কব্জির রোগ কারপাল টানেল সিনড্রোম কি

কারপাল টানেল সিনড্রোম হচ্ছে কব্জির একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর হাতের কব্জি, হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলো অসাড় হয়ে যায়, ঝিনঝিন করে, অসাড় হয়ে যায় এবং কখনো কখনো হাত ফুলে যায়। হাতের তালুকে বলা হয় কারপাল টানেল। কার্পাল টানেল সিনড্রোন এক বা উভয় হাতেই হতে পারে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রোগটি সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপের দিকে যেতে থাকি। এবং স্নায়ুর ক্ষতি হতে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের কারপাল টানেল সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় রোগে নারীদের আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এবং এই সময় এই রোগটি প্রকট আকার ধারণ করে।
মেডিয়ান স্নায়ুতে চাপের কারণে এবং অতিরিক্ত প্রদাহের ফলে ফুলে গিয়ে কারপাল টানেল সিনড্রোম হয়ে থাকে।
কারপাল টানেল সিনড্রোমের সাথে বেশ কিছু রোগের সম্পর্ক রয়েছে। আবার বেশ কিছু কারণও রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে–
★ উচ্চ রক্তচাপ,
★ ডায়াবেটিস,
★ কব্জিতে কোনো সমস্যা (ভেঙে যাওয়া, টিউমার ইত্যাদি),
★ থাইরয়েডের সমস্যা,
★ অটোইমিউন ডিসঅর্ডার ( আর্থ্রাইটিস),
★ হাতে চাপ দিয়ে কাজ করা,
★ দীর্ঘ সময় ধরে হাতের একই কাজ বারবার করা,
★ কী-বোর্ড বা মাউস ব্যবহার করার সময় কব্জি বিশৃঙ্খলভাবে রাখা। ক্রমাগত ও বারবার একই কাজ করলে রিপিটিটিভ স্ট্রেস এবং ইনজুরি হতে পারে,
★ গর্ভকালীন ও মেনোপজের পর নারীদের এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়,
★ কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই রোগটি বংশগত কারণে হতে পারে।

কারপাল টানেল সিনড্রোমের লক্ষণঃ

কারপাল টানেল সিনড্রোমের প্রথম লক্ষণ হচ্ছে কব্জিসন্ধিতে ব্যথা বা অস্বস্তি লাগা এবং বেশি সময় হাত দিয়ে কাজ করতে না পারা। পাশাপাশি হাতের পেশীতে খুব ঘনঘন ব্যথা হওয়া, ঘন ঘন হাতে ঝিঝি ধরা, হাত অসাড় হওয়া এবং হাতে শক্তি না পাওয়া এই রোগের কিছু লক্ষণ। এসব ছাড়া আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
→ হাতে ব্যথা এবং জ্বালা অনুভব করা,
→ হাতের আঙুলে অসাড়তা ও ব্যথা হওয়া,
→ রাতে কব্জি ব্যথা এবং ঘুমে ব্যঘাত ঘটা,
→ হাতের পেশীগুলোতে দুর্বলতা অনুভব করা।
কারপাল টানেল সিনড্রোমের ঝুঁকিঃ
১) পুরুষের তুলনায় নারীদের কারপাল টানেল সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি ৩ গুণ বেশি।
২) ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
৩) ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বাতের কারণে এই রোগটি হতে পারে।
৪) দীর্ঘ সময় ধরে বারবার হাতের একই কাজ করলে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫) লাইফস্টাইল এবং অভ্যাসের কারণে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বেশি লবণ খাওয়া, হাই বডি মাস ইনডেক্স (BMI), ধুমপান ইত্যাদি এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

কারপাল টানেল সিনড্রোম নির্ণয়ঃ

রোগটি আসলেই কারপাল টানেল সিনড্রোম কি-না, তা নির্ণয় করার জন্য ডাক্তার সর্বপ্রথম রোগীর ইতিহাস ও চিকিৎসার ইতিহাস সম্পর্কে জানবেন। অত:পর রোগীর শারীরিক কিছু পরীক্ষা করার নির্দেশ দিবেন।
শারীরিক পরীক্ষার জন্য রোগীর হাত, কব্জি ঘাড়ের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করাতে পারেন। পাশাপাশি হাতের পেশীসমূহ এবং আঙুলগুলোর শক্তিও পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কার্পাল টানেল সিনড্রোমের চিকিৎসায় লক্ষণগুলোর তীব্রতা এবং ব্যথার মাত্রার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
এই রোগী উপশমের জন্য প্রথমে ফিজিওথেরাপি এবং পরবর্তীতে অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সবশেষে শল্যচিকিৎসা বা সার্জারীর মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা হতে পারে।
চিকিৎসার ধরণসমূহের মধ্যে রয়েছে-
★ ফিজিওথেরাপি,
★ যোগ ব্যায়াম বা শরীর চর্চা,
★ আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি,
★ আকুপেশনাল থেরাপি,
★ স্টেরয়েড,
★ সার্জারি।

যদি দীর্ঘ সময় ধরে হাত দ্বারা কাজ করতে হয়, তাহলে প্রতি ১ ঘন্টা পরপর হাতকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিশ্রাম দিয়ে কাজ করতে হবে। এই সময় হাত প্রসারিত করা, আঙুল মুঠো করা ও ছাড়া, হাতের কনুই ভাঁজ করা ও সোজা করার মত কাজ করে হাতের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হতে এবং পেশী সমূহকে স্বাভাবিক হতে দিতে হবে। এগুলো ছাড়াও এমন কিছু ক্রিয়াকলাপ এড়িয়ে চলতে হবে যা হাতের উপর অতিরিক্ত প্রেসার সৃষ্টি করে আপনার কব্জিকে কারপাল টানেল সিনড্রোমের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *