শরীরে ক্যালসিয়ায়েম অভাব কিভাবে বুঝা যায়

ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। হাড়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। শুধু হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষাতেই নয়, এর পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন রোগ ভালো করতে অবদান রাখে ক্যালসিয়াম। রক্ত জমাট বাঁধা, হার্ট সুস্থ রাখা এবং পেশীর সংকোচন ও প্রসারণে কাজ করে থাকে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়েছে কি না তা বুঝা যায় বেশ কিছু লক্ষণে। লক্ষণগুলো জানার আগে আসুন জেনে নেই আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম কিভাবে কাজ করে।
ক্যালসিয়াম এক ধরনের খনিজ যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়ামের প্রধান কাজ আমাদের শরীরের হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করা৷ এগুলো ছাড়াও ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে অন্যান্য কার্যক্রমেও সহায়তা করে থাকে। যেমন- পেশী ও ধমনীর সংকোচন ও প্রসারণ, স্নায়ুতন্ত্রে বার্তা সরবরাহ করা ইত্যাদি৷ আবার হৃদপিন্ডের বিভিন্ন অঙ্গেও ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি খুবই প্রয়োজন।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার মধ্য অন্যতম হচ্ছে অস্টিওপোরোসিস এবং অস্টিওপোনিয়া। যা হাড়ের ক্ষয় নামে আমাদের নিকট পরিচিত। আবার শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ না হওয়ার কারণও এই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা, হাত ও পা ঝিঝি ধরা, অবশ হওয়া, দাঁতের ক্ষয়, ক্লান্তি, হতাশা, পেশী ব্যথা ও টান ধরাও ক্যালসিয়ামের ঘটতির ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণ কি কিঃ

একাধিক কারণে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে-

‌⇒ ডায়েটে ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করা। এটিকে ঘাটতির মূল কারণ বলা হয়।
⇒ অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়।
⇒ ভিটামিন- ডি এর ঘাটতি হলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। কারণ ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণের প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয়।
⇒ শরীর দুর্বল হলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়ে থাকে।
⇒ ক্রীড়াবিদ নারীদের মেনোপজের সময় বেশি ক্যালসিয়াম ক্ষয় হয়।
⇒ প্রচুর পরিমাণে কোমল পানীয় পান করলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।
⇒ অ্যালকোহল, তামাক সেবন এবং অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে।
⇒ মিহি শস্য, মাইট ইত্যাদি খাবার খেলে ক্যালসিয়াম কমে যেতে পারে।
⇒ অতিরিক্ত মেদ, চিনিযুক্ত খাবার, প্রোটিন ডায়েটে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দেখা দেয়।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বুঝবেন যেভাবেঃ

বেশ কিছু লক্ষণের মাধ্যমে বুঝা যায় মানব দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। লক্ষণগুলো হচ্ছে-

১. ক্লান্তি বোধ করা,
২. নিদ্রাহীনতা,
৩. ত্বকের শুষ্কতা,
৪. বুকে ব্যথা,
৫. উচ্চ কোলেস্টেরল,
৬. হাত অবশ হওয়া,
৭. উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি,
৮. খিদে না পাওয়া,
৯. মাড়ির রোগ,
১০. চোখে ছানি পড়া,
১১. মৃগী রোগ,
১২. বন্ধ্যাত্ব,
১৩. নখ ভঙ্গুর,
১৪. চুল মোটা হয়ে যাওয়া,
১৫. একজিমা,
১৬. ত্বকের প্রদাহ বা চুলকানি,
১৭. সোরিয়াসিস,
১৮. হতাশা,
১৯. খিটখিটে মেজাজ।

ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণে করণীয়ঃ

দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা বেশ সহজ। ক্যালসিয়াম পূরণ করার সবচেয়ে সহজ চিকিৎসা হচ্ছে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। এছাড়াও খাবারের পাশাপাশি ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়ামযুক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। অনেকেই নিজে থেকে ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন সাপ্লিমেট কিনে খেয়ে থাকেন। যা উপকারের চেয়ে মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেট গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।

পালং শাক, ব্রোকলি, ডুমুরের রস পান করলে ক্যালসিয়াম বাড়ে। পাশাপাশি সেদ্ধ ডিম, পুঁইশাক, দুধ, বাদাম, সাদা তিল,  চিজ বা পনির নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামের যোগান দিয়ে থাকে। এসব খাবারের পাশাপাশি চিয়া সিড খেতে পারেন। চিয়াসিডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে খাবারের পাশাপাশি জীবনযাপনে পরিবর্তন আনাটাও খুব জরুরী। পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি শরীরের জন্য খুবই জরুরী। শরীরে ভিটামিন পেতে সকালের রোদে হাঁটা বা বসে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ২০ মিনিট করে রোদে থাকাটা জরুরী। ধুমপানের অভ্যাস থাকলে ধুমপান ত্যাগ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ইমিউনিটি সিস্টেম কমে গেছে কি না বুঝে নিন

Leave a Comment