প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস কিঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস হচ্ছে পায়ের পাতার নিচে অবস্থিত এক ধরনের মোটা টিস্যু যাকে আমরা পায়ের তালু হিসেবে জানি। টিস্যুটিকে বলা হয় ফ্যাসিয়া। এই ফ্যাসিয়া গোড়ালির হাড়কে পায়ের আঙুলের সাথে যুক্ত করে। যার প্রভাবে পায়ের পাতা ধনুকের ছিলার মতো আকৃতি গঠন করে থাকে। প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়ার প্রদাহ বা জ্বালাপোড়াকে বলা হয় প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস। পায়ের পাতায় সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয় এমন রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। এই রোগটি ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। এই রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তিকে পঙ্গু বা চলাচলে অক্ষম করে দিতে সক্ষম।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের লক্ষণঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের মাধ্যমে ব্যথা সৃষ্টি হয়। প্রথমিকভাবে এই ব্যথা পায়ের গোড়ালিতে তৈরি হয় এবং গোড়ালির নিচের অংশে ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথাকে অবহেলা করা হলে ধীরে ধীরে ব্যথা পায়ের আঙুলের গোড়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
এই ব্যথা মৃদু থেকে ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। যা অত্যন্ত বেদনা বা কষ্টদায়ক। এই রোগের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আসুন জেনে নেই কি কি বৈশিষ্ট্য থেকে এই রোগটির বিষয়ে সচেতন হওয়া সম্ভব।
১. সকালে বিছানা থেকে উঠার পরে গোড়ালি বা তালুতে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়,
২. দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা হতে পারে,
৩. বাস, বিমান, মটর সাইকেল বা অন্য কোন যানবাহনে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে বা ভ্রমণের শেষে ব্যথা হতে পারে,
৪. দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ রান্না বা অন্য কাজ করলে ব্যথা হতে পারে,
৫. শীতের কারণে ব্যথা হতে পারে,
৬. গোড়ালির মাঝে বা একপাশেও এ ব্যথা হতে পারে।
ঘুম থেকে উঠার পরে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরে এই ব্যথা কমতে থাকে। ব্যথা কমার কারণে বা অস্বস্তি ভাব দূর হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এই ব্যথাকে অবহেলা করতে থাকে। ব্যথা কমে যাচ্ছে এমনটা ভেবে অধিকাংশ মানুষই চিকিৎসার প্রয়োজন নেই মনে করে স্বাভাবিক চলাফেরা শুরু করে। যার ফলে বাড়ে ব্যথার তীব্রতা। আর সময়ের সাথে সাথে এই ব্যথা এবং রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। যার ফলে রোগীকে সুস্থ্য করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় দেরি হয়ে যাওয়ায় অনেক রোগীকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হয়।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের কারণঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া প্ল্যান্টার খিলানকে রক্ষণাবেক্ষণ এবং দাঁড়িয়ে থাকার সময় বা একভাবে দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে থাকা এবং হাঁটার সময় পায়ে শরীরের ওজন বহন ও বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরের ওজন বহনের এই প্রক্রিয়া বারবার ঘটতে থাকে এবং দীর্ঘক্ষণ হাঁটা, দাঁড়িয়ে থাকা ইত্যাদি সময়ের সাথে পায়ে চাপ বাড়াতে থাকে।
পায়ে অতিরিক্ত চাপ, বিশেষ করে গোড়ালির দিকে বেশি চাপ পড়লে জ্বালা বা প্রদাহজনক সমস্যা অনুভব হতে পারে।
ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়া ব্যথায় রুপান্তর হয়।
আবার ক্রমাগত পায়ে অতিরিক্ত চাপের প্রভাবে মাইক্রোট্রোমাসের সমস্যা হতে পারে। যা সময়ের সাথে সাথে কোলাজেনের সমস্যা তৈরি করে পায়ের পাতার কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটায়। এই কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে পেরিফ্যাসিয়াল এলাকা ফুলে যায়, যা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস বা প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়ার ক্যালসেনিয়াল এনথেসোপ্যাথি নামক রোগ সৃষ্টি করে।
গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির লক্ষণঃ
★ পায়ের গঠন পরিবর্তন। যেমন সমতল পা, ফাঁপা পা অতিরিক্ত মোটা পা।
★ পায়ের পিছনে এবং অ্যাকিলিস টেন্ডনের কাঠামোর প্রসারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
★ প্ল্যান্টার ফ্লেক্সর পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যাওয়া।
এই কারণগুলো হিল স্ট্রাইক ফেজের সময় প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়ার উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে যখন আমাদের পা মাটি থেকে উপরে উঠে, তখন এটি ফ্যাসিয়ার শক শোষণের ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
রোগের সূত্রপাতকে প্রভাবিত করতে পারেঃ
★ বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্ল্যান্টারের পেশী এবং লিগামেন্টের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পেতে থাকে।
★ অতিরিক্ত ওজন বা মোটা শরীর পায়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করে, ফলে পায়ে ব্যথা এবং প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস হতে পারে।
★ দীর্ঘক্ষণ জুতা পরে থাকার ফলে এই রোগ হতে পারে। আমরা সচরাচর যে সকল জুতা পড়ে থাকি সেগুলো সচরাচর খুব শক্ত হয়ে থাকে। শক্ত জুতা পায়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং পায়ে প্রদাহ আর ব্যথা সৃষ্টি হয়।
★ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করার ফলে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস হতে পারে।
ভুল জুতা পরিধান ফ্যাসাইটিস রোগের অন্যতম একটি কারণ। পায়ের মাপ অনুযায়ী সঠিক সাইজ এবং আরামদায়ক জুতা বা স্যান্ডেল পরিধান না করলে পায়ে অতিরিক্ত প্রেশার পড়ে। আর এর ফলে পায়ে ব্যথা সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
যে সকল স্যান্ডেল বা জুতা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত করতে পারে
১. ছোট বা টাইট এমন জুতা ব্যবহার করলে,
২. খুব নিঁচু স্যান্ডেল বা জুতা পড়লে,
৩. সমতল বা ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পড়লে,
৪. হাই হিল জাতীয় স্যান্ডেল পড়লে,
৫. শক্ত সোলের স্যান্ডেল বা জুতা পড়লে,
৬. খুব নরম স্যান্ডেল বা জুতা পড়লে।
এসব জুতা বা স্যান্ডেলের সোল প্ল্যান্টার আর্চের জন্য উপকারী নয়। যখন খুব বেশি হিলযুক্ত জুতা পড়া হয় তখন এই হিল অ্যাকিলিস টেন্ডনের উপর চাপ সৃষ্টি করে এই টেন্ডনকে ছোট করে দেয়৷ এর ফলে গোড়ালির পিছের অংশে ব্যথা এবং সেখান থেকে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস কেন হয়ঃ
আমাদের পায়ের গোড়ালির নিচে পুরু ব্যান্ডের মত একপ্রকার ঝিল্লি থাকে৷ এই ঝিল্লিকে বলা হয় প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া। গোড়ালির নিচের এই পুরু ওয়েবিং ফাইবারগুলো গোড়ালি এবং পায়ের আঙুলের সংযোগ শক্তিশালী করার কাজ করে৷ প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া কোন কারণ আঘাতপ্রাপ্ত হলে পায়ের গোড়ালি বা তালুতে জ্বালা অথবা ব্যথা হয়৷ প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত হলে কখনও কখনও গোড়ালির হাড়ে স্পার অর্থাৎ হাড়ের মধ্যে কাঁটা বিঁধলে যেমন অনুভূত হয় এমনটা অনুভব হতে পারে। আবার অনেক সময় এই রোগের প্রভাবে গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে কাদের ঝুঁকি বেশিঃ
সাধারণত ৪০ বছর থেকে ৬০ বছরের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আর ছেলেদের তুলনায় এই রোগে মেয়েদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। যার অন্যতম কারণ হাই হিল বা খুব বেশি পাতলা সোল এবং শক্ত স্যান্ডেল পরিধান করা।
আবার আরও কিছু কারণ এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমনঃ
★ গোড়ালিতে চাপ পড়ে দীর্ঘ সময় এ ধরনের কাজ করা,
★ নাচ, ম্যারাথন দৌড় এবং অতিরিক্ত হাঁটা,
★ অতিরিক্ত ওজন এবং মোটা হওয়া
★ অস্বাভাবিক বাঁকা পা
★ গোড়ালিতে আঘাত পেলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও চিকিৎসা না নিয়ে গোড়ালিতে চাপ সৃষ্টি করা,
★ অধিকাংশ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা,
★ হঠাৎ খেলাধুলা বা জিমে গিয়ে অতিরিক্ত ওজন নেওয়া,
★ উঁচু হিল বা শক্ত সোলযুক্ত ভারী জুতা পরিধান করা,
★ উঁচু নিচু মাটিতে দৌঁড়ানো বা হাঁটা।
এসব কারণ ছাড়াও কিছু রোগ এবং অবস্থার কারণে মানুষ প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত হতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে-
★ গাউট,
★ ডায়াবেটিস,
★ স্পন্ডিলাইটিস,
★ গোদরোগ,
★ গর্ভাবস্থা ইত্যাদি।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় পদ্ধতিঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয়ের জন্য শারীরিক কিছু লক্ষণ পর্যবেক্ষণ, রোগের ইতিহাস এবং শারীরিক কিছু পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাগুলো হচ্ছে-
১. ব্লাড টেস্ট বা রক্ত পরীক্ষা,
২. এক্স-রে,
৩. আল্ট্রাসাউন্ড।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস আক্রান্ত হলে যে সব কাজ এড়িয়ে চলতে হবেঃ
আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিন্মলিখিত কাজগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। কাজগুলো হচ্ছে-
★ শক্ত, ছোট, অতিরিক্ত নরম, হাই হিল, একদম ফ্ল্যাট ও পাতলা সমতল এ ধরনের জুতা ও স্যান্ডেল পরিধান করা,
★ পায়ে বা গোড়ালিতে ব্যথা হলে দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটা,
★ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা,
★ খেলাধুলা বা কোন কাজ করার সময় দীর্ঘ না করা। বা ঘন ঘন এসব কাজ করা,
★ কংক্রিট, পিচ বা শক্ত স্থানে হাঁটা বা দৌঁড়ানো,
★ সৈকতে খালি পায়ে হাঁটা বা দৌঁড়ানো,
★ দীর্ঘক্ষণ একইভাবে বসে থাকা,
★ জিমে ভার উত্তোলন, স্কোয়াটিং বা শরীরের নিচের অংশে লোড নেওয়া বা ওজন বেশি নেওয়া,
এসব কাজ করলে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকবে। এবং পরিণতি হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্যারালাইজড করে দিতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হলে অবশ্যই এসব কাজ পরিহার করতে হবে।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের চিকিৎসা কিঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে আক্রান্ত হলে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিক্যাল মেডিসিন ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে তার তত্ত্বাবধানে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। চিকিৎসায় বেশ কিছু ধাপ ও পদ্ধতি অবলম্বন করবেন ডাক্তার। সে সকল ধাপ ও পদ্ধতি হচ্ছে-
১) জীবন ধারায় পরিবর্তনঃ
জীবন ধারায় পরিবর্তন ঘটানোর ফলে এই রোগের ব্যথা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। আর এই পরিবর্তন শুধু প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস থেকেই আপনাকে মুক্তি দিবে এমনটা নয়। আপনার জীবনে বা শরীরের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে।
এ পরিবর্তনে যে সকল কাজ করতে হবে–
★ রাত জাগা পরিহার ও পর্যাপ্ত ঘুম,
★ পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস,
★ ওজন বেশি থাকলে ওজন কমানো,
★ বেশি সময় দাঁড়িয়ে কাজ না করা,
★ নরম (অতিরিক্ত নয়) এবং আরামদায়ক সোলের জুতা ও স্যান্ডেল ব্যবহার,
★ খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস পরিহার করা,
★ পায়ের তালুর উপর অতিরিক্ত ভর না দেওয়ার অভ্যাস করানো।
২) নিয়মিত ঔষধ সেবনঃ
ডাক্তার কিছু ঔষধ এবং মলম সাজেস্ট করবেন। নির্দিষ্ট সময়ে এসব ঔষধ এবং মলম ব্যবহার করতে হবে। তবে নিজে থেকে এসব ঔষধ খাওয়া যাবে না বা নিজের পছন্দমত ঔষধের পাওয়ার বাড়িয়ে বা কমিয়ে খাওয়া যাবে না।
★ ডাক্তারের নির্ধারিত পেইন কিলার যথাসময়ে সেবন করতে হবে,
★ ডাক্তার যে মলম দিবে, দিনে ২ থেকে ৩ বার পায়ের তালুতে মাসাজ করতে হবে।
৩) ব্যায়ামঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তির অনেকেই মনে করে ব্যায়াম করলেই ব্যথা কমে যাবে। এই ধারণা থেকে অনেকেই গোড়ালি ও তালুতে চাপ প্রয়োগ করে থাকে। অনেকেই জিমে গিয়ে ওজন নিয়ে ব্যায়াম শুরু করে দেয়। এতে ঘটে হিতে বিপরীত। ব্যথা বেড়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির পায়ের ধাপ ফেলাই কষ্টকর হয়ে যায়। ব্যথা কমানো এবং পায়ের গঠন স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে ডাক্তার নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের নির্দেশনা দিবেন৷ আক্রান্ত রোগীকে শুধুমাত্র সেই সব ব্যায়ামই করতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশনা ব্যতীত পা বা শরীরের নিচের অংশে এসব ব্যায়াম ব্যতীত অন্য কোন ব্যয়াম করা যাবে না।
ব্যায়ামগুলো হচ্ছে-
★ প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া স্ট্রেস,
★ ফুট সার্কেল,
★ টো কার্ল,
★ টো তোয়ালে কার্ল এক্সারসাইজ, ইত্যাদি।
৪) ফিজিক্যাল থেরাপিঃ
ফিজিক্যাল থেরাপি ব্যথা উপশমে বেশ কার্যকর এক চিকিৎসা পদ্ধতি। অধিকাংশ ব্যথা কমাতে বা সারাতে এই চিকিৎসা দারুণ কাজ করে থাকে৷ গোড়ালি এবং পায়ের তালুর ব্যথা কমাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আক্রান্ত রোগীকে ফিজিও থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
এই রোগে আক্রান্ত রোগীকে সাধারণ ২ ধরনের থেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেয় ডাক্তার। যেগুলো ব্যথা কমাতে খুবই কার্যকরভাবে কাজ করে। থেরাপি দুটি হচ্ছে-
★ আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, এবং
★ শকওয়েভ থেরাপি।
৫) আর্থোসিসঃ
রাতের বেলা পায়ের পাতা স্বাভাবিক রাখার জন্য রেস্টিং স্পিলন্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে পারে ডাক্তার। আবার হাঁটার সময় গোড়ালির নিচে হিল কুশন বা অ্যাঙ্কলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬) ইঞ্জেকশনঃ
ব্যথা যদি দীর্ঘমেয়াদি এবং তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তার আল্ট্রাসাউন্ড প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়ার চারপাশে ব্যথানাশক ইঞ্জেকশন প্রয়োগের পরামর্শ দিতে পারেন।
৭) অপারেশনঃ
উপরের সকল পদ্ধতি অবলম্বন করার পরেও যদি রোগীর ব্যথা এবং রোগ কমানো সম্ভব না হয়, এবং যদি পায়ের গঠন স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসে তাহলে সার্জারি বা অপারেশনের পরামর্শ দিতে পারেন ফিজিক্যাল মেডিসিন ডাক্তার। এক্ষেত্রে তিনি রোগীকে একজন ভালো অর্থোপেডিক সার্জনের কাছে হস্তান্তর করে দিবেন। অর্থোপেডিক সার্জন সবকিছু যাচাই-বাছাই করে অপারেশনের মাধ্যমে রোগীর গোড়ালি বা তালুকে স্বাভাবিক ও সুস্থ্য করার চেষ্টা করবেন।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস কিভাবে প্রতিরোধ করবেনঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস রোগটি যখন তীব্র পর্যায়ে থাকে তখন রোগীকে বেড রেস্টের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারগণ। পাশাপাশি গোড়ালি এবং পায়ের তালুতে ব্যথা, জ্বালাপোড়া ভাব বা অস্বস্তি বাড়াতে পারে এমন সব কাজ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দৌঁড়ানো, লাফানো, উঁচু হিল বা পাতলা ও শক্ত সোলের জুতা ও স্যান্ডের পড়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যথা ও জ্বালা কমাতে গোড়ালি ও পায়ের পাতায় বরফ লাগানো বা গোড়ালি পর্যন্ত বরফ পানিতে পা ডুবিয়ে রাখা যেতে পারে। আবার খুব বেশি ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি মেডিসিন সেবন বা মালিশ করা যেতে পারে।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসে কেমন থেরাপি নিবেনঃ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। থেরাপির মধ্যে স্ট্রেচিং, স্ট্রেন্থিনিং, ড্রাই নিডলিং, ডিজিটাল ইস্কেমিক প্রেসার, মায়ো ফাইসিয়াল রিলিজ, কনট্রাস্ট বাথ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পাওয়ার ট্রেনিং, টেন্ডিনোপ্যাথি ম্যানেজমেন্টের মতো হাই লোড পাওয়ার ট্রেনিং প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের চিকিৎসায় দারুণ কাজ করে বলে ডাক্তারগণ অভিমত প্রকাশ করেন। হাই লোড পাওয়ার ট্রেনিং দ্রুত ব্যথা কমিয়ে আনতে এবং পা, গোড়ালির এবং পায়ের তালুর ফাংশনের উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে। প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণ করার মাধ্যনেই রোগীদের পায়ের পেশি শক্ত করতে নানা ধরণের ব্যায়ামের পরামর্শ দেয় ডাক্তার। বিশেষ করে কোর করার মাধ্যমে পেশি শক্ত করার পরামর্শ দেয় ডাক্তার।
স্ট্রেচিংয়ের মধ্য রয়েছে রোগীর আক্রান্ত পা-কে কনট্রাল্যাটারাল পায়ের উপর দিয়ে অতিক্রম করিয়ে এবং পায়ের অঙুলগুলোকে ব্যবহার করে পায়ের আঙুলের সম্প্রসারণে চাপ প্রয়োগ করানো হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া বরাবর প্রসারণ অনুভুত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এমনটা করাতে থাকেন ডাক্তার। অ্যাকিলিস টেন্ডন স্ট্রেচিং দাঁড়ানো অবস্থায় করতে হয়। আক্রান্ত পা বিপরীতমুখী পায়ের পিছনে রেখে পায়ের আঙ্গুলগুলোকে সামনের দিকে চাপ দিতে বলেন। পেছনের হাঁটু সোজা রেখে এবং সামনের হাঁটু কিছুটা বাঁকিয়ে রেখে পিছনের হাঁটুটি সোলেস স্ট্রেচের জন্য নমণীয় অবস্থায় রাখা হয়। এই ব্যায়াম কাপ মাসল এবং প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়ার পেশিকে প্রসারিত করতে কাজ করে থাকে।
পোস্টোরিয়া ট্যালোক্রুরাল জয়েন্ট মোবিলাইজেশন এবং সাবটালার জয়েন্ট ডিস্ট্রাকশন ম্যানিপুলেশন (হাইপোমোবাইল ট্যালোক্রুরাল জয়েন্টের ব্যথা সারানোর জন্য)। এছাটাও গোড়ালি, সাবটালার এবং মিডফিট জোয়েন্ট মোবিলাইজেশন করাও থেরাপির অন্যতম কাজ।
ফিজিও থেরাপির পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম, নির্দিষ্ট ব্যায়াম, নিয়মিত ঔষধ সেবন, অরথোটিক্স, স্প্লিন্ট বা ইঞ্জেকশন নিতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ এবং অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব করলে।
আরও পড়ুনঃ আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথা কেন হয়।