গর্ভবতী থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী। গর্ভাবস্থার পাঁচ মাস চলছে। শরীরে দেখা দিয়েছে রক্ত স্বল্পতা। রক্ত স্বল্পতার পরিমাণও ভয়াবহ। জরুরী ৩ ব্যাগ দুর্লভ বি নেগেটিভ রক্ত দিতে হবে। না হলে মা ও গর্ভের সন্তান উভয়েরই ঝুঁকি এমনকি সন্তানের মৃত্যু ঝুঁকি আছে বলে ডাক্তার জানিয়ে দেন। রোগীর পরিবার চিন্তায় পড়ে যায়। খুঁজতে থাকে রক্ত। চিন্তার কারণ, তারা আগে থেকেই জানেন রোগীর রক্তের গ্রুপ দুর্লভ। যা পাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর। মাসে এক ব্যাগ রক্ত বা একজন রক্তদাতা সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হয় সেখানে ৩ ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করা কতটা কষ্টসাধ্য সেটা তারা বুঝতে পারেন। তবুও আশা নিয়ে খুঁজতে থাকেন রক্তদাতা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমার পরিচিত একজন ছোট ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেন তারা। তার মাধ্যমে বিষয়টি আমার নজরে আসে এবং রক্তদাতার সাথে যোগাযোগ করি।
একজন রক্তদাতা সংগ্রহ করে রক্তদান করাতে চাইলেও রোগীর সমস্যা এবং রক্তদাতার ব্যস্ততার কারণে রক্তদান করানো হয় নি ২ দিন। অত:পর গতকাল রক্তদাতার রক্তদানের সময় নির্ধারণ করা হলে রোগী সুদূর দুর্গাপুর থেকে রাজশাহীতে আসেন। রোগীর পরিবারকে নিশ্চিত করি আজ রক্তদাতার পরীক্ষা আছে এবং পরীক্ষা শেষ করে এসেই রক্তদান করি। গত পরশু এমনটাই কথা হয়েছিল রক্তদাতার সাথে।
রক্তদাতার আশ্বাসে আমরা বিকেলে মেডিকেলে অবস্থান করি এবং নির্ধারিত সময়ে রক্তদাতার সাথে যোগাযোগ করার জন্য কল দেওয়া হলে রক্তদাতা জানান তার বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হচ্ছে চোখের অপারেশনের জন্য।
একটু বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যেতে হয় এমন পরিস্থিতিতে। কারণ, রেয়ার গ্রুপ এবং রোগী আমার ভরসাতেই অতদূর থেকে রাজশাহীতে এসেছেন রক্ত গ্রহণের উদ্দেশ্য। রক্তদাতা দিতে না পারলে এটা হবে লজ্জা আর অপমানজনক একটি বিষয়। আর রেডি রাখা রক্তদাতাকে এমন বিপদে রক্তদানের কথা বলাটাও খারাপ ও স্বার্থপরতা হয়ে যায়।
কয়েকজন বি- রক্তদাতাকে কল দিয়ে কোন সাড়া না পেয়ে অবশেষে তমাল ভাইকে একরকম বাধ্য হয়ে কল দেই। বাধ্য হয়ে কল দেই বলছি কারণ, তমাল ভাইকে প্রস্তুত রেখেছিলাম আরেকজন গর্ভবতী নারীর জন্য। তমাল ভাইকে সমস্ত বিষয় খুলে বলার পরে তমাল ভাই বলেন কোথায় আসতে হবে?
তাঁকে নির্দিষ্ট স্থানের বিষয়ে অবগত করা হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হোন এবং রক্তদানের মাধ্যমে দুটি প্রাণ বাঁচানোর সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখেন।
মানুষ যে কোন সময়েই বিপদে পড়তে পারে এবং আপনার পরিকল্পনা যে কোন সময় বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তবে এতে হতাশ হবেন না। আল্লাহ/স্রষ্টার উপর ভরসা রাখুন এমন পরিস্থিতিতে। দেখবেন আল্লহ/স্রষ্টা তমাল ভাইদের মত কারও মাধ্যমে আপনার সমস্যা দূর করে দিবেন। আর যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজের উপর ভরসা রাখুন। মনে রাখবেন আপনার প্রচেষ্টা অনুযায়ীই আপনার স্রষ্টা আপনাকে ফল দান করবেন।
এমন হাজারো তমাল ভাই আছে বলেই জরুরী মুহূর্তে রোগীরা রক্ত পাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছে এবং অনেক স্বেচ্ছাসেবী বা যারা রক্তদানের কাজ করে থাকে তাদের বাঁচতে হচ্ছে লজ্জা ও অপমানের হাত থেকে। বেঁচে থাকুক মনবতা আর সুস্থ থাকুক সকল রক্তদাতা।