ভিটামিন ডি বেশি খেলে কী হয়ঃ
ভিটামিন ডি শরীরের জন্য অপরিহার্য। এর পর্যাপ্ত মাত্রা শরীরে ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস শোষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর অভাব যে কোন বয়সের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সমস্যা ও বিপদজনক। আবার এই ভিটামিনের মাত্রা শরীরে বেড়ে গেলেও বিপদ! হৃদরোগ বা ক্যান্সারের মতো সমস্যাও ডেকে আনতে পারেন অতিরিক্ত ভিটামিন ডি সেবনের ফলে। তাহলে কী করবেন? কিভাবে সেবন করবেন এই ভিটামিন?
আজকের আলোচনায় থাকছে ভিটামিন ডি সেবনের পরামর্শ।
সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়াও কয়েকটি খাবার যেমন দুধ, ডিম থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তবে শরীরের ভিটামিন ডি- এর অত্যধিক ঘাটতি দেখা দিলে অনেকেই ভরসা রাখেন ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টের ওপর। ঔষধ হিসেবে ভিটামিন ডি নিরাপদ। কিন্তু ডাক্তাররা বলছেন, ” তাই বলে অনেক পরিমাণে এই ভিটামিন খাওয়া ঠিক না। চিকিৎসক যতটুকু খাবার পরামর্শ দিচ্ছেন তার থেকে বেশি মাত্রায় ভিটামিন ডি খেলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।”
করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ভিটামিন ডি সেবনের স্বাস্থ্যগত কিছু সুফলের কথা প্রচলিত হওয়ায় অনেকেই এই ভিটামিন গ্রহণ করেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন ভিটামিন ডি খেলে করোনা হবে না। যার ফলে অনেকেই ভিটামিন ডি সেবনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এতে উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতিই বেশি হয়েছিল। কারণ প্রায় সব ভিটামিনেরই একটি টক্সিক মাত্রা আছে। এই মাত্রার ওপর ভিটামিন সেবন করা অবশ্যই তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত গ্রহণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে তার বিষক্রিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন ভিটামিন ডি এর কারণে বিষক্রিয়া হচ্ছে কি না? আসুন জেনে নেই এই কারণগুলো-
এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি মিলিলিটার রক্তে ১৫০ ন্যানোগ্রাম ভিটামিন ডি থাকতে পারে। এর থেকে মাত্রায় বেশি হলেই বিষক্রিয়া শুরু হয় মানবদেহে।
লক্ষণগুলো হলোঃ
– পেটে ব্যথা,
– বমি,
– ক্লান্তি,
– হাইপারক্যালসেমিয়া,
– প্রচণ্ড পিপাসা পাওয়া।
খনিজ হিসেবে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে হাড় সুস্থ রাখে। তবে শরীরে ভিটামিন ডি-এর অতিরিক্ত অবস্থান রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যাকে বলা হয় হাইপারক্যালসেমিয়া। সাধারণত শরীরে ক্যালসিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা ৮ দশমিক ৫ থেকে ১০ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিক মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে বমি বমি ভাব, বমি, দুর্বলতার মত শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
★ হাড়ে যন্ত্রণাঃ
ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ করতে সাহায্য করে। যা হাড় দৃঢ় এবং শক্তিশালী করে। এর অভাবে তাই হাড়ের যন্ত্রণা হতে পারে। তবে শরীরে ভিটামিন ডি-এর উচ্চ মাত্রার কারণে রক্তে এই ভিটামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে হাড়ের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি শুরু হয়। এই কারণে হাড়ের যন্ত্রণা বা হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
★ কিডনীর সমস্যাঃ
মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন-ডি মূলত কিডনী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি এর কারণে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কিডনীর কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বারবার প্রস্রাবের চাপ কিংবা কিডনিতে পাথর হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যারা ইতোমধ্যেই কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ভিটামিন-ডি গ্রহণ করতে পরামর্শ দিচ্ছি।
কারো শরীরে যদি ভিটামিন ডি-র অভাব থাকে, সেক্ষেত্রে কতটা পরিমাণ ভিটামিন ডি খাওয়া দরকার সে বিষয়ে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ডি, বিশেষ করে কোলেক্যালসিফেরল রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই নিয়মিত ভিটামিন ডি খেলে এই লক্ষণগুলোর দিকে নজর রাখতে বলছেন চিকিৎসকরা।