রক্তদাতা মেহেদী হাসান সনন ভাই। পরিচিত মুখ রাজশাহীর। সারাদিন ব্যস্ত থাকেন প্রিন্টিং প্রেস সামলানোর কাজে। কিছুদিন আগে রিফ্রেশমেন্টের জন্য রাজশাহীর বাহিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের চাপে দ্রুতই ফিরে আসতে হয় তাকে। এসে সুযোগ পায় নি বিশ্রামের। লেগে যেতে হয়েছে কাজে। ভাই জানান, সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে রাজশাহীতে পৌঁছে মাত্র দুই ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ হয়েছে তার। এরপর ব্যস্ততায় সারাদিন অতিবাহিত হয়েছে।
রাত ১০ টার পরে ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি পেটে বাচ্চা মারা গেছে একজন বোনের। ইমার্জেন্সি DNC করাতে হবে তার। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। প্রথমে জানানো হয়েছিল, বি পজেটিভ রক্তের প্রয়োজন। পরবর্তীতে জানা যায় সেটা বি পজেটিভ নয় এবি পজেটিভ। বি পজেটিভ রক্তদাতা নিয়ে আসা হয়েছিল আর ব্লাড ব্যাংকে এক্সচেঞ্জ না থাকায় রক্তদান না করেই চলে যেতে হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব এবি+ রক্তদাতা ম্যানেজ করতে হবে।
কিছুদিন আগে সনন ভাই আমাকে বলেছিলেন ‘ভাই এই মাসেই রক্তদান করতে চাই। আপনি দেশের বাহিরে যাওয়ার আগে ডোনেট করিয়ে যান আমাকে। ‘
জরুরী প্রয়োজন হওয়ায় যোগাযোগ করি রক্তদাতা সনন ভাইয়ের সাথে। সনন ভাই রোগীর বিস্তারিত শুনে জানান, ভাইয়া আমি দোকান বন্ধ করছি। আপনি লক্ষ্মীপুরেই থাকেন আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যেই।
অত:পর, কিছুক্ষণের মধ্যেই লক্ষ্মীপুর মোড়ে এসে কল দেন তিনি। তাঁকে নিয়ে রওনা দেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংকে।
রক্তদান করেন রোগীর সুস্থতা কামণায়। রক্তদানের পরে জানান সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে বিশ্রাম না নেওয়ার বিষয়টি।
শোনার পরে খারাপ লাগা কাজ করলেও ভালো লাগাটাও ছিল যথেষ্ট পরিমাণে। আমার পাশে এমন কিছু নিবেদিত প্রাণ আছে যারা নিজের কথা না ভেবে অন্যের প্রয়োজনে দিন রাত রক্তদানে প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি অসহায় রোগী ও ব্যক্তির প্রয়োজনে পাশে আছে এটা ভেবে।
তাদের সহায়তা এবং ভরসা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। নতুন করে শক্তি যোগায় ভালো কাজের। তৃপ্তির খোড়াক জুটে তাদের মাধ্যমে।
আজকাল পেটে বাচ্চা মারা যাওয়া বা বাচ্চা হওয়ার পরে মারা যাচ্ছে এমন ঘটনা প্রায়ই আমাদের নজরে আসছে। কেন এমনটা হচ্ছে, কিভাবে রোধ করা সম্ভব এগুলো নিয়ে চিন্তা করা প্রয়োজন।
সচেতন হতে হবে আমাদের। জানতে হবে কেন মারা যাচ্ছে এসকল সন্তান। আমাদের করণীয় কি আর পরিহার করতে হবে কি কি বিষয়।
সন্তান কেন মারা যাচ্ছে এ বিষয়ে পূর্বে আপনাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
দোয়া করবেন সনন ভাইসহ সকল রক্তদাতার জন্য। আল্লাহ পাক/স্রাষ্টা যেন সকল রক্তদাতাকে ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন এবং নিরাপদে রাখেন।
আসুন রক্তদানের হাত বাড়াই, রক্তের অভাবে যেন আর কোন প্রাণ না ঝরে যায় সেই প্রচেষ্টায় অবদান রাখি নিজের রক্তের বিনিময়ে।