যে ৭টি লক্ষণ ফুসফুস ইনফেকশনের ইঙ্গিত দেয়

বাড়ছে বায়ু দূষণ। সেই সাথে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে ধুমপায়ীর সংখ্যা। বায়ু দূষণ ও ধুমপানের কারণে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের ফুসফুস। ধুমপানের পাশাপাশি ধুমপায়ীর পাশাপাশি ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরোক্ষ ধুমপায়ীরও। (ধুমপান করে না, কিন্তু ধুমপান করা অবস্থায় ধুমপায়ীর পাশে থাকা মানুষদের পরোক্ষ ধুমপায়ী বলা হয়)।

আর ধুমপায়ী এবং পরোক্ষ ধুমপায়ীর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ছোট-বড় অনেকেরই ফুসফুস। যার প্রভাবে ফুসফুসের নানা ধরণের রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। যদিও প্রাকৃতিকভাবে এসব সমস্যা বা ক্ষতির অনেকটাই দূর হয়ে যায়। দীর্ঘদি ধরে ধুমপান ও বায়ুদূষণের লারণে ফুসফুস তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে প্রদাহ জনিত সমস্যার পাশাপাশি সংক্রমণ শুরু হয়। এবং ধীরে ধীরে সমস্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফুসফুসের ইনফেকশন ছাড়াও ক্যান্সার সৃষ্টি হয় মানুষের শরীরে।

আসুন জেনে নেই ফুসফুস সংক্রামণ হয়েছে কি না কোন কোন লক্ষণের মাধ্যমে বুঝে নেওয়া যম্ভব।

১. শ্বাসকষ্টঃ

ফুসফুসে কোনো রকমের সমস্যা হলে মানুষের দেহে প্রথম যে লক্ষণটি দেখা যায় তা হচ্ছে শ্বাসকষ্ট। হাঁপানি, ক্যান্সার ও সিওপিডিসহ বিভিন্ন রোগের প্রথম লক্ষণ হিসেবেও মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট দেখা গেলে কখনোই অবহেলা করা যাবে না বা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে নিশ্চিত হতে হবে কোন সমস্যার কারণে এই শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছি।

১. শুকনো কাশিঃ

নিয়মিত শুকনো কাশি হওয়াটাও ফুসফুসের সমস্যার একটি কারণ। যদি একটানা ৮ সপ্তাহ বা ২ মাস এমন কাশি থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সেই ব্যক্তির কার্যক্ষমতা কমে গেছে। প্রাথমিক এই লক্ষণ একজন মানুষকে ইঙ্গিত দেয় যে, শ্বাসযন্ত্রের ব্যবস্থায় ত্রুটি ঘটেছে। আর এর প্রভাবেই সেই ব্যক্তিটির শুকনো কাশি হচ্ছে।

৩. অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়াঃ

একটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে, শ্বাসকষ্ট কখনোও সাধারণ কোনো সমস্যা নয়। অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় মানবদেহে। অনেকে মনে করে থাকেন শারীরিক কসরত বা অতিরিক্ত পরিশ্রম করার কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এই ধারণাটি শুধু ভুলই নয়, মানুষের প্রাণনাশের কারণ পর্যন্ত হতে পারে। ফুসফুসে কোনো সংক্রমণের আক্রমণ বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দিলে মানুষ অল্পতেই হাঁপিয়ে যেতে পারে। সুতরাং, শ্বাসকষ্ট ফুসফুসের সমস্যার ইঙ্গিত দেয় এটা মাথায় রেখে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৪. শ্লেষ্মা বা কফ ওঠাঃ

বায়ুপথ যখন সংকুচিত হয়ে যায়, তখন শ্লেষ্মা বা কফ উৎপাদন বেড়ে যায়। এর ফলে অল্পতেই কফ উঠতে থাকে। যদি কোন মানুষের শ্লেষ্মা বা কফ উৎপাদন ১ মাস বা তার বেশি সময় ধরে চলমান থাকে, তাহলে সেই মানুষটি ফুসফুসের কোনো সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে এমনটা বুঝে নিতে হবে।

৫. শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে শব্দঃ

শ্বাস নেওয়ার সময় যদি বুকের মধ্যে গড়গড় বা অন্য কোন শব্দ হয়, তাহলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। ফুসফুসের কোনো রোগে আক্রান্ত হলে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের মধ্যে শব্দ হওয়ার লক্ষণটি প্রকাশ পেয়ে থাকে। ফুসসুসের বায়ুপথ একেবারে সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের মধ্যে শব্দ হয়ে থাকে।

৬. কাশির সাথে রক্তঃ

কাশির সাথে রক্ত যাওয়া শুরু হলে অনেকেই বিষয়টিকে সাধারণভাবে নিয়ে থাকে। মনে করে কাশির কারণে গলা ছিলে যাওয়ায় রক্ত আসছে। যারা এই ধারণা পোষণ করে তাদের এই ধারণা থেকে বের হতে হবে।

মূলত ফুসফুসের ইনফেকশনের কারণে রক্তের সাথে রক্ত আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে উপরের শ্বাসনালী থেকে রক্ত আসতে থাকে এবং কাশির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হতে থাকে এই রক্ত। কাশির সাথে রক্ত আসলে বসে না থেকে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

৭. বুকে ব্যথাঃ

গ্যাসের কারণে বা হার্টের সমস্যার কারণে মানুষের বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘস্থায়ী বুকে ব্যথা হলে এটিকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন বুকে ব্যথা হার্টের সমস্যা ছাড়াও মারাত্মক রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত।

১ মাস বা তারও বেশি সময় ধরে বুকে ব্যথা হলে এটি চিন্তার একটি বিষয়। ফুসফুসে কোনো সংক্রমণ বা রোগ বাসা বাঁধলে শ্বাস নেওয়ার সময় বা কাশি দিলে বুকে মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারে। এমন হলে নিজেদের সতর্ক হতে হবে। দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

উপরের এই ৭টি লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণও যদি আপনার বা আপনার পরিচিত কারও মাঝে দেখতে পান, তাহলে ফেরি না করে অতি দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। ডাক্তার যে সকল প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা দিবেন সেই সকল পরীক্ষার মাধ্যমে ফুসফুসের অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে চিকিৎসা নিতে হবে।

মনে রাখবেন, যদি ফুসফুসের রোগে কেউ আক্রান্ত হয়েও থেকে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই সমস্যাগুলো নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সেই মানুষটিকে দ্রুত সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব। আর দেরি হয়ে গেলে চিকিৎসা বা অপারেশন অনেক জটিল আর ব্যয়বহুল তো হয়ই। অনেক ক্ষেত্রে শত চেষ্টা করেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানোটা কষ্টকর হয়ে যায়।

ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ লিভার সিরোসিস কি?

Leave a Comment