে বলা হয় অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটা। যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে চুলের ফলিকগুলোকে আক্রমণ করে, তখন আক্রান্ত ব্যক্তির মাথায় গোল গোল চাকতির মত হয়ে চুল ঝরে পড়া শুরু করে। এই রোগের প্রভাবে শুধুমাত্র মাথার চুলই ঝড়ে পড়ে এমনটা নয়। মাথার ত্বকের পাশাপাশি মুখেও এই রোগ আক্রমণ করতে পারে। যার ফলে চুলের পাশাপাশি মানুষের দাড়ি,মোচ এমনকি ভ্রুর রোমও ঝরে যেতে পারে।

এক্সিমা এবং পোরিওসিসঃ

প্রদাহজনিত এই দুইটি রোগের কারণে মাথাও ও মুখমন্ডলে চুলকানি অথবা র‍্যাশ হতে পারে। ফলে ঝরে পড়তে পারে চুল ও দাড়ি। শুধু চুল ঝরে পড়াই না, এই দুই রোগের প্রভাবে কমে যেতে পারে চুলের ঘনত্বও।

পিসিওডিঃ

অনেক মহিলা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত এই রোগটি হরমোনের সাম্যতা বজায় না থাকার কারণে হয়ে থাকে। এই রোগে আক্রান্ত হলে সেই নারী অত্যাধিক চুল পড়া, চুলের রুক্ষতা ও শুষ্কতা, চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার মত সমস্যায় ভুগতে থাকেন।

অ্যানিমিয়াঃ

শ্যাম্পু করার সময় যদি অতিরিক্ত হারে চুল ঝরে যাচ্ছে এমনটা লক্ষ্য করেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার দেখে বাসা বেঁধেছে অ্যানিমিয়া নামক রক্ত স্বল্পতা জনিত রোগ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের মতে, অ্যানিমিয়া আক্রান্ত নারীর সংখ্যা আজকাল অধিক পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। শতকরা ৭০-৭৫ শতাংশ নারী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এনিমিয়ায় আক্রান্ত শতকরা ৯০ শতাংশ নারী অতিরিক্ত পরিমাণে চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন।

 

–Rumel Rahman

3 thoughts on “চুল পড়া কোন কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়?”

Leave a Comment