অনেকেই আছেন যারা রাত জাগাকে ক্রেডিটের কাজ মনে করেন। ভাবেন “রাত ৩ টা পর্যন্ত জেগে থাকার পরেও আমি সকাল ৮ টায় ক্লাস জয়েন করি, তবুও আমার কিছুই হয় না “,। জানেন এটা আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর?
সারাদিন কাজ করে এনার্জি ক্ষয়ের পর ঘুম আমাদের শরীরে সেই এনার্জি আবার ফিরিয়ে দেয়। সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের দৈনিক সাত-আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। দেরি করে ঘুমিয়ে তাড়াতাড়ি উঠার ফলে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত এনার্জি পায় না। বিশেষ করে দেরি করে ঘুমাতে গেলে আমাদের শরীরের ভেতরে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার ধরনেও পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এতে করে আমাদের হার্টের ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয়, দেরি করে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকাল ৭ থেকে ৮ টার মধ্যে উঠে যাওয়ার কারণে ঘুমের কোটা সম্পন্ন হয় না বা পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে রাত ১১টার পর ঘুমাতে গেলে হার্টের রোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও আরও কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। আরও একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দেরি করে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর এবং মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে। যে কারণে দ্রুত ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। আবার অনেকের প্রেশার ফল করতে পারে। এ ছাড়া কিডনির যেমন মারাত্মক ক্ষতি হয়, তেমনি স্ট্রোক এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও বেড়ে যায়।
স্ট্রেস বাড়বে কমবে আয়ুঃ
অনেককেই ব্যস্ততার কারণে দেরি করে ঘুমাতে হয়। কিন্তু পরের দিনের কাজের কারণে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে যেতে হয়। এতে ঠিক মত ঘুম না হওয়ার কারণে দেহের ভেতরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাওয়া শুরু করে। আর এ কারণে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ভয় তো থাকেই, সেই সাথে আরও হাজারখানেক রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
ত্বকের সৌন্দর্য কমে যাওয়াঃ
দিনের পর দিন ঠিকমত ঘুম না হলে কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সেই সাথে ত্বকের অন্দরে কোলাজেনের মাত্রা কমতে শুরু করার কারণে সৌন্দর্যও হ্রাস পায়।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পরেঃ
গবেষণায় প্রমানিত রাত জেগে কাজ করলে কর্টিজল হরমোনের মত স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ মারাত্মক বেড়ে যায়। ফলে সারা রাত কাজ করার ক্ষমতা জন্মালেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে যায় । ফলে নানাবিধ রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে সময়ই লাগে না। স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পেলে মানসিক চাপও বাড়তে শুরু করে, যা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক।
স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস ও রক্তদাতা খুঁজে পেতে রেজিষ্ট্রেশন করুন নিচের লিংকেঃ
https://roktobondhon.com/registration
দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়ঃ
ঠিকমত ঘুম না হলে ব্রেন ঠিক মত রেস্ট নেওয়ার সুয়োগ পায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশের ক্ষমতা কমে যায়। আর ঠিক এই কারণেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যায় কমে।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করেঃ
রাতের বেলা মস্তিষ্কের আরাম নেওয়ার সময়। তাই এই সময় কাজ করলে ধীরে ধীরে ব্রেনের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ডিপ্রেশন, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, স্লো কগনিটিভ ফাংশন, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়াসহ আরও সব সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এতে করে মস্তিষ্ক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
ওজন বৃদ্ধি বা কমে যায় চোখে পরার মতোঃ
দিনের পর দিন রাতে জেগে থাকলে খাবার ঠিক মতো হজম হতে পারে না। ফলে একদিকে যেমন গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তেমনি ওজনও বাড়তে শুরু করে। আর ওজন বাড়লে ধীরে ধীরে সুগার, প্রেসার এবং কোলেস্টেরলের মতো মারণ রোগ এসে শরীরে বাসা বাঁধে। আবার অনেক ক্ষেত্রে শরীর ফুলে যাওয়ার বদলে অধিক শুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়।
রাত জাগা শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? রাত জাগা বন্ধ করা উচিত আমাদের সকলের।
Rumel Rahman
Roktobondhon.com