কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কি, কিভাবে বাঁচাবেন রোগীকে?

হঠাৎ করে যে কোন মানুষ আক্রান্ত হতে পারে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের। আমাদের জেনে রাখতে হবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ, লক্ষণ আর করণীয় সম্পর্কে।

প্রথমেই জানিয়ে রাখি হার্ট অ্যাটাক এবং সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কিন্তু এক জিনিস নয়। যখন হৃদপিন্ডের কিছু অংশ কাজ করা বন্ধ করে দেয় বা কার্যক্ষমতা হারায় তখন তাকে বলা হয় হার্ট অ্যাটাক। আর হৃদপিন্ড হঠাৎ করে সম্পূর্ণরুপে কাজ করা বন্ধ করে দিলে বা সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তাকে বলা হয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এক জিনিস না হলেও অধিকাংশ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হার্ট অ্যাটাকের কারণেই হয়ে থাকে। 

সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (SCD) বা হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হতে পারে যে কোন মানুষই। এটি এমন একটি সমস্যা যার কারণে হৃদপিন্ডর হঠাৎ করেই কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহের পরিমাণও কমে যায়। যার প্রভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আর সাথে সাথে CPR ( Cardiopulmonary Resuscitation) সেবা না দেওয়া হলে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত।

যদি সময়মতো এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীকে CPR এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে তার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর না হলে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মুহূর্তেই কার্ডিয়াক ডেথ হতে পারে আক্রান্ত ব্যক্তি।

সারাবিশ্বে এই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মৃত্যুর অন্যতম প্রধান একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগীর মৃত্যুর কারণ এই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট।

কি এই সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট?

সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রভাবে হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা, শ্বাস-প্রশ্বাস ও ব্রেনের চেতনা আকস্মিকভাবে কমে যায়। সাধারণত হৃদপিন্ডে বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে থাকে। এসময় শরীরে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে হৃদযন্ত্র পাম্প করতে পারে না। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে যদি রোগীকে CPR এবং অন্যান্য প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যায় তাহলে তার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে (যদি হায়াত থাকে)।

আর যদি সাথে সাথে CPR দেওয়া না হয় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদপিণ্ড অতি দ্রুত একেবারে কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং নিমিষেই সেই ব্যক্তি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এজন্য নিজে বাঁচতে এবং অন্যকে বাঁচানোর সহায়তা করতে আমাদের সকলেরই জেনে রাখতে হবে কেন এই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচাতে আমাদের কি কি করতে হবে। তাহলে আসুন বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি আজকের পোস্টের মাধ্যমে।

সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের চিকিৎসা কী?

হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছে এমন ব্যক্তিকে টান করে শুইয়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তির শার্ট বা এজাতীয় কাপড় থাকলে খুলে ফেলতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির আশেপাশে ভীড় থাকলে ভীড় কমিয়ে দিয়ে পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। নাক ও গলা বা ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখতে হবে সেই ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কি না। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক না থাকে বা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথে CPR দেওয়া শুরু করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত রোগীর জ্ঞান না ফিরে বা যতক্ষণ হাসপাতালে পৌঁছানো না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত CPR চালিয়ে যেতে হবে। এটি খুব শক্ত কাজ দুই বা তিন জন রোটেশন করে CPR চলমান রাখলে রোগীর জন্য খুবই ভালো। বলে রাখে ভালো সঠিকভাবে CPR দেওয়া হলে আক্রান্ত ব্যক্তির পাঁজরের ২-৪ টি হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। মায়া করা যাবে না। আপনার একটু কঠোরতা রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে দিতে পারে আর আপনার কমলতা সামান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করার বদলে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণ নাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

( CPR কিভাবে দিতে হয় তা নিয়ে ওয়েবসাইটে পোস্ট আলাদাভাবে পোস্ট করা আছে )

রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকগণ ডি-ফিব্রিলেটর ব্যবহার করে ( যে ডিভাইসের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক করা হয় সেই মেশিনকে ডি-ফিব্রিলেটর বলা হয়) স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়।

সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কেন হয়?

SCA (Sudden Cardiac Arrest) এর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হিসেবে অ্যারিথমিয়া অর্থাৎ হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক সিস্টেমের সমস্যার কারণে অনিয়মিত বা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনকে দায়ী করা হয়। হৃদপিন্ডের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা হৃদস্পন্দনের পরিমাণ এবং ছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দে কোন বাঁধা বা অস্বাভাবিকতা হতে পারে অ্যারিথমিয়ার প্রভাবে। এছাড়াও জন্মগত হৃদরোগ, করোনারি হার্ট ডিজিজ, হার্ট অ্যাটাক, ভালভুলার হার্ট ডিজিজ বা হার্ট বড় হয়ে যাওয়া, হার্টে ছিদ্র থাকার মত বিভিন্ন কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।

সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ কী কী?

SCA (Sudden Cardiac Arrest) এর লক্ষণগুলো আগে থেকে বুঝা সম্ভব না। হঠাৎ করেই যে কোন ব্যক্তি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হতে পারে৷ তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়া পূর্বমুহূর্তে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জানা যায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এসব লক্ষণ দেখা দিলে একা একা বাসায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করে বা ঠিক হয়ে যাবে ভেবে কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ থাকে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায় বা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। লক্ষণগুলো হঠাৎ করে আপনার শরীরে দেখা দিলে কাজ করা বন্ধ করে দিয়ে দ্রুত আশেপাশের মানুষকে বলতে হবে আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাহলে আসুন জেনে নেই কি সেই লক্ষণগুলো–

★ হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া,

★ বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা,

★ হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা,

★ শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা,

★ শ্বাসকষ্ট বোধ করা,

★ বুক ধড়ফড় করা,

★ ঘ্রাণ না পাওয়া,

★ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে রোগীর শরীরে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়।

চিকিৎসকদের মতে, স্বাস্থ্যকর এবং নিয়মমাফিক জীবন ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের মাধ্যমে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মত হৃদরোগের সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ হার্টের মারাত্মক রোগ কার্ডিওমায়োপ্যাথি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *