সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত নয় তো আপনি

সিজোফ্রেনিয়া কি?

এটি একটি গুরুতর মনোরোগ, যেখানে মানুষের সঠিক চিন্তার বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়ে থাকে। ফলে মানুষের অনুভূতি, চিন্তা এবং আচরণ পরিবর্তিত হয়।

রোগের ভয়াবহতা বা প্রকোপঃ

★ প্রতি শতজনে একজন এই রোগে আক্রান্ত,

★ বয়সসীমা ১৫-৪৫ বছর বা সামান্য কিছু বেশি,

★ পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই এই রোগ দেখা যায় এবং উভয়ের আক্রান্তের হারও প্রায় সমান।

রোগের কি চিকিৎসা সম্ভব?

হ্যাঁ, এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব। তবে শুধু মৌখিক উপদেশ বা পরামর্শে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব নয়।  কিছু ঔষধ সেবন প্রায় সব সময় দরকার হয়।

★ ঔষধ সেবন শুরু করলে দ্রুতই ঘুম ও অস্থিরতা দূর হয়। কিন্তু অন্যান্য উপসর্গগুলো নির্মূল হতে অনেকদিন সময় লাগে।

★ ঔষধ সেবন শুরু করলে ঔষধ সম্পূর্ণ কাজ করতে সময় লাগে প্রায় ৬-৮ সপ্তাহ।

লক্ষণ কি কিঃ

★ অকারণে ভয় পাওয়া,

★ কেউ অসম্মানিত করছে, খাবারে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে এমন মনে হওয়া,

★ কেউ গোপনে ভিডিও করছে অথবা আড়িপাতার জন্য রুমে/ঘরে ক্যামেরা বা কম্পিউটার বা ইলেক্ট্রিক ডিভাইস সেট করে রেখেছে এমন বিশ্বাস হওয়া,

★ কেউ ক্ষতি করছে বা ক্ষতি করার চেষ্টায় সব জায়গায় অনুসরণ করছে এমন মনে হওয়া,

★ জাদু অথবা বান দিয়ে নষ্ট করেছে বা করছে এমন মনে হওয়া,

★ আমার চিন্তা ও আচরণ পদ্ধতি কেউ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে এমন মনে হওয়া,

★ কেউ শারীর বা মস্তিষ্কের ভিতর বিদ্যুৎ, লেজার বা এক্সরে প্রবাহিত করছে এমনটা মনে হওয়া,

★ মনে হতে পারে আমার চিন্তা সবাই জেনে যাচ্ছে অথবা মস্তিষ্কে অন্য কেউ চিন্তা ঢুকিয়ে দিচ্ছে,

★ চিন্তার গতি বা ধারা হঠাৎ করেই আটকে যাচ্ছে এমনটা মনে হতে পারে,

★ খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি, খাদ্য তালিকা ও ঘুমে ব্যঘাত ঘটতে পারে বা পরিবর্তন হতে পারে,

★ হঠাৎ একা হয়ে যাওয়া, একা একা হাসা, কথা বলা, কান্না করা বা চিল্লানো বা বাসা থেকে হারিয়ে যাওয়া।

স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে রেজিষ্ট্রেশন করুন নিচের লিংকেঃ

https://roktobondhon.com/registration/

★ মনে হতে পারে অদৃশ্য মানুষের কথা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে বা মনে হতে পাতে অদৃশ্য কেউ আপনাকে নির্দেশ দিচ্ছে। অনেক সময় মোবাইলে অতিরিক্ত কথা বলার ফলেও এমনটা মনে হতে পারে,

★ নিজের যত্ন নেওয়া বা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস হারিয়ে যেতে পারে,

★ যথা সময়ে এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু না হলে ধীরে ধীরে এসকল রোগীর সামাজিক ও পেশাগত দক্ষতা কমে যেতে থাকে,

★আবার কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আচরণ হঠাৎই বদলে যেতে দেখা যায়, এরা কোন কথা বলে না, বিশেষ বা এক ভঙ্গিতে উদাসিনভাবে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকে, উদ্যোগহীন হয়ে যায়,রাস্তা থেকে এলোমেলো বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করতে থাকে, অকারণেই বা একজনকেই ঘনঘন সালাম, হায় হ্যালো ইত্যাদি দিতে থাকে, অকারণে মাফ চায় অথবা এক কাজ বারবার করতে দেখা থাকে।

চিকিৎসার সময়সীমাঃ

★ প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে সাধারণত একটানা ১ বছর বা এর থেকে কিছুটা বেশি সময় লেগে থাকে।

★ কিছুটা সুস্থ অনুভব হলে বা আরও বেশি লক্ষণ দেখা দিলে ঔষধ কমানো বা বাড়ানো লাগলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই করতে হবে। নাহলে রোগীর চিকিৎসার অগ্রগতি ব্যহত হয়ে যাবে।

এ রোগ কি পুরোপুরি ভালো হয়ঃ

★ অনেক রোগীই স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসতে পারছে। বর্তমানে এ রোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব।

★ মাঝে মাঝে উপসর্গ সামান্য কম বা বেশি হতে পারে। বলতে পারি এই রোগের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগীই সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে থাকে, এক-তৃতীয়াংশ রোগী সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার পরেও কিছু ঔষধ সেবন করতে হয়। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ রোগী সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে সুস্থ হয় না।

★ অপরদিকে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ জনে ১০ থেকে ১৩ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।

এ রোগে আক্রান্ত রোগী এবং রোগের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়ঃ

★ রোগীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করা যাবে না। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং সময় দিতে হবে।

★ রোগীর ঔষধ সেবন নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে রোগীর হাতে বা দ্বায়িত্বে ঔষধ না দিয়ে নিজ হাতে ঔষধ খাওয়ানোর দ্বায়িত্ব নিন।

★ এ রোগে আক্রান্ত অন্য সেবাদানকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং পরস্পরের মাঝে সহায়তার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

★ সামাজিক ও পেশাগত কাজে সহায়তা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

★ আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসিখুশি ও বিনোদন প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

★ পরিশেষে, এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

আসুন আমরা সচেতন থাকি,
সিজোফ্রেনিয়া রোগীকে সহায়তা করি।।

আরও পড়ুন: মেনোরেজিয়া কি?

Leave a Comment