শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে যে সকল খাবার।

অনেক শিশুকে শৈশবকালে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। এই সমস্যায় ভুগে এমন শিশুদের মলত্যাগ করা ভীষণ কষ্টকর বা কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। সন্তানকে এমন কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে বা রক্ষা করতে অভিভাবক হিসেবে আপনার করণীয় কি? আজকের আলোচনায় থাকছে সেই সকল বিষয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সকল শিশু তরল খাবার খাচ্ছে, তাদের শরীরে কোষ্ঠকাঠিন্য দেয় না। তবে তরল খাবারের পাশাপাশি স্বাভাবিক ও শক্ত খাবার খাচ্ছে, সেই সকল শিশুদের শরীরেই কোষ্ঠকাঠিন্য নামক এই সমস্যা দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবক হিসেবে আপনাকে যে সকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

১. ফাইবারযুক্ত খাবারঃ

শিশু যদি শক্ত খাবার গ্রহণ করা শুরু করে, তাহলে তাকে আঁশ বা ফাইবার সম্বৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে। শস্য এবং আঁশযুক্ত খাবারের পাশাপাশি শাকসবজি খাওয়াতে হবে। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে দিতে হবে সন্তানকে। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

২. মিষ্টি আলুঃ

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই আলুতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং কার্বোহাইড্রেট শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সহায়তা করে। তাই মাঝে মাঝে শিশুর ডায়েটে মিষ্টি আলু রাখতেই পারেন।

৩. স্পেশাল চাটনিঃ

নাশপাতি, আলুবোখরা, আপেলের রস এবং লবঙ্গ গুঁড়া মিশিয়ে চাটনি বানিয়ে শিশুকে খেতে দিতে পারেন। এটি খেতে যেমন মজাদার ঠিক তেমনই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

৪. খালি পেটে পানিঃ

তরল খাবার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যরোধের জন্য খুবই ভালো। সকালে ঘুম থেকে উঠার পরপরই শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে অভ্যস্ত করুন। এই অভ্যাস হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রোধ করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতেও সহায়তা করে।

৫. টক দইঃ

বড়দের মতো ছোটদেরও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে টক দই দারুণ কাজ করে থাকে। এই খাবার খেলে শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যই দূর হবে না, এর পাশাপাশি শিশুর হজমশক্তিও বৃদ্ধি পাবে। তবে অবশ্যই আপনার শিশুকে টক দই খাওয়ান।

৬. ইসবগুলের ভুসিঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিন শিশুকে ইসবগুলের ভুসি মিশ্রিত পানি বা শরবত পান করাতে পারেন। এটি ছোট এবং বড় উভয়ের জন্য খুবই উপকারী পানীয়।

৭. পাক পেঁপেঃ

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পাকা পেঁপে বেশ ভালো একটি খাদ্য। এটি শিশুর মলকে নরম করে দিতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. বেলঃ

পাকা বেল বা বেলের শরবত শরীরের জন্য দারুণ উপকারী খাদ্য। শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যরোধে দারুণ কাজ করে পাকা বেল বা বেলের শরবত। আবার ডিহাইড্রেশন রোধেও দারুণ কার্যকরী এই শরবত।

৯. কিসমিসঃ

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কিসমিস দারুণ একটি খাবার। ৫-৬ টি কিসমিস নিয়ে ৩-৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পানিসহ কিসমিস ব্লেন্ড করে শিশুকে পান করাতে পারেন। এতে শিশু কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবে। বড় মানুষদের এই সমস্যার সমাধানেত ক্ষেত্রে কিসমিসের পরিমাণ বাড়তে হবে।

১০. খেঁজুরঃ

৩-৪ টি খেঁজুর রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সন্তানকে পান করালে সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। বড়দের ক্ষেত্রে পানির পরিবর্তে দুধ ব্যবহার করতে হবে।

১১. দুধঃ

শিশুর জন্য কৌটার তরল দুধ তৈরির সময় কখনও খুব পাতলা করা উচিত নয়। আবার শিশুকে গরুর দুধ পান করালে সেই দুধে পানি মেশানো যাবে না। এই দুইক্ষেত্রে ভুলের কারণে অধিকাংশ শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

আসুন শিশুর প্রতি যত্নবান হই। কোন খাবার শিশুর জন্য ভালো, আর কোন খাবার খারাপ তা যাচাইয়ের পাশাপাশি কোন খাবারটি শিশুর শরীরে স্যুট করছে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হই।

ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত শিশুকে কৌটার দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

 

” মায়ের দুধের বিকল্প আর কোন খাবার নেই। সন্তানকে মায়ের দুধ খেতে দিন এবং মাকে পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়ান। “

 

–Rumel Rahman 

Leave a Comment