হার্টের এক মারাত্মক রোগ কার্ডিওমায়োপ্যাথি।

কার্ডিওমায়োপ্যাথি কিঃ

কার্ডিওমায়োপ্যাথি হচ্ছে হার্টের পেশীর এমন এক সমস্যার নাম, যার ফলে হার্টে রক্ত চলালাল স্বাভাবিক থাকতে পারে না। এর ফলে হার্টসহ শরীরের বাকি অংশে রক্ত পাম্প করা বা চলাচল করার ক্ষমতা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। যাদের কার্ডিওমায়োপ্যাথি আছে তারা সঠিক চিকিৎসা, নিবিড় পরিচর্যা এবং পরিপূর্ণ যত্নের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়ে থাকেন।

কিন্তু কিছু কিছু পরিস্থিতি বা কিছু পর্যায় এই রোগটি হৃদযন্ত্রের বিকলতা বা হার্টফেল ( হার্ট ফেলিওর) পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম। কার্ডিওমায়োপ্যাথি থেকে রক্ষা পেতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সচেতনতা। আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা কেমন হবে, তা নির্ভর করে সমস্যার ধরণ বা প্রকারের উপর। এই রোগের পর্যায়কে নির্ণয় করে ডাইলেটেড, হাইপারট্রাফিক, রেস্ট্রিকটেড বা সীমাবদ্ধ পর্যায়ে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

কার্ডিওমায়োপ্যাথির লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কিঃ 

প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের কোন উপসর্গ লক্ষ্য করা খুবই কঠিন। তবে কোন রোগী এই কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগে আক্রান্ত হলে ধীরে ধীরে তার মাঝে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। এই সকল লক্ষণগুলো হচ্ছে–

  • কোন রকম পরিশ্রম না করেও ক্লান্ত হয়ে যাওয়া,
  • বুক ধড়ফড় বা নিষ্পেষিত হৃদস্পন্দন,
  • বুকে চাপ অনুভব করা,
  • শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া,
  • মাথা ঘোরা বা মাথায় হাল্কাভাব অনুভব করা,
  • গোড়ালি এবং পায়ের হাঁটু ও থাইয়ে ফোলাভাব অনুভুত হওয়া।
প্রধান কারণ কি কিঃ

কার্ডিওমায়োপ্যাথি কি কারণে হয় তা নির্ণয় করা কঠিন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি বংশগত কারণে হতে পারে বলে মনে করেন অনেক চিকিৎসক। যে সকল কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে চিকিৎসকগণ ধারণা করে থাকে সেগুলো হচ্ছে–

  • প্রেসার বা রক্তচাপ সংক্রান্ত রোগ,
  • শরীরে প্রোটিন জমে থাকা,
  • পুষ্টির অভাব,
  • মদ এবং ড্রাগস গ্রহণ করা,
  • হার্ট অ্যাটাক থেকে হওয়া ক্ষতি,
  • অ্যারাইথমিয়াস ও ভাল্বের সমস্যা। অর্থাৎ ভাল্বের সমস্যার সাথে হার্টের সমস্যা থাকা,
  • হার্টের সংক্রামণ এন্ডোকারডিটিসে আক্রান্ত থাকা,
  • পেরিকার্ডিটিস অর্থাৎ হার্ট বা হৃদযন্ত্রে প্রদাহ জনিত রোগ,
  • টিস্যুর রোগ,
  • কেমোথেরাপির প্রভাব,
  • গর্ভাবস্থায় এবং প্রেগন্যান্সি জনিত জটিলতার কারণে, এবং
  • ডায়াবেটিস, থাইওরয়েড এবং অতিরিক্ত মোটা শরীর বা অতিরিক্ত চর্বিকে এই রোগের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারগণ রোগীর পারিবারিক ইতিহাস এবং আগে রোগীর আগে কখনও এই রোগ ছিল কিনা সেই রেকর্ড জানার পাশাপাশি কিছু শারীরিক পরীক্ষা করার নির্দেশনা দিয়ে থাকে। আক্রান্তের কারণগুলো খুঁজে বের করার পরে ডাক্তার যে সকল পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে–

  • হৃদস্পন্দন এবং ভাল্বের অবস্থা নির্ণয়ের জন্য এসিজি,
  • রক্তনালী পরীক্ষা করার জন্য ক্যাথেটারাইজেশন,
  • সমস্ত অর্গান বা অঙ্গের কার্যকারিতা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা,
  • এক্স-রে,
  • হরমোন বা জিনগত কিছু পরীক্ষা

★ কার্ডিওমায়োপ্যাথির ধরণের উপর এই রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে। রক্তচাপ কম করতে, রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করতে, জমাট গঠন প্রতিরোধ করতে বা ধীর স্পন্দন ও দ্রুত স্পন্দনকে স্বাভাবিক করতে প্রাথমিক পর্যায়ে ডাক্তার ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবার এই রোগের প্রভাবে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলর হলে প্রয়োজন পড়ে ওপেন হার্ট সার্জারীও।  

পরীক্ষার জন্য যে সকল যন্ত্র বা ডিভাইস ইমপ্ল্যান্ট বা ব্যবহার করা হয়ঃ

১. হার্টের হৃদম বা ছন্দ পরীক্ষা করতে আইসিডি (ICD) বা ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিওভার্টার ডিফ্রাইবিলেটর ব্যবহার করা হয়,

২. রক্ত সঞ্চালন বা চলাচলকে সাহায্য করতে ভিএডি (VAD) ভেন্ট্রিকুলার অ্যাসিস্ট ডিভাইস ব্যবহার করা হয়,

৩. অ্যারাইথমিয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করা হয় পেসমেকার মেশিনের।

চিকিৎসাঃ

  • হার্টের প্রাচীরকে পাতলা বা হালকা এবং রক্ত প্রবাহকে স্বাভাবিক রাখতে এবং যে সকল পেশী অ্যারাইথমিয়া ঘটাতে পারে হার্টের সেই পেশীগুলোকে অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করে ফেলা।
  • জীবন্যাপনে পরিবর্তন এনে হার্টের স্বাস্থ্যকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। জীবন ধারার পরিবর্তনে বলতে ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত খাবার গ্রহণ, মদ্যপান ত্যাগ করা, ধুমপান ছেড়ে দেওয়া, মানসিক চাপমুক্ত থাকা, মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম অন্যতম।
  • হার্টের কিছু পেশী অপসারণ করতে এবং হার্টে রক্ত প্রবাহকে স্বাভাবিক করতে এবং চরম পর্যায়ে হার্টের ব্লক দূর করতে বা হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য ওপেন হার্ট সার্জারীর মত অস্ত্রোপাচার করতে হতে পারে।

আমাদের পোস্টগুলো আপনাদের স্বাস্থ্য সচেতন করার লক্ষ্যে। স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল তথ্য জানা যেমন আপনার জন্য জরুরী, ঠিক তেমনই অন্যকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করা আপনার আমার কর্তব্য। আপনি আমি যদি আমাদের পরিবার এবং পরিচিতদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সতর্ক করতে পারি, তাহলে হয়তো এই সচেতনতা কঠিন পরিস্থিতিতে বা বিপদের সময়ে একটি বা একাধিক প্রাণ বাঁচানোর উসিলা হয়ে যেতে পারে। আসুন নিজে সচেতন হই, এবং পোস্ট শেয়ারের মাধ্যমে অন্যকেও সচেতন হতে সহায়তা করি।

আরও পড়ুনঃ যে ঔষধ সাময়িক আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগায়। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *