এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া কি?

এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া বা এন্ডোমেট্রিক হাইপারপ্লাসিয়া কিঃ

মেয়েদের জরায়ু ৩টি স্তরে গঠিত। এই ৩টি স্তর হচ্ছে পেরিমেট্রিয়াম, মায়োমেট্রিয়াম এবং এন্ডোমেট্রিয়াম। জরায়ুর সবচেয়ে ভিতরের অংশটিকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম। এই স্তর ছোট ছোট এপিথেলিয়াল কোষ দ্বারা গঠিত। এই কোষগুলো মূলত ডিম্বাশয় থেকে নিষ্কাশিত হরমোনের প্রভাবে গঠিত হয়।
এন্ডোমেট্রিয়াম প্রতি পিরিয়ড চক্রের সময় জন্মায় এবং ঝরে পড়ে। যার ফলস্বরুপ পিরিয়ডের সময় মেয়েদের রক্ত ক্ষরণ হয়।
এস্ট্রোজেনের মাত্রায় কিছু পরিবর্তনের ফলে এন্ডোমেট্রিয়ামের ঘনত্ব স্বাভাবিক থাকে না। এবং এই অবস্থাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া। একে এন্ডোমেট্রিক হাইপারপ্লাসিয়াও বলা হয়। এস্ট্রজেনের এই পরিবর্তন ক্যান্সার নয়। তবে এর কারণে একজন নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।

এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়ার প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গ কি কিঃ

এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়ার উপসর্গগুলো শুধুমাত্র জরায়ুর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। জরায়ুর পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশেও এর কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে_
★ অস্বাভাবিক মাসিক রজঃস্রাব (অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ অথবা ঘনঘন মাসিক হওয়া),
★ দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়েও রক্তপাত হওয়া,
★ মেনোপজ বা রজোবন্ধের পরেও যোনি থেকে রক্ত ক্ষরণ হওয়া,
★ অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের ফলে রক্ত স্বল্পতা হওয়া,
★ শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া,
★ শারীরিক দুর্বলতা।

এই রোগের প্রধান কারণ কি কিঃ

এন্ডোমেট্রিয়কম এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন স্তরের হ্রাস বা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই সেনসিটিভ। সাধারণত, এস্ট্রোজেন উদ্দীপিত হয়ে এন্ডোমেট্রিয়াল স্তরের ঘনত্বকে বৃদ্ধি করে থাকে। যখন এস্ট্রজেনের মাত্রা বেশি থাকে এবং প্রোজেস্টেরনের মাত্রা তুলনামূলক কম থাকে তখনই রোগীর এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া হয়ে থাকে।
নিন্মে উল্লেখিত বিশেষত্বগুলো যে সকল মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়, তাদেই এই এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অতি প্রবল। বিশেষত্বগুলো হচ্ছে–
১. স্থুলতা বা মোটা হলে,
২. পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ (PCOD)
৩. দীর্ঘদিন যাবৎ হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি (HRT) নেওয়া মহিলা,
৪. বন্ধ্যাত্ব

কিভাবে নির্ণয় করা হয়ঃ

রোগীর শারীরিক পরীক্ষা এবং চিকিৎসাগত ইতিহাস থেকে এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া নির্ণয় করা হয়ে থাকে। যে সকল পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করা হয় তার কিছু পরীক্ষা নিচে উল্লেখ করা হলো। মূলত ক্যান্সার সনাক্তকরণে এই পরীক্ষাগুলো সহায়তা করে থাকে। পরীক্ষাগুলো হচ্ছে–
★ পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ডঃ
এন্ডোমেট্রিয়ামের ঘনত্ব এবং এর কারণ নির্ণয়ের জন্য জন্য পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড টেস্ট করা হয়। ক্যান্সার সনাক্তকরণের জন্য প্রতি ২ থেকে ৩ বছর পরপর পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়ে থাকে।
★ হিস্টেরোস্কপিঃ
এন্ডোস্কোপের মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিয়াম পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই পর্যবেক্ষণ খুবই জরুরী।
★ ট্রান্সভ্যাজাইনাল আল্ট্রাসাউন্ডঃ
এন্ডোমেট্রিয়ামের পরিবর্তন আরও পরিষ্কারভাবে দেখার জন্য ট্রান্সভ্যাজাইনাল টেস্ট দেওয়া হয়।
★ এন্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসিঃ
ছোট টিস্যু বা শরীরকলার নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে ক্যান্সারের জীবাণু শনাক্ত করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমেই জানা যায় রোগী ক্যান্সার আক্রান্ত কি না।

রোগের চিকিৎসাঃ

এই রোগীদের ৩টি পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে–
★ অবজারভেশন:
অবজারভেশন হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ একটি প্রক্রিয়া। নারীর মেনোপজের পরে, এস্ট্রোজেনের অনুপস্থিতির ফলে হাইপারপ্লাসিয়া অকার্যকর হয়ে যায়। অথবা এই রোগের উপসর্গগুলো রোগীর মাঝে আর দেখা যায় না।
★ মেডিসিন ট্রিটমেন্টঃ
প্রোজেস্টেরন স্বাভাবিক করতে রোগীকে ওরাল মেডিসিন হিসেবে ট্যাবলেট দেওয়া হয়। সাধারণত যাদের মাঝে উপসর্গগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় বা মনোপেজের পরেও যোনি থেকে রক্ত ক্ষরণ হয় তাদের এই ট্যাবলেট খাওয়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসা করানো হয়।
★ অপারেশনঃ
কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অবজারভেশন এবং মেডিসিন ট্রিটমেন্ট দিয়েও সুস্থ করা সম্ভব নয়। রোগীর ব্লিডিং এবং অন্যান্য উপসর্গগুলো থেকেই যায়। ফলে রোগীর সুস্থতার জন্য এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাবলেশন সার্জারীর মাধ্যমে এন্ডোমেট্রিয়াম বের করে ফেলতে হয়। খুব গুরুতর পর্যায়ে অর্থাৎ ক্যান্সার বা খুব বেশি ব্লিডিং এবং এই ব্লিডিং বন্ধ করা না গেলে এই সার্জারীর মাধ্যমে সম্পূর্ণ জরায়ু ডিম্বাশয় সহ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে পরবর্তীতে সেই নারী আর গর্ভধারণ করতে পারে না।

আরও পড়ুনঃ CPR শিখে নিলে প্রাণ বাঁচাতে পারেন আপনিও।

1 thought on “এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাসিয়া কি?”

  1. Pingback: দুর্ঘটনায় বিচ্ছিন্ন অঙ্গ কিভাবে সংরক্ষণ করে হাসপাতালে আনবেন - রক্ত বন্ধন - Rokto Bondhon

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *