ফলিক এসিড কিঃ
ফলিক এসিড ভিটামিন- বি৯ এর কৃত্রিম রূপ যা আমাদের কাছে ফলেট (Folate) নামেও পরিচিত। শরীরের প্রত্যেকটি কোষের স্বাভাবিক গঠন এবং বৃদ্ধির জন্য এই ভিটামিন খুবই প্রয়োজন। এটি আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সহায়তা করে যা শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহে সাহায্য করে।
কেন গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড দরকারঃ
আপনি যদি গর্ভধারণ করেন বা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করে থাকেন সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমানে ফলিক এসিড গ্রহন করা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (NTD) যেমন- স্পাইনাল কর্ড (Spina Bifida) এবং ব্রেইনের জন্মগত (anencephaly) ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায়তা করে। নিউরাল টিউব ভ্রুনের সেই অংশ যা থেকে মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কের গঠন তৈরী হয়ে থাকে।
Centers for Disease Control and Prevention (CDC) এর মতে, যে সকল মহিলা গর্ভধারণের অন্তত একমাস আগে থেকে বা গর্ভধারণের প্রথম ট্রাইমেস্টারে নিয়মিত ফলিক এসিড গ্রহন করেন তাদের গর্ভের শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্ট এর ঝুঁকি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে যায়।
আরও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফলিক এসিড গর্ভের শিশুর আরও কিছু জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে থাকে। যেমন- ঠোঁট কাটা (cleft lip), তালু কাটা (cleft palate) এবং হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত আরও বেশকিছু জটিলতা থেকে এটি সন্তানকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়া এই এসিড গর্ভাবস্থায় মায়েদের প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
আবার গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা এবং বেড়ে ওঠা শিশুর কোষ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ফলিক এসিড গ্রহন করা গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় কতটুকু ফলিক এসিড দরকারঃ
নিউরাল টিউব ডিফক্ট এর ঝুঁকি কমাতে বিশেষজ্ঞরা সাধারনত গর্ভধারণের অন্তত একমাস আগে থেকে প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) ফলিক এসিড গ্রহনের পরামর্শ প্রদান করেন। কিছু বিশেষজ্ঞ গর্ভবতী হলে নারীকে ফলিক এসিড গ্রহনের পরিমান দৈনিক ৬০০ মাইক্রোগ্রাম করার পরামর্শও দিয়ে থাকেন। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কখনোই দৈনিক ১০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশী ফলিক এসিড গ্রহন করা উচিত নয়। তাহলে এটি উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
রক্তদাতা খুঁজে পেতে এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়মিত পোস্ট পেতে রেজিষ্ট্রেশন করুন নিচের লিংকেঃ
https://roktobondhon.com/registration
কিভাবে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করা যায়ঃ
ফলিক এসিডের প্রাকৃতিক অনেক উৎস আছে। আর এই উৎসগুলো হচ্ছে-
★ সবুজ শাক-সবজিঃ
যেমন-পুঁইশাক, পাটশাক, মুলাশাক, সরিষা শাক, মটরশুঁটি, শিম, বরবটি, বাঁধাকপি, গাজর ইত্যাদি ।
★ ডালঃ
যেমন- মসুর, মুগ, মাষকালাই, বুটের ডাল।
★ কমলা বা টক জাতীয় ফলঃ
কমলায় ৫৫ মাইক্রোগ্রামের মতো ফলিক এসিড রিরাজমান। এছাড়া আমলকি, মালটা, আমড়া এসবেও পর্যাপ্ত ফলিক এসিড বিদ্যমান।
★ ব্রোকলিঃ
ব্রোকলির প্রত্যেক আধা কাপে ১০৪ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড থাকে।
★ শস্যদানাঃ
লাউয়ের বীজ, কুমড়োর বীর, ছোলা, ভুট্টার দানা ইত্যাদিতে প্রচুর ফলিক এসিড রয়েছে।
★ বিটরুটঃ
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খুবই উপকারী একটি খাবার। এই খাবারটি শরীরে আয়রনের অভাব পূরণে দ্রুত কাজ করে।
★ ডালিমঃ
ডালিম এসময় অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এটি নরমালি বা রস করেও খেতে পারেন।
অন্য ঔষধের সাথে ফলিক এসিড সেবন করা যায়?
হ্যাঁ যায়। তবে ফলিক এসিড নেয়ার আগে ও পরে অন্তত ২ ঘণ্টা এন্টাসিড জাতীয় ঔষুধ না খাওয়ায়ই ভালো। কারণ এতে শরীর ফলিক এসিড শোষণে বাধাগ্রস্থ হতে পারে। অন্য কোন মাল্টিভিটামিন খেলে বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করা উচিত। কারণ আপনার মাল্টিভিটামিনেই থাকতে পারে প্রয়োজনীয় ফলিক এসিড।
ফলিক এসিডের অভাব কিভাবে বোঝা যায়ঃ
এর উপসর্গগুলো বেশ স্পষ্ট। ফলিক এসিডের অভাবে আপনার ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্দা, দূভর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, জিহ্বায় ব্যাথা, বুক ধরফড় করা ও বিরক্তিবোধ হতে পারে। কিন্তু ফলিক এসিডের অভাব সামান্য হলে এর কোন লক্ষণই আপনি বুঝতে পারবেন না। তাই লক্ষণ থাকুক আর না থাকুক গর্ভাবস্থায় বা গর্ভধারণের কমপক্ষে একমাস আগে অনাগত সন্তানের কথা চিন্তা করে নিয়মিত ফলিক এসিড গ্রহন করুন। না হলে আপনার শরীরের ফলিক এসিডের প্রভাবে আপনার সন্তান জন্ম নিবে অপুষ্টি এবং প্রতিবন্ধী গড়নে।
আসুন নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করে সন্তানকে প্রতিবন্ধী হওয়া থেকে বিরত রাখি এবং গর্ভবতী মায়েরদের সুস্থতা নিশ্চিত করি।