অ্যামাইলয়েডোসিস, এক মরণব্যাধি ঘাতকের নাম।

অ্যামাইলয়েডোসিস রোগটি সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পারভেজ মোশাররফ এই রোগে আক্রান্ত। আগ্রহ জন্মে রোগটি সম্পর্কে জানার। জানার পরে মনে হলো অন্যদেরও জানা উচিত এই রোগটি সম্পর্কে। দীর্ঘ প্রায় এক মাস এই রোগটি সম্পর্কে গবেষণা করার পরে এই রোগ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দিতেই আজকের এই পোস্টটি লেখা। আসুন তবে জেনে নেই এই রোগের বিস্তারিত তথ্যগুলো। 

অ্যামাইলয়েড নামক একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন রোগীর টিস্যু এবং অঙ্গে তৈরি হওয়ার ফলে যে রোগের সৃষ্টি হয় তাকেই বলা হয় অ্যামাইলয়েডোসিস । এটি অত্যন্ত মারাত্মক এবং গুরুতর একটি রোগ, যা অঙ্গ বিকলাঙ্গ এমনকি প্রাণনাশের কারণ পর্যন্ত হতে পারে। এ রোগটিকে সরাসরি ক্যান্সার বলা না হলেও ক্যান্সারের সমতূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমনকি এই রোগের জন্য ক্যান্সার মতই চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

যদিও সাধারণ পরীক্ষার আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অ্যামাইলয়েড পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, একা একাই মানব দেহে এই ভাইরাসটি তৈরি হয় না। বিভিন্ন ধরণের প্রোটিন থেকে এটি মানব দেহে তৈরি হয়ে থাকে।

অ্যামাইলয়েড যে অঙ্গগুলোকে আক্রান্ত করে প্রভাবিত করতে পারে সেগুলো হচ্ছে কিডনি, হার্ট, লিভার, প্লীহা এবং স্নায়ুতন্ত্রের পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্র। কিছু ধরণের অ্যামাইলয়েডোসিস অন্যান্য রোগের জটিলতার কারণেও মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। যেমন, কিডনীর সমস্যা, হার্টের অসুখ, হেপাটাইটিস বা লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি যে কোন সময় এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত এসকল রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যামাইলয়েডোসিসের চিকিৎসা করাতে হবে।

মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্তের হার এবং সম্ভাবনা বেশি। সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী অ্যামাইলয়েডোসিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে গবেষণায় জানা যায় । ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে অ্যামাইলয়েডোসিসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে তাকে মাল্টিপল মায়লোমা বলা হয়।

 

অ্যামাইলয়েডোসিসের লক্ষণঃ

অনেক ক্ষেত্রে চরম পর্যায়ে অর্থাৎ লাস্ট স্টেজে না যাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে কোনো লক্ষণই লক্ষ্য করা যায় না। শরীরের কোন কোন অংশ প্রভাবিত হয় তার উপর নির্ভর করে কিছু বিষয়কে উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তা শুধুই অনুমানের ভিত্তিতে। নিম্নলিখিত লক্ষণগুলোর যে কোনো একটি যদি মানব দেহে লক্ষণীয় হয় তবে সেই ব্যক্তির উচিত দেরি না করে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া। লক্ষণগুলো হচ্ছে-

★ গোড়ালি এবং পায়ে ফুলে যাওয়া,

★ অত্যাধিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব,

★ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন,

★ শ্বাসকষ্টের কারণে বিছানায় শুতে না পারা এবং
ন্যূনতম পরিশ্রমের সাথে সাথেই শ্বাসকষ্ট অনুভব,

★ হাতে বা পায়ে বিশেষ করে কব্জিতে টিংলিং, অসাড়তা বা ব্যথা অনুভব করা,

★ জিহ্বা বড় হয়ে যাওয়া,

★ খাবার গিলতে অসুবিধা বোধ করা,

★ অনিচ্ছাকৃতভাবে হঠাৎ ৪-৫ কেজির বেশি ওজন কমে যাওয়া,

★ ডায়রিয়া, কখনও কখনও পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া,

★ কোষ্ঠকাঠিন্য,

★ ত্বকের পরিবর্তন, যেমন ঘন বা মোটা হয়ে যাওয়া বা সহজে ত্বকে ঘা সৃষ্টি হওয়া।

উপরের লক্ষণসমূহ দেখা দিলেই যে সেই ব্যক্তি অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্ত এমনটা ভাবেন না। অন্য কোন রোগের কারণেও যে কোন ব্যক্তির মাঝে এসকল লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

যদি কোন অবিরামভাবে অ্যামাইলয়েডোসিসের সাথে যুক্ত যে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রকার, কারণ এবং ঝুঁকির কারণঃ

শরীরে নানা ধরণের প্রোটিনের উপস্থিতি অ্যামাইলয়েড জমার দিকে দেহ বা অঙ্গকে পরিচালিত করতে পারে। যদিও শুধুমাত্র কয়েকটি প্রধান অঙ্গ ও স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে এই রোগটি যুক্ত। আক্রান্ত ব্যক্তির অ্যামাইলয়েডোসিসের ধরন সাধারণত প্রোটিনের ধরন এবং শরীরে কোথায় আক্রমণ করেছে তা নির্ণয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। অ্যামাইলয়েডসমস্ত শরীরকে আবার শুধুমাত্র একটি অঙ্গকেই সংক্রমিত করতে পারে।

অ্যামাইলয়েডোসিসের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।

AL amyloidosis (ইমিউনোগ্লোবুলিন লাইট চেইন অ্যামাইলয়েডোসিস):

এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের অ্যামাইলয়েডোসিস। রোগীর দেহে সবচেয়ে বেশি এই ধরণটিই দেখতে পাওয়া যায়। প্রাথমিক অ্যামাইলয়েডোসিস নামেও এই ধরণটি পরিচিত। AL এর অর্থ হল “অ্যামাইলয়েড লাইট চেইন”, যা এই ধরনের জন্য দায়ী এক প্রকার প্রোটিন। প্রটিনটি মানব দেহে প্রবেশের কারণটি অজানা। তবে যখন আক্রান্ত ব্যক্তির অস্থি মজ্জায় অস্বাভাবিক অ্যান্টিবডি তৈরি করে তখন এটি নির্ণয় করা যায়। আর এই প্রটিনটি নষ্ট বা ধ্বংস করা যায় না। এই প্রোটিনটি একাধিক মায়োলোমা নামে পরিচিত একটি ব্লাড ক্যান্সারের সাথেও যুক্ত। অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর দেহেও এই প্রোটিনটিন উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই প্রোটিন আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনী, লিভার, হার্ট, অন্তের সাথে স্নায়ুকে আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

 

AA amyloidosis:

পূর্বে এই ধরণটি সেকেন্ডারি অ্যামাইলয়েডোসিস নামে পরিচিত ছিল। এটি অন্য কিছু দীর্ঘস্থায়ী সংক্রামক বা প্রদাহজনিত রোগের কারণে রোগীকে আক্রান্ত করে থাকে। যার মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রোনের রোগ অন্যতম । এই ধরণটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর কিডনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু ক্ষেত্রে এটি আক্রান্ত ব্যক্তির পাচনতন্ত্র, লিভার বা হার্টকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।

DRA বা ডায়ালাইসিস সম্পর্কিত অ্যামাইলয়েডোসিসঃ

এই ধরণটি সচারাচর বয়স্ক বা প্রাপ্তবয়স্কদের এবং ৫ বছরের অধিক সময় ধরে ডায়ালাইসিসে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই ধরনের অ্যামাইলয়েডোসিস সাধারণত রক্তে বিটা-২ মাইক্রোগ্লোবুলিন জমা হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এই ধরণের প্রোটিন শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতেও জমা হতে পারে। যদিও এই প্রোটিন সাধারণত আক্রান্তের হাড়, জয়েন্ট এবং টেন্ডনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে।

বংশগত অ্যামাইলোইডোসিসঃ

এটি একটি বিরল ধরণ। পরিবারের কোন সদস্যের দেহে যদি
অ্যামাইলোইড থেকে থাকে বা পরিবারে এমন কোন ব্যক্তি ছিল যিনি পূর্বে অ্যামাইলোইডোসিসে আক্রান্ত ছিলেন তবে পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে এই রোগের সম্ভাবনা অনেক বেশি। জিনগত কারণে এটি পরিবারের সদস্যদের শরীরে পরিসঞ্চালন হতে পারে। এই ধরণে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত লিভার, স্নায়ু, হৃদপিণ্ড এবং সাথে কিডনীকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে পরীক্ষায় জানা যায়। এছাড়াও আরও বেশ কিছু জেনেটিক ত্রুটি রয়েছে যা অ্যামাইলয়েড রোগে আক্রান্তে উচ্চ সম্ভাবনার সাথে যুক্ত।

 

বয়স সম্পর্কিত (বার্ধক্যজনিত) সিস্টেমিক অ্যামাইলয়েডোসিসঃ

যখন হৃদপিণ্ড এবং অন্যান্য টিস্যুতে সাধারণ টিটিআরের বিশাল উপস্থিতি থাকে তখন যে কোন ব্যক্তি এই ধরণের অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্ত হতে পারে। বেশিরভাগ বয়স্ক পুরুষদের মাঝে এই ধরণের অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্তের প্রবণতা দেখা যায়।

 

অঙ্গ নির্দিষ্ট অ্যামাইলয়েডোসিসঃ

এটি ত্বকসহ একক অঙ্গে অ্যামাইলয়েড প্রোটিন জমা হওয়ার কারণে ঘটে। অর্থাৎ শুধুমাত্র একটি অঙ্গকে বা শুধুমাত্র ত্বকে এই ধরণের অ্যামাইলয়েড প্রোটিন বিস্তার লাভ করে।

কিছু ধরণের অ্যামাইলয়েড ডিপোজিট ও অ্যালঝাইমার রোগের সাথে সম্পৃক্ত। তবে মস্তিষ্ক খুব কমই অ্যামাইলয়েডোসিস দ্বারা প্রভাবিত হয় বলে গবেষণা ও রোগী পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায়।

 

রোগ নির্ণয়ঃ

কখনও কখনও অ্যামাইলয়েডোসিস উপেক্ষা করা যেতে পারে। অর্থাৎ, কারণ লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো আরও সাধারণ রোগগুলোর সাথে মিলে যাওয়ায় অনেকেই মনে করতে পারেন আমার অন্য রোগ হয়েছে অ্যামাইলয়েডোসিস নয়। যদি এমনটা কেউ এমনটা করে থাকেন তাহলে ভুল করবে।

আবার, রোগের লক্ষণের সাথে মিলে গেলেই সে ব্যক্তি অ্যামাইলয়েডোসিসে আক্রান্ত হয়েছে বলে দুশ্চিন্তা করাটাও বোকামি। কোন লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে ব্যক্তিটি আসলে কোন রোগে আক্রান্ত। অত:পর রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে অঙ্গের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হতেও পারে। সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অবস্থার উপর নির্ভর করে তবেই চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। এই রোগটি নির্ণয়ের জন্য বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যার মধ্যে নিম্নলিখিত পরীক্ষাগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:

★ রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষাঃ

আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যামাইলয়েডোসিস রোগটি নির্ণয় করা সম্ভব।

★ বায়োপসিঃ

আক্রান্ত ব্যক্তির পেট, অস্থি মজ্জা বা আক্রান্ত অঙ্গ বা অঙ্গসমূহের ত্বকের নীচের চর্বি থেকে একটি টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এরপর পরীক্ষার জন্য নমুনাটি পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। নমুনাটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় ব্যক্তির শরীরে অ্যামাইলয়েডোসিসের উপস্থিতি রয়েছে কি না।

অ্যামাইলোইডোসিস দ্বারা প্রভাবিত অঙ্গগুলোরর চিত্রসমূহ রোগের পরিমাণ নির্ধারণে সহায়তা করতে করে থাকে।

পরীক্ষায় নিম্নলিখিতগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

★ ইকোকার্ডিওগ্রামঃ

এই প্রযুক্তি একপ্রকার শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে চলমান চিত্র তৈরি করে। একজন ব্যক্তির হার্ট কতটা ভাল আছে তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝা যায়। হার্টে কোন সমস্যা থাকলেও এই পরীক্ষাটি নির্ণয় করতে পারে। এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে বিশেষ ধরনের অ্যামাইলয়েডোসিস নির্ণয় করা যায় ।

এমআরআই (MRI) বা চৌম্বকীয় অনুরণন ইমেজিংঃ

আমাদের শরীরের টিস্যু এবং অঙ্গসমূহের বিশদ চিত্র তৈরি করার জন্য এমআরআই রেডিও তরঙ্গ একটি শক্তিশালী চৌম্বক ( Electro Magnet) ক্ষেত্র ব্যবহার করে। এর ফলে আক্রান্ত অঙ্গ এবং হার্টের গঠন এবং কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা সম্ভব ।

 

নিউক্লিয়ার ইমেজিংঃ

এই পরীক্ষার অল্প পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ (যা ট্রেসার নামেও পরিচিত) একটি শিরায় ইনজেক্ট করে দেওয়া হয়। এই পরীক্ষাটি প্রাথমিকভাবে হার্টের ক্ষতির মাত্রা প্রকাশ করতে পারে। যে ক্ষতি নির্দিষ্ট ধরণের অ্যামাইলয়েডোসিসের কারণে সৃষ্ট হয়।

★★ জটিলতা ★★

অ্যামাইলয়েডোসিস নিম্নলিখিত অঙ্গগুলোতে নানা রকম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

১. হার্টঃ

অ্যামাইলয়েড আক্রান্ত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ডের হৃদস্পন্দনের মধ্যে রক্ত ​​​​পূর্ণ করার ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। এর ফলে প্রতিটি বীটের সাথে কম রক্ত ​​পাম্প হয়। এর ফলে আক্তান্ত ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট অনুভব করতে পারে। যদি অ্যামাইলোইডোসিস রোগীর হার্টের বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে হার্টের ছন্দে অর্থাৎ হৃদ স্পন্দনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। অ্যামাইলয়েডের সাথে সম্পর্কিত হার্টের সমস্যাগুলো জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে।

২. স্নায়ুতন্ত্রঃ

আক্রান্ত ব্যক্তি আঙ্গুলে ব্যথা, অসাড়তা বা ঝাঁকুনি অনুভব করতে পারে। এছাড়াও অসাড়তা, অনুভূতির অভাব বা পায়ের আঙ্গুলে অথবা পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। যদি অ্যামাইলয়েড রোগীর অন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুকে প্রভাবিত করে, তাহলে রোগী পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়াও আক্রান্ত হতে পারে । যদি এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলিকে প্রভাবিত করে, তাহলে সেই ব্যক্তি যদি খুব তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াতে যায় তবে সেই ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

৩. কিডনীঃ

অ্যামাইলয়েড কিডনির ফিল্টারিং সিস্টেমের ক্ষতি করতে সক্ষম। কিডনীর ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে রোগীর রক্ত ​​থেকে প্রোটিন তার প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে। ফলে শরীর থেকে বর্জ্য অপসারণ করার জন্য কিডনীর ক্ষমতা কমে যায়। এতে কিডনীর কর্যক্রম ব্যহত হতে পারে, কিডনী ফেল করতে পারে এবং এর ফলে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হবে।

চিকিৎসাঃ

অ্যামাইলয়েডোসিসের জন্য এখনও কোন স্থায়ী চিকিৎসা আকিষ্কার হয় নি। তবে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অ্যামাইলয়েড প্রোটিনের উৎপাদন বন্ধ বা ধীর করতে সাহায্য করতে পারে এমন কিছু চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। যদি অ্যামাইলয়েডোসিস অন্য কোনো রোগের দ্বারা ট্রিগার করা হয়, যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা যক্ষ্মা, তাহলে অন্তর্নিহিত অবস্থার চিকিৎসা সাহায্য করতে পারে।

সাধারণত ঔষুধ এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসার দেওয়া হয়ে থাকে।

–ঔষধঃ

কেমোথেরাপিঃ

কিছু ধরণের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত অনেক ঔষুধ AL অ্যামাইলয়েডোসিসের রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কারণ এ সকল ঔষধ ( কেমো) অ্যামাইলয়েড গঠনের দিকে নিয়ে যাওয়া প্রোটিন উৎপাদনকারী অস্বাভাবিক কোষগুলোর বৃদ্ধি বন্ধ করতে সহায়তা করে।

হার্টের ঔষুধঃ

যদি আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদপিন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ডাক্তার রোগীর হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে রক্ত পাতলা করার পরামর্শ দিতে পারেন। এই ঔষুধগুলো রক্ত জমাট হওয়ার ঝুঁকি কমাতে। রক্ত জমাট বাঁধা রোধে আক্রান্ত ব্যক্তির লবণ খাওয়া কমানো গুরুত্বপূর্ণ। পারতপক্ষে লবণ পরিহার করতে হবে।

অস্ত্রোপচার ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি

 

অটোলোগাস ব্লাড স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টঃ

 

এই পদ্ধতিতে রোগীর কোষগুলোকে নিজের রক্ত থেকে শিরার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। রোগী উচ্চ ডোজ সম্পন্ন কেমোথেরাপি গ্রহণ করার সময় এই কোষগুলো অল্প সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। স্টেম সেলসমূহ শিরার মাধ্যমে রোগীর শরীরে ফিরে আসে। এই চিকিৎসা সাধারণত সেই সমস্ত লোকদের জন্য উপযুক্ত যাদের রোগ বৃদ্ধি না পেয়ে স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। যাদের হার্ট খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি তাদেরও এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

 

ডায়ালাইসিসঃ

আক্রান্ত রোগীর কিডনী যদি অ্যামাইলয়েড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই রোগীর জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হতে পারে। এই পদ্ধতিতে এমন একটি মেশিন ব্যবহার করে যা ব্যক্তির রক্ত থেকে বর্জ্য, লবণ এবং তরল ফিল্টার করতে সক্ষম।

 

অঙ্গ প্রতিস্থাপনঃ

ডাক্তার আক্রান্ত ব্যক্তির হার্ট বা কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচারের পরামর্শও দিতে পারেন। যদি অ্যামাইলয়েড জমা হওয়ার ফলে এই অঙ্গগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।

রোগ থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন নিয়ম মাফিক খাওয়া দাওয়া এবং জীবন-যাপন। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই অনেক কম। সামান্য অসুখে আক্রান্ত হলেই প্রয়োজন পড়ে এন্টিবায়োটিকের। তাই শরীরের কোন প্রকার লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের উচিত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া।

 

–Rumel Rahman 

Leave a Comment