হাড়ের ক্ষয়রোধ ও হাড়কে সুস্থ্য রাখুন কিছু খাবারের মাধ্যমে।

হাড় ক্ষয় বা হাড়ের সমস্যায় ভুগছে এমন রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ৪০ পার হয়েছে এমন নারী, এবং ৫০ বছরের বেশি এমন পুরুষের মাঝে হাড় ক্ষয় বা হাড়ের সমস্যায় ভোগার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। শুধু তাই নয়, বর্তমান যুব সমাজের অনেকের মাঝে হাড়ের সমস্যায় ভোগার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর যুব সমাজের এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কিছু কারণ হচ্ছে ধুমপান, সফট ড্রিংক, এনার্জি ড্রিংক, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, খেলাধুলা বা কায়িকশ্রম থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। হাড়ের ক্ষয় বা হাড়ের সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে হাড়ে ভিটামিন ডি এর অভাব। ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণের জন্য আমরা অনেক ঔষধ সেবন করে থাকি। তবে আমরা এটা জানি না, খাবারের মাধ্যমে আমাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না। ভিটামিন ডি এর সর্বোত্তম উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট আমাদের শরীরে সূর্যের আলো লাগাতে পারলে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করা সম্ভব। তবে বাচ্চাদের জন্য সূর্যদয় থেকে শুরু করে ২ ঘন্টার মধ্যে রোদে রাখতে হবে। এর পরে শিশুকে রোদে রাখলে ভিটামিন ডি এর পাশাপাশি ইউভি বি রশ্মি শরীরে প্রবেশ করে। যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। ভিটামিন ডি ছাড়াও হাড়ে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আর পটাশিয়ামের মত উপাদানের অভাব দেখা দিলে হাড় ক্ষয় বা হাড়ের সমস্যা দেখা দেয়। এসব খনিজের অভাব দূর করতে কিছু খাবার কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। যা আমাদের হাতের নাগেলেই পাওয়া যায় এবং মূল্যের দিক দিয়েও সাশ্রয়ী। আসুন জেনে নেই কি কি খাবার আমাদের হাড়ের জন্য উপযোগী–

১. কলা:

কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেশিয়াম। দামে সস্তা এ ফলটি শরীরে খুব ভালো ম্যাগনেসিয়ামের জোগান দিয়ে থাকে। ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের গঠন গড়তে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আমাদের শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘটতি থাকলে হাড় স্বাভাবিক গঠন পায় না। আর এর ফলেই হাড় ক্ষয় বা হাড়ের গঠন স্বাভাবিক থাকে না। শুধু হাড় নয়, পাশাপাশি আমাদের দাঁতের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ম্যাগনেশিয়াম। প্রতিদিন চাইলেই আমরা একটি করে কলা খেতে পারি। এটি যেমন সহজলভ্য ঠিক তেমনই স্বল্প মূল্যের মূল্যবান একটি খাবার। এটি হাড়কে শক্ত করার পাশাপাশি হাড়ের দুর্বলতাও দূর করতে সক্ষম।

২. বাদাম:

বাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে। শুধু ক্যালসিয়ামই নয়, এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাসের উপস্থিতিও পাওয়া যায় এর মধ্যে। আর এসব উপাদান হাড়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম প্রবেশে সহায়তা করে। চাইলে কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম খেতে পারি আমরা। এগুলো একটু দামী বলে অনেকেই কিনে খেতে পারে না। চিন্তার কারণ নেই। চিনা বাদামেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ান, ম্যাগনেশিয়ামের মত উপাদান পাওয়া যায়। কাঁচা বাদাম থেকে বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে সকলে কাঁচা বাদাম খেতে পারে না। এতে পেটের সমস্যা শুরু হতে পারে। কাঁচা বাদামে পেটের সমস্যা হলে এটি পরিত্যাগ করে আপনাকে খেতে হবে পরিমাণ মতো ভাজা বাদাম।

৩. দুগ্ধজাত খাবার:

বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবারে খাবারে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের উপিস্থিতি পাওয়া যায়। চিজ, দুধ, দই, মাখন, ঘি এসবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি লক্ষণীয়। এজন্য আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত এসব খাবার রাখতে পারেন। আর এসব খাবারে ক্যালসিয়ার, ম্যাগনেশিয়ামের পাশাপাশি অন্যান্য উপাদানও রয়েছে।  তবে মিষ্টি দই পরিহার করে টক দই খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৪. পালং শাক:

পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি হয়েছে। এই শাক হাড় এবং দাঁতের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি খাবার। বলা হয়, এক কাপ সিদ্ধ পালং শাকের মধ্যে শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের প্রায় ২৫ শতাংশ পরিমাণ উপাদান থাকে। এছাড়াও পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ এবং আয়রনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যা মানুষকে রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে এবং লম্বা হতে সহায়তা করে।

৫. পেয়ারা:

পেয়ারার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেড ভিটামিন-এ, আই ইউ, থিয়ামিন, নিয়াসিন, এবং ভিটামিন-কে। নিয়মিত পেয়ারা খেলে দাঁতের সমস্যা দূর হয়ে যায়। পাশাপাশি এর অন্যান্য উপাদান হাড়ের সমস্যা সমাধানে দারুণ কাজ করে।

৬. কমলা লেবু:

কমলা লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি এর উপস্থিতি রয়েছে। আর ভিটামিন-সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ভিটামিন-সি ছাড়াও এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ডি। এছাড়াও গবেষণায় জানা গেছে, নিয়মিত কমলা লেবু খেলে অস্টিওপোরোসিস রোগ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এটি এই রোগে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ভিটামিন-ডি হাড়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি হাড়ের গঠন ও গড়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

গবেষণার মাধ্যমে একথা জানা গেছে যে, খাবারের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ‘ডি’ গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তবে সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যেতে পারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ডি। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ডি পেতে হলে সূর্য উঠার সময় থেকে ২ ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে ২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন। এই সময়ের আলোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ডি থাকে। সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেও আলো থেকে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়, তবে তা পরিমাণ খুবউ কম। অনেকেই দুপুরের রোদে সুর্যের আলো গায়ে মাখতে চান। তবে মনে রাখতে হবে এই সময় রোদে UV-B, UV-C  এর মত ক্ষতিকর উপাদান থাকে। আবার অতিরিক্ত রোদের কারণে হিটস্ট্রোকও হতে পারে মানুষের। সকালে বা পড়ন্ত বিকেলে শরীরে কিছুক্ষণ রোদের ছোঁয়া লাগান। দেখবেন দ্রুতই হাড়ের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ইনশা আল্লাহ।

Leave a Comment