জিহ্বার রঙ পরিবর্তন, ইঙ্গিত দেয় যে সকল রোগের।

মরা অনেক সময়েই দেখতে পাই, আমাদের জিহ্বার রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়। নিজেদের না হলেও পরিচিতদের মাঝে এই পরিবর্তনটি মাঝে মাঝেই দেখে থাকি আমরা। ততটা গুরুত্ব না দিলেও বিষয়টি অবহেলার নয়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক জিহ্বার রঙ দেখেই বলে দিতে পারে রোগী কোন সমস্যায় ভুগছে। আবার পুরোপুরি বলতে না পারলেও এই জিহ্বার রঙ দেখেই ডাক্তার সন্দেহ করেন রোগীর সমস্যা কি হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, শরীরে কোনো রোগের জীবাণু বাসা বাঁধলে তার প্রভাব জিহ্বাতেও দেখা দেয়। যার ফলে পরিবর্তন হয়ে যায় জিহ্বার রঙ।

সাধারণত স্বাস্থ্যকর জিহ্বার রঙ হালকা গোলাপি বর্ণ হয়ে থাকে। তবে জিহ্বা এর চেয়ে হালকা, ধূসর, সাদা, লাল, হলুদ, বেগুনী বা কালচে বর্ণের দেখা দিলে এসব বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

রঙের এই পরিবর্তনগুলো যদি বেশ কিছুদিন থেকে যায়, তাহলে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে হতে হবে অবগত।

 আসুন আজ জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি, জিহ্বার রঙ পরিবর্তন হলে কি কি রোগের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে-

গোলাপি জিহ্বাঃ

একজন স্বাভাবিক মানুষের জিহ্বার রঙ থাকে হালকা গোলাপি বর্ণের। যদি আপনার জিহ্বার রঙ হালকা গোলাপি হয়ে থাকে, তাহলে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি বুঝে নিবেন আপনি সুস্থ আছেন। এবং আপনার শরীরও স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছে।

আর একটি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জিহ্বায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু মাংসল বাম্প থাকে। যা জিহ্বাকে একটি মোটা স্ট্রাকচার দিয়ে থাকে।

সাদা বা ধূসর জিহ্বাঃ

সাধারণত আমাদের জিহ্বার সাদা একপ্রকার আবরণ থাকে। তবে এই গোলাপি বা ধূসর হালকা ধূসর বর্ণের চেয়ে যদি আপনার জিহ্বাকে বেশি সাদা মনে হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার শরীরে ইস্ট সংক্রমণের উপস্থিতি রয়েছে জিহ্বা এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আবার, ধূমপান বা কিছু মাদক বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের প্রভাবেও মানুষের জিহ্বায় সাদা দাগের সৃষ্টি হয়। এই দাগকে ডাক্তারের ভাষায় বলা হয় লিউকোপ্লাকিয়া (leucoplakia) .

হলুদ জিহ্বাঃ

লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনার পেটে সমস্যা দেখা দিলে আপনার জিহ্বার রঙ পরিবর্তন করে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। অর্থাৎ, হলুদ জিহ্বা পেটের সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ডায়রিয়া, হজম বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগলে জিহ্বার রঙ পরিবর্তন হয়ে হলুদ বর্ণে রুপ নেয়।

ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরী অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, হলুদ জিহ্বা টাইপ ২ ডায়াবেটিসেরও লক্ষণ হতে পারে।

আবার জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তির জিহ্বা হলুদ বর্ণ ধারণ করে থাকে। এমনকি খারাপ মৌখিক স্বাস্থ্যবিধির কারণেও জিহ্বার রঙ হলুদ হতে পারে। অর্থাৎ, আপনার জিহ্বায় ব্যক্টেরিয়ার উপস্থিতি থাকলে আপনার জিহ্বার রঙ হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে।

লাল জিহ্বাঃ

উজ্জ্বল লাল জিহ্বা সচরাচর ফোলা ও আঁশযুক্ত হয়ে থাকে। চিকিৎসকগণ এই বর্ণের জিহ্বাকে ‘ স্ট্রবেরি জিহ্বা’ নামে অভিহিত করে থাকে।

লাল বর্ণের জিহ্বা প্রায়ই রক্তের ব্যাধি বা হার্টের সমস্যাকে নির্দেশ করে থাকে। আবার ভিটামিন বি এর ঘাটতি অথবা স্কারলেট ফিবারের ইঙ্গিতও দিয়ে থাকে এই লাল বর্ণের জিহ্বা। তাই কারও জিহ্বা লাল বর্ণ ধারণ করলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া খুবই জরুরী।

বেগুনি জিহ্বাঃ

শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক না থাকলে জিহ্বার রঙ বেগুনি রঙে পরিবর্তিত হয়ে যায়। আমাদের ফুসফুস বা হার্টের বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেহে অনুপযুক্ত বা অপর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন হতে পারে। যদি দীর্ঘদিন ধরে জিহ্বার রঙ বেগুনি রঙ ধারণ করে থাকে, তাহলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনি হৃদরোগ, ফুসফুস অথবা রক্তবাহিত কোন রোগে ভুগছেন। এক্ষেত্রে আর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভভ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে আপনাকে।

কালচে জিহ্বাঃ

কালচে জিহ্বা সাধারণত ক্যান্সার এবং রক্তবাহিত রোগকে ইঙ্গিত করে। রক্তে ক্যান্সারের উপস্থিতি থাকলে বা রক্তে ইনফেকশনের প্রভাবে রক্ত দূষিত হয়ে গেলে আমাদের জিহ্বা লালচে বা কালচে বর্ণ ধারণ করে। আপনার জিহ্বার রঙ কালচে বর্ণ ধারণ করলে অতি দ্রুত রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

জিহ্বার রঙ পরিবর্তন হয়ে গেলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে এই রঙ যে সকল রোগের ইঙ্গিত প্রদান করছে তা আপনার শরীরে আছে কি না। মনে রাখবেন,

” সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা,

করতে পারে আপনার প্রাণকে রক্ষা “

–Rumel Rahma

Leave a Comment